জমিলার শরীর যেন আর চলে না। চলবে কেমন করে। দেখতে দেখতে বয়স প্রায় ষাট। সেই ছোট বেলায় কাজ করতে শুরু করেছে। আর কতো। কিন্তু মালিক তাকে ছাড়তে চায় না। ছাড়তে চাইবেই বা কেন। এই বাড়ীতে সে মন প্রাণ ঢেলে দিয়ে কাজ করছে। শুধু সেই নয় তার পূর্ব পুরুষরাও কাজ করেছে। জমিলার ছেলেমেয়েরাও করছে। তবুও মালিকের একটাই চাওয়া। জমিলা কাজ না করুক অন্ততঃ যেন দিনে একবার হলেও আসে। জমিলা না করতে পারে না।
জমিলার সারা জীবনের অভ্যাস ফজর পড়েই বেরিয়ে যাওয়া। মালিকের বাড়ীতে এসেই যেন পুরোপুরি ভোর হতো। এটাই তার জন্যে স্বাভাবিক ছিলো। সেও এভাবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ অভ্যাসের পরিবর্তন হওয়ায় কেমন যেন লাগে তার কাছে। ফজরের নামাজ পড়ার পর অস্থির লাগে। উঠানে নেমে হাঁটাহাঁটি করে। এটা ওটা নাড়াচাড়া করে। তবুও মনটা কেমন যেন লাগে। আবারও বারান্দায় এসে বসে। আসলে এই ধরনের একটা অবস্থার সাথে সে যে এতোদিন অভ্যস্ত ছিলো না তা তার আচরণেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জমিলার এখন আর কাজ করার প্রয়োজন পড়ে না। ছেলেমেয়েরা সবাই কাজে কর্মে যোগ্য হয়েছে। আয় উপার্জনও ভালই করছে। সেও ইচ্ছে করলে অনেক আগেই কাজকর্ম ছেড়ে দিতে পারতো। কিন্তু নানা কারণেই সে তা করতে পারেনি। নিজের দুর্বলতাটাই আসল। মালিকের বাড়ীতে কাজ না করলে মূলতঃ তার ভালো লাগে না। মালিকও তাকে চায়। প্রতিদিন সকালে সেই ছিলো এ বাড়ীর সবচেয়ে প্রত্যাশিত লোক। জমিলা তাই অন্য কিছু ভাববার অবকাশই পেত না।
সকালের সময়টা যেন কাটতেই চায় না। জামিলা এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করে। সে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু চাইলেই কি আর স্বাভাবিক থাকা যায়। অস্থিরতা হচ্ছে অসুখের মতো। এটা লুকানো কঠিন।
এক সময় আলগোছে হাঁটতে শুরু করে জমিলা। উঠান পেরিয়ে সরু রাস্তা। তারপর মূল রাস্তায় উঠে যায়। দেখতে দেখতে কখন যে মালিকের বাড়ী চলে এসেছে তা সে টেরই পায়নি। মালিকও তাকে আশা করছিল। জমিলাকে দেখে সে তাই হেসে ফেলল। জমিলাও হাসল। এটাই জীবন। চাইলেও সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে যাওয়া যায় না।
জমিলা বলতে গেলে প্রতিদিনই আসে। কাজকর্ম তেমন কিছু না। তার মেয়েই মূলতঃ মূল কাজকর্মগুলো সামলাচ্ছে। মূলতঃ সমস্যা শুধু কাজকর্মে নয়। এখানে অভ্যাসের ব্যাপারটাই আসল। জমিলা তার এই বাঁধাধরা জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই যাই যাই করেও যাওয়া হয়নি। তার ভালোলাগা আর ভালোবাসাটাও মূলতঃ এই অভ্যাসের সাথে মিশে আছে। এর একটা থেকে আর একটাকে আলাদা করা কঠিন। জমিলার কাছে প্রতিটি অনুভবই স্পষ্ট। তার কাছে তার প্রত্যাশার চাইতে প্রাপ্তিটাই সবসময় বেশি মনে হয়। এটা তার এক ধরনের সন্তুষ্টি যা তাকে ভেতর থেকে সুখী হতে সাহায্য করে। জমিলা নিজেও জানে অন্যের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি পুষে রাখায় নিজের ক্ষতিই বেশি। সে তাই শর্তহীন সুখী মানুষ। রাতে তার বরাবরই ভাল ঘুম হয়।
মূলতঃ অবসরেই চলে গিয়েছিলো জমিলা। অবশ্য অবসরেই আছে সে। কাজ বলতে তেমন কিছু নেই। মালিকের সাথে একটু আধটু হাত লাগানো। তাও মালিকের সাথে গল্প করতে করতে। একটা পুরো জীবন এই বাড়ীতে সে তার জীবনকে ঢেলে দিয়েছে। এই মর্যাদাটুকু তার প্রাপ্য। অবশ্য এ বাড়ীতে কাজ করার ব্যাপারে তার অমর্যাদাও কখনও হয়নি। তবুও এখন সে এ বাড়ীর একজনের মতোই। মালিকের অলিখিত ঘোষনা তার যখন মন চায় সে আসবে। খাওয়া-দাওয়া করবে। তারপর চলে যাবে। জমিলা যেন সরকারী পেনশনভোগী কর্মচারী। জমিলারও মূলতঃ বসে থাকতে ভালো লাগে না।
দেখতে দেখতে কখন যে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয় তা যেন সে টেরও পায় না। ধীরে ধীরে জমিলারও ভালো লাগে এই কিছুটা চাপহীন অলস জীবন। জামিলার মেয়ে রেবেকাই মূলতঃ সামলাচ্ছে সব। জমিলা বসে বসে পান চিবায়। রেবেকার দিকে তাকিয়ে তার প্রথম বয়সের কথা মনে পড়ে। এই বাড়ীতে একসময় তারও রেবেকার মতো ব্যস্ত জীবন কেটেছে।
জমিলার সারা জীবনের অভ্যাস ফজর পড়েই বেরিয়ে যাওয়া। মালিকের বাড়ীতে এসেই যেন পুরোপুরি ভোর হতো। এটাই তার জন্যে স্বাভাবিক ছিলো। সেও এভাবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ অভ্যাসের পরিবর্তন হওয়ায় কেমন যেন লাগে তার কাছে। ফজরের নামাজ পড়ার পর অস্থির লাগে। উঠানে নেমে হাঁটাহাঁটি করে। এটা ওটা নাড়াচাড়া করে। তবুও মনটা কেমন যেন লাগে। আবারও বারান্দায় এসে বসে। আসলে এই ধরনের একটা অবস্থার সাথে সে যে এতোদিন অভ্যস্ত ছিলো না তা তার আচরণেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জমিলার এখন আর কাজ করার প্রয়োজন পড়ে না। ছেলেমেয়েরা সবাই কাজে কর্মে যোগ্য হয়েছে। আয় উপার্জনও ভালই করছে। সেও ইচ্ছে করলে অনেক আগেই কাজকর্ম ছেড়ে দিতে পারতো। কিন্তু নানা কারণেই সে তা করতে পারেনি। নিজের দুর্বলতাটাই আসল। মালিকের বাড়ীতে কাজ না করলে মূলতঃ তার ভালো লাগে না। মালিকও তাকে চায়। প্রতিদিন সকালে সেই ছিলো এ বাড়ীর সবচেয়ে প্রত্যাশিত লোক। জমিলা তাই অন্য কিছু ভাববার অবকাশই পেত না।
সকালের সময়টা যেন কাটতেই চায় না। জামিলা এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করে। সে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু চাইলেই কি আর স্বাভাবিক থাকা যায়। অস্থিরতা হচ্ছে অসুখের মতো। এটা লুকানো কঠিন।
এক সময় আলগোছে হাঁটতে শুরু করে জমিলা। উঠান পেরিয়ে সরু রাস্তা। তারপর মূল রাস্তায় উঠে যায়। দেখতে দেখতে কখন যে মালিকের বাড়ী চলে এসেছে তা সে টেরই পায়নি। মালিকও তাকে আশা করছিল। জমিলাকে দেখে সে তাই হেসে ফেলল। জমিলাও হাসল। এটাই জীবন। চাইলেও সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে যাওয়া যায় না।
জমিলা বলতে গেলে প্রতিদিনই আসে। কাজকর্ম তেমন কিছু না। তার মেয়েই মূলতঃ মূল কাজকর্মগুলো সামলাচ্ছে। মূলতঃ সমস্যা শুধু কাজকর্মে নয়। এখানে অভ্যাসের ব্যাপারটাই আসল। জমিলা তার এই বাঁধাধরা জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই যাই যাই করেও যাওয়া হয়নি। তার ভালোলাগা আর ভালোবাসাটাও মূলতঃ এই অভ্যাসের সাথে মিশে আছে। এর একটা থেকে আর একটাকে আলাদা করা কঠিন। জমিলার কাছে প্রতিটি অনুভবই স্পষ্ট। তার কাছে তার প্রত্যাশার চাইতে প্রাপ্তিটাই সবসময় বেশি মনে হয়। এটা তার এক ধরনের সন্তুষ্টি যা তাকে ভেতর থেকে সুখী হতে সাহায্য করে। জমিলা নিজেও জানে অন্যের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি পুষে রাখায় নিজের ক্ষতিই বেশি। সে তাই শর্তহীন সুখী মানুষ। রাতে তার বরাবরই ভাল ঘুম হয়।
মূলতঃ অবসরেই চলে গিয়েছিলো জমিলা। অবশ্য অবসরেই আছে সে। কাজ বলতে তেমন কিছু নেই। মালিকের সাথে একটু আধটু হাত লাগানো। তাও মালিকের সাথে গল্প করতে করতে। একটা পুরো জীবন এই বাড়ীতে সে তার জীবনকে ঢেলে দিয়েছে। এই মর্যাদাটুকু তার প্রাপ্য। অবশ্য এ বাড়ীতে কাজ করার ব্যাপারে তার অমর্যাদাও কখনও হয়নি। তবুও এখন সে এ বাড়ীর একজনের মতোই। মালিকের অলিখিত ঘোষনা তার যখন মন চায় সে আসবে। খাওয়া-দাওয়া করবে। তারপর চলে যাবে। জমিলা যেন সরকারী পেনশনভোগী কর্মচারী। জমিলারও মূলতঃ বসে থাকতে ভালো লাগে না।
দেখতে দেখতে কখন যে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয় তা যেন সে টেরও পায় না। ধীরে ধীরে জমিলারও ভালো লাগে এই কিছুটা চাপহীন অলস জীবন। জামিলার মেয়ে রেবেকাই মূলতঃ সামলাচ্ছে সব। জমিলা বসে বসে পান চিবায়। রেবেকার দিকে তাকিয়ে তার প্রথম বয়সের কথা মনে পড়ে। এই বাড়ীতে একসময় তারও রেবেকার মতো ব্যস্ত জীবন কেটেছে।
Comments
Post a Comment