প্রতিটা দিন খুব সকাল সকাল শুরু করেন। কাজ করেন রাত অবধি। কাজের ব্যাপারেও ভীষন যতœবান। অর্ডারের কাজগুলোতে আলাদা একটা তাড়া থাকে। তাই তাতে সব সময় মনের সন্তুষ্টি আসে না। কাস্টমারেরও এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। তার ভাবনা অন্যত্র। কিভাবে কম পয়সায় মোটামুটি চালিয়ে নেবার মতো একটা ডেলিভারি নিয়ে নেয়া যায়। দু পয়সা বাঁচাতে পারলেই যেন বাঁচা গেল। এতে তাই মন ভরে না মনোহরের। সে তাই রাত জেগে আলাদা কাজ করে। আলাদা কাজ মানে অন্য কোন পেশার কাজ নয়। একই কাজ। তবে আইটেম বা উদ্দেশ্য ভিন্ন। যেখানে তৃপ্তির ব্যাপারটাই আসল। বাড়তি যদি কিছু আসে সেটা আলাদা কথা। যেমন গত দুবছর ধরে সে একটা খাট আর একটা চেয়ার বানিয়েছে। চেয়ারটা চলে গেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। খাটটা বিক্রি হয় ফার্নিচার মেলায়। দুটোর জন্যেই ভালো দাম পাওয়া গেছে। কিন্তু সেটা মুখ্য ব্যাপার নয়। মনোহরের মনের শান্তিটাই আলাদা। ফার্নিচার মেলায় তার খাট সেরা হয়েছিল। দাম উঠেছিল সাড়ে তিন লাখ। চেয়ার বিক্রি হয়েছে দু লাখে। সব মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ লক্ষ। মন্দ না।
মনোহরের কাছে টাকার হিসাবটা আসল না। এই চেয়ারে মহারানীরা বসবে। এই খাটে আহামরি কোন মানুষ ঘুমাবে। শুয়ে শুয়ে তার হাতে করা কারুকাজ দেখবে আর প্রশংসা করবে। এর চেয়ে আনন্দের আর কিই বা হতে পারে। মনোহরের মনে এটাই শান্তি। এই শান্তিটুকু পাওয়ার জন্যে সে রাতের পর রাত জেগে টুকটুক করে কাজ করে। বিছানায় সুন্দরী স্ত্রী। সারা রাত একা একা গড়াগড়ি খায়। কিন্তু মনোহরের কাছে শীত, গ্রীষ্ম সবই সমান। তার বউও সেটা জানে। বিয়ের পর প্রথম প্রথম একটু খারাপ লেগেছিল। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে সেও না ঘুমিয়ে এসে মনোহরের সামনে বসে থাকে। মানুষটার এক মনে কাজ করা দেখে। তারপর এক সময় বুঝিয়ে শুনিয়ে গুমানোর জন্য উঠিয়ে নিয়ে যায়।
মনোহরকে দেশপ্রেমিক বললে কম বলা হবে। তার বেশির ভাগ আত্মীয় স্বজন ভারতের কলকাতা কিংবা হাবড়ায় বসবাস করে। সেখানে তাদের অবস্থান ভালো। তারা সব সময়ই তাকে ওপারে যাওয়ার জন্যে তাড়া করে। কিন্তু মনোহরের তাতে আক্ষেপ নেই। সে নির্বিকার। সে এখানেই ভালো আছে।
যে মনোহর এতোটা নিরপেক্ষ সেই মনোহরের কাছেও ইদানিং কেন জানি বাতাসটা ভালো ঠেকছে না। কিছুদিন আগে নির্বাচনে হয়ে গেলো। মনোহর যাদেরকে ভোট দিয়েছিলো তারা অবশ্য ক্ষমতায় আসতে পারেনি। এমনটা তো হতেই পারে। তাই বলে বাতাসে কিসের যেন গন্ধ। কাল কিছু ছেলে তার দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকেই যেন শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলো, এ দেশে আর নমদের রাখা যাবে না। ব্যাটারা খায় বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে ইন্ডিয়ার। মনোহর তাদেরকে চেনে। একবার ভাবলো কিছু একটা জবাব দেবে। আবার কি ভেবে যেন চুপ হয়ে গেলো। মনোহর যে সে রকম কিছু না তা কেমন করে প্রমান করবে।
রাতভর বৃষ্টি পড়েছে। রাস্তাগুলো পানিতে ভরপুর। মনে হয় নদীর সব পানি লোকলয়ে উঠে এসেছে। এমনিতে এলাকাটা একটু নিচু। তার উপরে ড্রেনের ব্যবস্থা ভালো না। একবার পানি উঠলে সাত দিনেও নামে না। মনোহরের কারখানার ভেতরেও পানি। সে ঘরের মধ্যে বসেই টুকটাক কাজ করছে।
মনোহরের স্ত্রী বাসনা রানী দুপুরের খাবার তৈরি করা শেষ করে যখন উঠতে যাবে তখন কোমরে কেমন যেন চিন করে একটা ব্যাথা করে উঠল। বাসনা একটু থেমে আবার চলতে শুরু করল। এবার মেয়েটাকে গোসল করাতে হবে।
দেখতে দেখতে বৃষ্টির পানি নেমে গেল। মহল্লায় আবার প্রান চাঞ্চল্য ফিরে এলো। মনোহরের কারখানা আবারও জমে উঠল। হঠাৎ করে কয়েকটা ছেলেপুলে এসে দোকানে ঢুকল। ভালই তো খাট পালংক চেয়ার টেবিল বানান। আমাদের বসের জন্য বানাতে পারবেন একসেট।
পারব না কেন, পারব।
ভাল হতে হবে কিন্তু। মেলায় যেমন উঠিয়েছিলেন।
তার জন্যে তো সময় লাগবে।
অবশ্য খুব বেশি সময় দেওয়া যাবে না। বস সামনের মাসে বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে নতুন বাসায় উঠবে। এর মধ্যেই চাই।
এতো অল্প সময়ে কি অতো ভালো হবে। ঐ কাজে তো প্রায় দু বছর লেগেছিল।
তা লাগুক। এখন থেকে রাত জেগে কাজ করলে সময় মতো হয়ে যাবে।
পাশ থেকে একজন যোগ করল, বাসনা রানীর কোলে একটু কম কম ঘুমাইয়া বরং রাতে জেগে কাজ করেন। যথা সময়ে হয়ে যাবে।
যার জন্যে খাট পালংক বানানোর কথা বলা হচ্ছে সে যে দাম দেবে না তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু মনোহরের দুঃখটা সেখানে নয়। যার জন্য কাজের অর্ডার দেওয়া হয়েছে শুধু মনোহর কেন এই মহল্লার যে কেউ তাকে ঘৃনা করে। তার জন্য ফার্নিচার বানাতে হবে মনোহরকে।
দিন যায়। রাত যায়। মনোহর জেগে জেগে কাজ করেন। সবই ঠিক ছিলো। একদিন কি যে হয়। হঠাৎ মনোহর ব্যাপারটা কেন জানি আর মানতে পারে না। তার দুঃখগুলো এতোদিনে জমে জমে একটা পাত্র যেন পূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন সেটা গড়িয়ে একটু একটু করে পড়তে শুরু করেছে। মনোহর নিজেকে সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে।
মনোহরের কারখানায় যথারীতি আলো জ্বলছে। বাসায়ও আলো। কিন্তু ভেতরে মনে হচ্ছে কেউ নেই। সবাই একটু উঁকি দিয়েই বুঝতে পারে ভেতরে আসলে কেউ নেই। মনোহর তাহলে কোথায় গেলো।
মনোহরের গাড়ী বর্ডারের দিকে ছুটছে।
সীমানা পেরিয়ে যেতেই মনোহরের কেমন যেন অসহায় লাগে।
মনোহরের কাছে টাকার হিসাবটা আসল না। এই চেয়ারে মহারানীরা বসবে। এই খাটে আহামরি কোন মানুষ ঘুমাবে। শুয়ে শুয়ে তার হাতে করা কারুকাজ দেখবে আর প্রশংসা করবে। এর চেয়ে আনন্দের আর কিই বা হতে পারে। মনোহরের মনে এটাই শান্তি। এই শান্তিটুকু পাওয়ার জন্যে সে রাতের পর রাত জেগে টুকটুক করে কাজ করে। বিছানায় সুন্দরী স্ত্রী। সারা রাত একা একা গড়াগড়ি খায়। কিন্তু মনোহরের কাছে শীত, গ্রীষ্ম সবই সমান। তার বউও সেটা জানে। বিয়ের পর প্রথম প্রথম একটু খারাপ লেগেছিল। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে সেও না ঘুমিয়ে এসে মনোহরের সামনে বসে থাকে। মানুষটার এক মনে কাজ করা দেখে। তারপর এক সময় বুঝিয়ে শুনিয়ে গুমানোর জন্য উঠিয়ে নিয়ে যায়।
মনোহরকে দেশপ্রেমিক বললে কম বলা হবে। তার বেশির ভাগ আত্মীয় স্বজন ভারতের কলকাতা কিংবা হাবড়ায় বসবাস করে। সেখানে তাদের অবস্থান ভালো। তারা সব সময়ই তাকে ওপারে যাওয়ার জন্যে তাড়া করে। কিন্তু মনোহরের তাতে আক্ষেপ নেই। সে নির্বিকার। সে এখানেই ভালো আছে।
যে মনোহর এতোটা নিরপেক্ষ সেই মনোহরের কাছেও ইদানিং কেন জানি বাতাসটা ভালো ঠেকছে না। কিছুদিন আগে নির্বাচনে হয়ে গেলো। মনোহর যাদেরকে ভোট দিয়েছিলো তারা অবশ্য ক্ষমতায় আসতে পারেনি। এমনটা তো হতেই পারে। তাই বলে বাতাসে কিসের যেন গন্ধ। কাল কিছু ছেলে তার দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকেই যেন শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলো, এ দেশে আর নমদের রাখা যাবে না। ব্যাটারা খায় বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে ইন্ডিয়ার। মনোহর তাদেরকে চেনে। একবার ভাবলো কিছু একটা জবাব দেবে। আবার কি ভেবে যেন চুপ হয়ে গেলো। মনোহর যে সে রকম কিছু না তা কেমন করে প্রমান করবে।
রাতভর বৃষ্টি পড়েছে। রাস্তাগুলো পানিতে ভরপুর। মনে হয় নদীর সব পানি লোকলয়ে উঠে এসেছে। এমনিতে এলাকাটা একটু নিচু। তার উপরে ড্রেনের ব্যবস্থা ভালো না। একবার পানি উঠলে সাত দিনেও নামে না। মনোহরের কারখানার ভেতরেও পানি। সে ঘরের মধ্যে বসেই টুকটাক কাজ করছে।
মনোহরের স্ত্রী বাসনা রানী দুপুরের খাবার তৈরি করা শেষ করে যখন উঠতে যাবে তখন কোমরে কেমন যেন চিন করে একটা ব্যাথা করে উঠল। বাসনা একটু থেমে আবার চলতে শুরু করল। এবার মেয়েটাকে গোসল করাতে হবে।
দেখতে দেখতে বৃষ্টির পানি নেমে গেল। মহল্লায় আবার প্রান চাঞ্চল্য ফিরে এলো। মনোহরের কারখানা আবারও জমে উঠল। হঠাৎ করে কয়েকটা ছেলেপুলে এসে দোকানে ঢুকল। ভালই তো খাট পালংক চেয়ার টেবিল বানান। আমাদের বসের জন্য বানাতে পারবেন একসেট।
পারব না কেন, পারব।
ভাল হতে হবে কিন্তু। মেলায় যেমন উঠিয়েছিলেন।
তার জন্যে তো সময় লাগবে।
অবশ্য খুব বেশি সময় দেওয়া যাবে না। বস সামনের মাসে বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে নতুন বাসায় উঠবে। এর মধ্যেই চাই।
এতো অল্প সময়ে কি অতো ভালো হবে। ঐ কাজে তো প্রায় দু বছর লেগেছিল।
তা লাগুক। এখন থেকে রাত জেগে কাজ করলে সময় মতো হয়ে যাবে।
পাশ থেকে একজন যোগ করল, বাসনা রানীর কোলে একটু কম কম ঘুমাইয়া বরং রাতে জেগে কাজ করেন। যথা সময়ে হয়ে যাবে।
যার জন্যে খাট পালংক বানানোর কথা বলা হচ্ছে সে যে দাম দেবে না তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু মনোহরের দুঃখটা সেখানে নয়। যার জন্য কাজের অর্ডার দেওয়া হয়েছে শুধু মনোহর কেন এই মহল্লার যে কেউ তাকে ঘৃনা করে। তার জন্য ফার্নিচার বানাতে হবে মনোহরকে।
দিন যায়। রাত যায়। মনোহর জেগে জেগে কাজ করেন। সবই ঠিক ছিলো। একদিন কি যে হয়। হঠাৎ মনোহর ব্যাপারটা কেন জানি আর মানতে পারে না। তার দুঃখগুলো এতোদিনে জমে জমে একটা পাত্র যেন পূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন সেটা গড়িয়ে একটু একটু করে পড়তে শুরু করেছে। মনোহর নিজেকে সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে।
মনোহরের কারখানায় যথারীতি আলো জ্বলছে। বাসায়ও আলো। কিন্তু ভেতরে মনে হচ্ছে কেউ নেই। সবাই একটু উঁকি দিয়েই বুঝতে পারে ভেতরে আসলে কেউ নেই। মনোহর তাহলে কোথায় গেলো।
মনোহরের গাড়ী বর্ডারের দিকে ছুটছে।
সীমানা পেরিয়ে যেতেই মনোহরের কেমন যেন অসহায় লাগে।
Comments
Post a Comment