রূপগঞ্জের
লাকীর কথা প্রথম জানতে পারি
আমার এক বন্ধুর মুখে। বন্ধুটি
আমার দারুণ সেয়ানা। ভালোবাসার
কথা প্রকাশ করার মতো ঝুঁকি
সে তাই আগে কখনো নিতে পারেনি।
প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে আমি
কিভাবে জানলাম?
জানাতে
সে বাধ্য হয়েছিল। নিতান্ত
অনিচ্ছা সত্ত্বেও। কারণ প্রেমে
সে ধরা খেয়েছিল। লাকী তাকে
গরম শীকের ছ্যাঁকা দিয়েছিল।
তখন সে মনকষ্টে গড় গড় করে তার
অতিতের কথার পাশাপাশি বর্তমানের
দুঃখ কষ্টও সবিশেষ বর্ণনা
করেছিল। যাহোক গল্পটা মোটামুটি
মজার।
রূপগঞ্জের
লাকী যতোটা রূপসী হবে বলে
আপনারা ভাবছেন সে মোটেই তা
নয়। বরং তাকে কিছুটা কমই বলতে
হবে অন্য মেয়েদের তুলনায়।
কিন্তু এই নিয়ে তার কুছ পরোয়া
নেই। চলনে বলনে সে এতোটাই
স্মার্ট যে তা যে কারোর মাথা
ঘুরিয়ে দিতে যথেষ্ট। সবাই
আসলে এটাই ভুলে যায় যে সে আদৌ
সুন্দরী কিনা। তার প্রেমের
রঙ্গিন ভুবনে সব কিছু এতোটাই
ঝলমলে আর রঙীন লাগে যে মনে হবে
আপনি লাসভেগাসের কোন ক্যাসিনোতে
বসে জুয়ার কোর্টে দান মারছেন।
আর আপনার পাশে সাজানো আছে কাড়ি
কাড়ি টাকা। সুন্দরী সেক্রেটারির
কথা না হয় নাইবা বললাম। রূপগঞ্জের
লাকী আপনার জীবনকে এমনই একটা
ধাঁধায় ফেলে দেবে। ভালোবেসে
আপনি এই প্রথম সুখের বাতাসে
ভেসে বেড়ানোর একটা অনুভূতি
লাভ করবেন। ইতোপূর্বে যা আপনি
রাস্তার উপরের কোন হকারের
ঔষধ কিনেও লাভ করেননি। আপনার
মনে হবে জীবন এই প্রথম কানায়
কানায় পূর্ণ হলো।
পুরো
কাহিনী অনেক লম্বা। কারণ কম
করে হলেও বছর খানেকের প্রেম।
বিরাট উপাখ্যান। সেই প্রেমের
হাজারো গলি ঘুপচিতে আপনাদের
নিয়ে যেতে গেলে অনেক সময় লাগবে।
কারণ আমার শুনতেই কয়েকদিন
সময় লেগেছিল। বন্ধুটি আমার
বলতেও জানে। প্রেমের এরকম
জীবন্ত বর্ণনা এর আগে কোনদিন
কারোও মুখ থেকে শুনিনি।
সে
যাহোক। মূল কাহিনীতে আসা যাক।
ভালোবেসে আমার সেই বন্ধুটির
জীবনে কি দুরাবস্থা এসেছিল
এ গল্প তার ছোট খাট নমুনা হতে
পারে। যদিও এর তাত্ত্বিক
গুরুত্ব বর্তমানের যান্ত্রিক
যুগে আদৌ আছে কিনা সন্দেহ।
তবুও নানা দিক বিবেচনা করে
আমি এই গল্প লিখতে মনস্থ করলাম।
কারণটা অবশ্য এখনই বলা যাবে
না। তবে একটু ইঙ্গিত দিতে
পারি। গল্পের সাথে আমরও কিছুটা
যোগ আছে।
রূপগঞ্জের
লাকীকে আপনি কিছুতেই ত্যাঁদোড়
টাইপের মেয়ে বলতে পারেন না।
আমি যতটুকু জানি সে যথেষ্ট
কুশলী এবং তা যথেষ্ট ভদ্রবেশে।
তাকে বুঝতে হবে। তবেই শান্তি।
অন্যথায় সমূহ বিপদ। আমার বন্ধু
তাকে বুঝতে ভুল করেছিল। তাই
তার সমস্যা হয়েছিল। আমার মনে
হয় তেমন কোন ভুল হয়নি।
রুপগঞ্জের
লাকীর সাথে আমার বন্ধুর প্রেম
যখন ষোল আনাই ক্লাইমেক্সে
তখন সে তাকে শপিং-এ
নিয়ে যায়। সমস্ত রাপা প্লাজা
চষে বেড়িয়ে ওরা দুহাত ভরে
কেনাকাটা করে। লাকীও ভদ্রতা
করে আমার বন্ধুটিকে খাজানায়
নিয়ে গিয়ে একটা ধবধবে সাদা
পাঞ্জাবী কিনে দেয়। বন্ধু এই
স্বর্গীয় উপহার পেয়ে খুশিতে
আটখানা। ঐ দিন লাকী আর একটা
পাঞ্জাবী কিনেছিল। তবে তা
অন্যের জন্য।
আমার
পাঞ্জাবীটা আমি সযতেœ
তুলে
রাখলাম। কিন্তু বন্ধুটি ভুল
করলো। সে এই পাঞ্জাবী পড়ে
মহল্লাময় ঘুরে বেড়াতে লাগলো।
যাকে তাকে ডেকে আলাপ করতে
লাগলো। সে মুখে কিছু না বললেও
সবাই তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করতে
লাগলো পাঞ্জাবীর দাম কতো?
কেউ
কেউ বলছিলো ভীষণ সুন্দর। দারুণ
মানিয়েছে। আমার কিছুই বুঝতে
বাকি রইল না।
কিছুদিন
পরই দেখা গেল বন্ধুটি আমার
দারুণ চিন্তিত। আমি তাকে
জিজ্ঞেস করলাম,
কি
ব্যাপার। হঠাৎ করে এমন কি হলো
যার জন্যে এতোটা মন খারাপ।
সে বললো তেমন কিছুই না। একটু
মন খারাপ আর কি। ও ঠিক হয়ে যাবে।
বন্ধুর
মন খারাপ যেন আর ঠিক হয় না।
হবে কেমন করে। ঘটনা যে রূপগঞ্জের
লাকীর সাথে জড়িত। আর লাকীর
সাথে যে একবার জড়ায় এই জীবনে
তার মন যদি একবার খারাপ হয় তা
আর ভালো হয় না। কারণ আর কিছুই
নয়। লাকী যাকে একবার ছেড়ে যায়
তার কাছে আর ফিরে আসে না। মূল
সমস্যাটা এখানেই।
আমি
বন্ধুটিকে তেমন একটা পীড়াপীড়ি
করলাম না। কারণটা ভীষণ সহজ।
আমি খুব ভালো করেই জানি যে
মনেবদেনায় সে ভুগছে তা প্রকাশ
না করে থাকা তার পক্ষে অসম্ভব।
তাই অপেক্ষায় রইলাম। আজ না
হোক কাল,
একদিন
না একদিন সে আমাকে ডেকে সব কথা
খুলে বলবেই। প্রেমের বেদনা
কয়লার কালীর চেয়েও গাড়। এতো
সহজে তা মন থেকে যায় না। তবে
বর্তমানেও লাকীর সাথে আমার
সময় কিন্তু মন্দ যাচ্ছে না।
অবশ্য তা শহর থেকে খানিকটা
দূরে। সবার চোখের আড়ালে।
মেয়েরা প্রেমের ক্ষেত্রে
গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা উভয়ই
পছন্দ করে। হোক না দুটো বেশি
পয়সা খরচ।
অনুমান
সত্যি হলো। সে সত্যি সত্যিই
একদিন বিকেলে আমার কাছে এলো।
অবস্থা এলোমেলো। চেহারা
আলুথালু। কায়েসের মজনু হওয়ার
মতোই কাহিনী। আমার আর বুঝতে
বাকি রইল না। লাকীও তাই বলেছিল।
আমরা দুজন বেশ মজাই পাচ্ছিলাম।
আগ
বাড়িয়ে বেশ খানিকটা আগ্রহের
সাথে বন্ধুটিকে বসতে বললাম।
সে বসল। তবে তা অত্যন্ত প্রাণহীন
আর ভঙ্গিতেও ভীষণ ধীর। আমি
সবই লক্ষ্য করলাম। ভালোবাসা
মানুষকে কতোটা তলানীতে নিয়ে
যেতে পারে তা তাকে না দেখলে
বুঝা যায় না। লাকীকে ধন্যবাদ।
জীবনে সে আমাকে এরকম একটা
দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
মনে মনে ভয় হলো খোদা না করুক
সে যেন আমার সাথে কখনো এরকম
না করে। তার দেওয়া খাজানার
পাঞ্জাবী আমার ট্রাংকে এখনো
তোলা আছে। ভালোবাসার ডকুমেন্ট
রাখার জন্য এ যুগেও ট্রাংকের
বিকল্প কোথায়?
বন্ধুটি
শুরু করল। তবে সে এগোচ্ছিল
ভীষণ আস্তে আস্তে। কাহিনীর
পুরোটাই আমার জানা। তবুও
মনোযোগী স্রোতার মতো গভীর
আগ্রহে শুনতে লাগলাম। লাকী
তাকে গাঁধার পিঠে বিশ্ব ভ্রমণের
প্রস্তাব দিয়েছে। বন্ধুটি
যদি এই কাজটি সাফল্যের সাথে
করতে পারে তবে সে লাকীকে পাবে।
লাকী তাকে সাফ সাফ একথা জানিয়ে
দিয়েছে। আর কোন বিকল্প নাই।
অবান্তর
প্রস্তাব। তবু প্রেমে অবান্তর
বলে কিছু নেই। ভালোবাসায় সব
সম্ভব। ভালোবাসার হাতি নাকি
পাখা মেলে আকাশে উড়ে। সে হাল
ছাড়লো না। একটা তাগড়া যুৎসই
গাঁধার খোঁজে বের হলো। হোক
বা না হোক চেষ্টা করে দেখতে
তো দোষ নাই। মনের মানুষ অন্তত
বুঝুক ভালোবাসার মানুষকে
পাওয়ার জন্য সে পুরো একটন কয়লা
গিলে খেতেও তৈরি। তবু যদি
প্রেমিকাকে পাওয়া যায়। অমন
রসালো প্রেমিকা। শুকনো আখের
মতো শরীরের ভেতরে যে মিষ্টি
মধুর রসের ধারা থাকে তাতো
বিধাতারই দান। তাকে সেই বা
অবহেলা করবে কেমন করে। রূপগঞ্জের
লাকী যেন নরসিংদীর সাক্ষাত
গেণ্ডারী। মেশিনে দিয়ে চাপ
দিলেই রসের ধারা। আর তাতে
একটুকরা বরফ দিলে তো কথাই নেই।
বন্ধুটির
চেষ্টার কোন কমতি ছিল না।
কিন্তু তাকে একটা গাঁধা জোগাড়
করতে গিয়েই গাঁধা হতে হয়েছিল।
বিশ্ব ভ্রমণে আর যাওয়া হয়নি।
কথা ছিল ভ্রমণ শুরু হবে
প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত
একটা সাংবাদিক সম্মেলনের
মাধ্যমে। কিন্তু এসবের কিছুই
হলো না। ঘটনা অন্যদিকে মোড়
নিলো।
রূপগঞ্জের
লাকী আমার বন্ধুটির দিক থেকে
মুখ ফিরিয়ে নিলো। একেবারে
একশত আশি ডিগ্রী। বন্ধুর আর
কোন আশা নেই। সবশেষ। সে আমাকে
জানালো। লাকী তাকে সাফ সাফ
জানিয়ে দিয়েছে সে আর তাকে চায়
না।
লাকী
আমাকেও চায় না। লাকীরা এমনই।
যতক্ষণ মধু ততক্ষণ বধূ। আমি
সবই জানি। কারণ রূপগঞ্জের
লাকী আমার জীবনে জনম বাকি ছাড়া
আর কিছুই না। আমি তাকে কখনো
আমার হিসেবের খাতায় তুলিনি।
তাই আফসোসের কিছু নেই। সবচেয়ে
বড় কথা বন্ধুটি আমার আজো জানে
না যে লাকী আমার সাথেও একই
প্রেমের খেলা খেলছে। সে আউট
হয়ে গেছে। আমি এখনো ক্রিজে
আছি। আমি প্রেমের জগতে শচীন
টেন্ডুলকারই হবো। নইলে এতো
সময় ক্রিজে থাকার পাশাপাশি
রানের গতি সচল রাখা যে কারোর
জন্য কষ্টকর। মাঝে মাঝে ভীষণ
বাজে বোলিংও হয়। তবু টিকে আছি।
কাল অবশ্য লাকীকে নিয়ে নন্দনে
যাবার একটা প্রোগ্রাম আছে।
লাকী খুব অনুরোধ করছিল খাজানার
পাঞ্জাবীটা পড়ে আসার জন্য।
কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমাকে
ক্রিজ সামলাতে হবে। ভুল করা
চলবে না।
প্রিয়
পাঠক। গল্পের পুরোটাই সত্য
হলেও গল্পের শুরুটা হয়েছিল
মিথ্যা কথার মধ্যে দিয়ে।
রূপগঞ্জের লাকীর সাথে আমারই
প্রথম প্রেম হয়েছিল। পরবর্তীতে
আমি আর লাকী মিলেই এই সিদ্ধান্ত
নেই। লাকীর অনেক চাহিদা ছিল।
সেটা মিটানোর জন্যই এই বন্দোবস্ত।
ভালোবাসার জন্যেই আর যাই হোক
আমি যে পয়সা ভাঙ্গতে রাজি নই
লাকী তা খুব ভালো করেই জানতো।
তবুও তার দুর্বলতার জন্যেই
সে আজও পড়ে আছে। আমরা যে আগামীকাল
ঘুরতে যাচ্ছি তা লাকীর খরচেই।
অবশ্য টাকাটা সে তার এক নতুন
প্রেমিকের কাছ থেকেই হাতিয়েছে।
Comments
Post a Comment