প্রত্যেক
মানুষই তার বুকের ভেতর অনেকগুলো
স্বপ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমিও
তাই। হওয়াটাই স্বাভাবিক।
কারণ স্বপ্ন ছাড়া মানুষ হয়
না। ইদানীং আমার স্বপ্নের
মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি
সুন্দর বাড়ি,
একজন
সুন্দরী নারী এবং একটি সুন্দর
গাড়ি। অবশ্য আর বাকিই বা থাকল
কি? কিছু
বাকি না থাকলেও সমস্যা নেই।
একজন মানুষ হিসেবে আমিও জাগতিক
সবকিছুই চাইতে পারি। তাছাড়া
না চাওয়ারও কোন কারণ দেখছি
না। কতো মানুষকে দেখলাম জীবনে
সবকিছুর অধিকারী হতে। কেউ
কেউ রাজ্যসহ রাজকন্যাও লাভ
করলো। আমার দোষ তো সেই তুলনায়
বেশ খানিকটা কমই। আমি তো মাত্র
সাধারণ তিনটা জিনিসই চেয়েছি।
কিন্তু
চাওয়াগুলো যতোই সাধারণ হোক
তা পূরণ হওয়া যেন আমার জন্যে
দিন দিন অসাধারণ হয়ে উঠছে।
একথা সত্য যে আমি একজন ভবঘুরে
বৈ আর কিছু নই। কিন্তু তাই বলে
তো আর আমি থেমে যেতে পারি না।
পারি না স্বপ্নগুলোকে দূরে
ছুড়ে ফেলতে। আর দশজন মানুষের
মতো আমিও তাই আমার স্বপ্নগুলোকে
নিয়ে আশাবাদী। আমার বিশ্বাস
একদিন না একদিন আমার স্বপ্নগুলো
পূরণ হবেই। অবশ্য এ ব্যাপারে
কোন গাণিতিক হিসাবের চাইতে
আমার মনঃস্তাত্ত্বিক ভ্রমবিলাসই
বেশিটা প্রতিক্রিয়াশীল।
অতীতেও এমনি অজস্র ভুলের মধ্যে
দিয়ে আমার জীবন অতিবাহিত
হয়েছে। অবশ্য আল্লাহর কৃপায়
আমি বারবার টিকেও গেছি। জীবন
আসলে সত্যিই অনেক সুন্দর।
মাঝে মাঝে এটিকে আমার একটি
কানায় কানায় ভর্তি বালি বোঝাই
নৌকার মতো মনে হয় যা ডুবতে
গিয়েও ডোবে না।
যা
হোক যে কথা বলছিলাম। স্বপ্ন
পূরণের গল্প। অবশ্য এটাকে
শুধু গল্প না বলে জীবনের গল্পœ
বলাই
ভালো। অবশ্য গল্পই বা বলছি
কেন। এটাতো মূলত কোন গল্পই
না। খাঁটি বাস্তবতা। জীবনের
নির্মম সত্য। আমি সেই সত্যের
ধারক ও বাহক মাত্র।
সমস্ত
হতাশা ও নিরাশার মধ্যেও আমি
আমার স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা
করি। করার পক্ষে যথেষ্ট কারণও
বিদ্যমান । কে না জানে মানুষ
আশাবাদী। আর সে যখন তার আশার
পক্ষে বেশ কিছু লক্ষণ,
চিহ্ন
ও ইঙ্গিত দেখতে পায় তখন তো সে
সামনে আগাতেই পারে। আমার
অবস্থাও তথৈবচ। বেশ কিছু ঘটনা
যা ইদানীং ঘটেছে তা আমার
প্রত্যাশা পূরণের পক্ষের
যুক্তিকে আরও জোরালো ভাবে
সমর্থন করে। আমার চেষ্ঠা তাই
আরো জোরদার।
আমাকে
আসলে আপনাদের যতোটা ভবঘুরে
মনে হচ্ছে ব্যাপারটা ঠিক ততোটা
নয়। নাই নাই করেও আমার বেশ
কিছু গুণাবলী আছে যা একেবারে
তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার মতো
নয়। আর এসব কারণে আমি আসলে
একটা কিছুতো অবশ্যই প্রত্যাশা
করতে পারি। ব্যাপরটাও আসলে
তাই। আমার যুক্তির পক্ষের
সেরকম বেশ কিছু কারণও তাই।
কথাটা ভেঙ্গে না বললে ক্লিয়ার
হবে না। আমি মোটামুটি লিখতে
পারি। আর আমার বেশ কিছু পাঠক
শ্রোতাও আছে। তাদের কাছে আমার
একটা মান মর্যাদাও আছে। আমার
শক্তির মূলটা এখানেও কিছুটা
প্রোথিত। আমাকে তাই ছুড়ে ফেলা
যাচ্ছে না। যাচ্ছে না তুচ্ছ
তাচ্ছিল্য করা। ধৈর্যের সাথে
তাই আপাততঃ আমাকে সহ্য করতে
হবে। কারণ অবশ্য আরও কিছু আছে।
সেটা পরে বলব। আগে বলে নেই
ঘটনা কি ঘটেছে।
হঠাৎ
করেই আমার এক ভক্ত ফোন করে
বললো,
স্যার
কি একটু কষ্ট করে আমার বাড়িতে
আসবেন। তাহলে কৃতার্থ হতাম।
আমি
বললাম,
কোন
কারণ দেখছি না । আমি ব্যস্ত।
আপনার প্রস্তাবটা ভেবে দেখব।
উনি আবার ফোন করলেন। এবার আরও
জোরালো অনুরোধ। আমি রাজী হলাম
অযথাই। ভদ্রলোকের অনেকগুলো
বাড়ি। তবে থাকেন ধানমন্ডিরটায়।
আমাকে সেখানে যেতে হলো। প্রথমে
কথাবার্তা। তারপর খাওয়া দাওয়া।
তার পর আরাম কেদারায় গা এলিয়ে
দিয়ে একেবারে কেলিয়ে পড়া।
উনি বিগলিত। আমি আনন্দে গদ
গদ। উনি একটা ঘোষণা দিলেন।
আমার গাড়িটি এখন থেকে আপনার।
আমি
বললাম,
এই
বোঝা আমি কোথায় রাখব।
উনি
বললেন,
কেন
রামপুরার বাড়িতে।
আমি
বললাম,
ওটা
তো আপনার। পরের বাড়িতে আমার
গাড়ি রাখতে যাবো কেন?
উনি
যোগ করলেন,
এখন
থেকে ঐ বাড়িটাও আপনার।
আমি
বললাম,
এসবের
মানে কি?
উনি
বললেন,
গভর্নেস
রেডিই আছে। সেই সব সামলাবে।
দারুণ স্মার্ট আর সুন্দরী।
আমি নিজে আপনার জন্যে পছন্দ
করেছি। ভয় নেই খরচ নিয়ে ভাববেন
না। ওটার ব্যবস্থা করাই আছে।
আমি আমেরিকায় চলে যাচ্ছি। আর
ফেরার ইচ্ছে নেই। দেশের যা
কিছু সবকিছুই আপনার। স্বপ্ন
ছিল কবি হব। হতে পারিনি। সবকিছু
তাই একজন কবিকে দিয়ে গেলাম।
নিঃসন্তান মানুষের জীবনটাই
এমন। কাউকে না কাউকে ধন্য করতে
হয়। আমার আর আশা কি!
মেঘ
নেই বৃষ্টি হবে কেমন করে?
আমি
শুধু বললাম,
আমার
জীবনে তো বিনা মেঘেই বৃষ্টি
হলো। সে শুধু বললো,
আপনি
পৃথিবীর সেই সব বিরল প্রজাতির
কবির মধ্যে একজন যারা ভাগ্যবান।
কবিরা নাকি কেবল দুর্ভাগাই
হয়। আমি বললাম,
কবিদের
কিন্তু বিত্ত-বৈভব
গড়ার চেষ্টা থাকে না। তাই তারা
দুর্ভাগা। ঐ যে আপনিই তো বললেন,
মেঘ
নেই,
বৃষ্টি
হবে কেমন করে?
আমরা
দুজনেই হাসলাম।
Comments
Post a Comment