গুলতি হাতে একটা মেয়ে সারা এলাকায় ঘুরে বেড়ায় এটা দেখতে কেমন লাগে। সবচেয়ে বড় কথা মেয়ের বাবা মার কাছে বিষয়টা সবচেয়ে বিব্রতকর। তাদের কাছে নালিশ আর নালিশ। নাহ্ অভিযোগ তেমন কিছু নয়। তবে মেয়ে বড় হচ্ছে। এটাও বা কম কিসে। পাড়া পড়শীর চোখ। তারা চৌদ্দ বছরের মেয়েকে চব্বিশ দেখে।
মেয়ের যেন কোন কিছুতেই মাথা ব্যাথা নেই। এ বছর ক্লাস এইটে উঠেছে। লম্বা মেয়ে। এ মেয়ে যখন তখন যার তার মাথা খায়। সবার মুখের উপর কথা বলে। কিছুটা বাপের প্রভাব প্রতিপত্তি। কিছুটা রূপের দাপট। পড়াশোনায়ও এক নম্বর। সব মিলিয়ে সেতারা যেন সোনায় সোহাগা। কারো কারো জন্যে জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ।
সারা দিন এলাকায় টই টই করে বেড়ানো তার কাজ। সাথে এক দল ছেলে মেয়ে। সে তাদের সরদার। কারো কথা কানে তোলার সময় তার নেই। সে নিজে যা বোঝে তাই করে। সেতারার সেতারের তারে সব সময়ই কোন না কোন সুর বাজে। গলা ছেড়ে গান গাওয়ায় তার জুড়ি নেই। গাছের মগডালে উঠে হঠাৎ ঝুলে পড়ে। মনে হয় সে যেন একটা আস্ত বাদর।
বিরক্ত হলেও সেতারার ভক্তও কম নেই। একটা বিরাট গ্রুপ তাকে সমর্থন করে। এর মধ্যে শিক্ষিতরাই বেশি। তারা জানে সেতরার গুন আছে। এই গুলতি মারা মেয়েই প্রতি রাতে এক ঘন্টা অশিক্ষিতদের পড়ায়। প্রথম আধা ঘন্টা অশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের। পরবর্তী আধা ঘন্টা অশিক্ষিত বুড়ো বুড়ীদের। সেতারা এখানেই সবার থেকে আলাদা।
চৌদ্দ বছরের সেতারার কাছে অনেকেই অনেকভাবে হেরে যায়। চেয়ারম্যান বাড়ীর লোকজন হারে মনে মনে। তারা এলাকার মাতুব্বর কিন্তু সেতারা তাদের থোরাই কেয়ার করে। চেয়ারম্যান মানানোর চেষ্টা করে অন্য কারনে। তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। দারুন মেধাবী। কিন্তুু সেতারা সব বোঝে। তাদের গায়ে খুনের বদনাম। হাতে রক্তের দাগ। ছেলে যতোই ভালো হোক লাভ নেই। সেতারার বাপ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে খুনীদের সাথে কোন আত্মীয়তা নয়।
দেখতে দেখতে নতুন বছর আসে। সবকিছু কেমন যেন বদলে যেতে থাকে। মার্চে এসে ঝামেলা আরও জট পাকিয়ে যায়। অবশেষে গর্ত থেকে সাপ বেরিয়ে আসে। পরদিন যথারীতি সেতারার ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু আজকের দিনটা সত্যিই অন্যদিনের চাইতে আলাদা। সারাদিন জুড়ে নানা খবর কানে আসে। বেশির ভাগই তার কাছে অবাক করার মতো। হঠাৎ করে পরিস্থিতি এতোটা খারাপ হয়ে গেলো।
সন্ধ্যায় যথারীতি শিক্ষার্থীরা আসে। আজ আর পড়াশুনা নয়। সে সবাইকে নিয়ে বসে পরবর্তী করণীয় স্থির করে। সেতারার জ্বালাময়ী বক্তৃতায় সবাই অবাক। এতো কথা কখন সে শিখিয়েছে।
আসলে এখানেই ব্যক্তিক্রমদের চমক। তারা জলে থাকে ঠিকই কিন্তু সেই জলে তারা ভেজে না। সবার মতো স্রোতে গা ভাসায় না। নিজেকে নীরবে নিভৃতে তৈরি করে। সেতারা সেই সব দুর্লভদের একজন যারা পনের বছরে পঞ্চান্ন বছরের যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তার কথায় সে ছাপ স্পষ্ট। সবাই অন্ততঃ একটা দিক নির্দেশনা নিয়ে ঘরে ফিরে যায়। সেতারার কথায় বঙ্গবন্ধুর কথার প্রতিধ্বনি। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। খবর চেয়ারম্যানের কাছেও পৌঁছে যায়। চেয়ারম্যান দাঁতের কোনায় চিকন হাসি হাসে। এরকম সেতারা তার কতো দেখা আছে। হাতি ঘোড়া গেল তল মশা বলে কতো জল। পনের বছরের একটা পুচকে মেয়ে দেশ স্বাধীন করবে।
দিন যায়, মাস যায়।
সেতারাদের কাজকর্ম গোপনে গোপনে চলতে থাকে। উপর থেকে যদিও কিছু বোঝার উপায় নেই। তারা অত্যন্ত কৌশলী। এ কাজে কৌশলী না হলে সব বরবাদ হয়ে যাবে। কিন্তু সব কিছুরই একটা বিহিত শেষ পর্যন্ত আছেই। চেয়ারম্যান সেই বিহিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। শহর থেকে ফেরা তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুন ছেলেও নাকি সেতারার সাথে যোগ দিয়েছে। এবার আর চুপ থাকা চলবে না।
কয়েকটা ছোটখাটো অপারেশনে যথাসম্ভব সাহায্য করেছে সেতারারা। চেয়ারম্যানের ছেলে মান্নান তাদের সাথে থাকায় তাদের শক্তি বেড়ে কয়েকগুন হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান যেহেতু শান্তি কমিটির প্রধান তাই তার মুখ রাখা দায় হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এখন তার ছেলেই তার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। সেতারাকে কখন সামলাবে। মান্নানই যে সাক্ষাত যমদূত।
এলাকায় সেতারা মান্নান জুটি জয় জয়াকার। তাদের একের পর এক সাফল্যে মুক্তিযোদ্ধারা ভীষণ এগিয়ে। কোনঠাসা হয়ে পড়া রাজাকাররা চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে জড়ো হয়েছে। তাদের একটাই কথা। ঐ সেতারাই আপনার ছেলের মাথা খেয়েছে। বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী হয়েছে। ওদের থামাতে হবে।
চিন্তায় চেয়ারম্যানের মাথা নুয়ে আসছে। এ কি হলো! শেষ পর্যন্ত ঘরের শত্রু বিভীষন। এই জন্যেই কি সে ছেলেকে মানুষ করেছিলো। গুলতি হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো একটা পনের বছর বয়সের মেয়ের কাছে তাকে শেষ পর্যন্ত হেরে যেতে হবে।
রাত তখন গভীর।
চেয়ারম্যান সাহেব তার বন্ধুকে গুলি ভরে কাউকে না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। তারপর পা টিপে টিপে ওদের আস্তানায় গিয়ে হাজির। অন্ধকারে বুক চিরে বেরিয়ে এসে হঠাৎ করেই যমদূতের মতো মান্নানের বুকে বন্ধুক তাক করেন। পাশে বসা সেতারা। অন্যরা সবাই তাদের ঘিরে গোল হয়ে বসে আছে।
হঠাৎ চেয়ারম্যান সাহেবকে এভাবে হাজির হতে দেখে সবাই অবাক। এবার বাপ ব্যাটা মুখোমুখি হবে। চেয়ারম্যান সাহেব উদার গলায় বলেন, এই যে আমি কি একাই বাদ পড়ব। তা হবে না। আমি আমার বন্ধুক নিয়ে হাজির। আজ থেকে লড়াই হবে নতুন উদ্যমে।
সবাই হা করে চেয়ারম্যানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মেয়ের যেন কোন কিছুতেই মাথা ব্যাথা নেই। এ বছর ক্লাস এইটে উঠেছে। লম্বা মেয়ে। এ মেয়ে যখন তখন যার তার মাথা খায়। সবার মুখের উপর কথা বলে। কিছুটা বাপের প্রভাব প্রতিপত্তি। কিছুটা রূপের দাপট। পড়াশোনায়ও এক নম্বর। সব মিলিয়ে সেতারা যেন সোনায় সোহাগা। কারো কারো জন্যে জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ।
সারা দিন এলাকায় টই টই করে বেড়ানো তার কাজ। সাথে এক দল ছেলে মেয়ে। সে তাদের সরদার। কারো কথা কানে তোলার সময় তার নেই। সে নিজে যা বোঝে তাই করে। সেতারার সেতারের তারে সব সময়ই কোন না কোন সুর বাজে। গলা ছেড়ে গান গাওয়ায় তার জুড়ি নেই। গাছের মগডালে উঠে হঠাৎ ঝুলে পড়ে। মনে হয় সে যেন একটা আস্ত বাদর।
বিরক্ত হলেও সেতারার ভক্তও কম নেই। একটা বিরাট গ্রুপ তাকে সমর্থন করে। এর মধ্যে শিক্ষিতরাই বেশি। তারা জানে সেতরার গুন আছে। এই গুলতি মারা মেয়েই প্রতি রাতে এক ঘন্টা অশিক্ষিতদের পড়ায়। প্রথম আধা ঘন্টা অশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের। পরবর্তী আধা ঘন্টা অশিক্ষিত বুড়ো বুড়ীদের। সেতারা এখানেই সবার থেকে আলাদা।
চৌদ্দ বছরের সেতারার কাছে অনেকেই অনেকভাবে হেরে যায়। চেয়ারম্যান বাড়ীর লোকজন হারে মনে মনে। তারা এলাকার মাতুব্বর কিন্তু সেতারা তাদের থোরাই কেয়ার করে। চেয়ারম্যান মানানোর চেষ্টা করে অন্য কারনে। তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। দারুন মেধাবী। কিন্তুু সেতারা সব বোঝে। তাদের গায়ে খুনের বদনাম। হাতে রক্তের দাগ। ছেলে যতোই ভালো হোক লাভ নেই। সেতারার বাপ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে খুনীদের সাথে কোন আত্মীয়তা নয়।
দেখতে দেখতে নতুন বছর আসে। সবকিছু কেমন যেন বদলে যেতে থাকে। মার্চে এসে ঝামেলা আরও জট পাকিয়ে যায়। অবশেষে গর্ত থেকে সাপ বেরিয়ে আসে। পরদিন যথারীতি সেতারার ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু আজকের দিনটা সত্যিই অন্যদিনের চাইতে আলাদা। সারাদিন জুড়ে নানা খবর কানে আসে। বেশির ভাগই তার কাছে অবাক করার মতো। হঠাৎ করে পরিস্থিতি এতোটা খারাপ হয়ে গেলো।
সন্ধ্যায় যথারীতি শিক্ষার্থীরা আসে। আজ আর পড়াশুনা নয়। সে সবাইকে নিয়ে বসে পরবর্তী করণীয় স্থির করে। সেতারার জ্বালাময়ী বক্তৃতায় সবাই অবাক। এতো কথা কখন সে শিখিয়েছে।
আসলে এখানেই ব্যক্তিক্রমদের চমক। তারা জলে থাকে ঠিকই কিন্তু সেই জলে তারা ভেজে না। সবার মতো স্রোতে গা ভাসায় না। নিজেকে নীরবে নিভৃতে তৈরি করে। সেতারা সেই সব দুর্লভদের একজন যারা পনের বছরে পঞ্চান্ন বছরের যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তার কথায় সে ছাপ স্পষ্ট। সবাই অন্ততঃ একটা দিক নির্দেশনা নিয়ে ঘরে ফিরে যায়। সেতারার কথায় বঙ্গবন্ধুর কথার প্রতিধ্বনি। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। খবর চেয়ারম্যানের কাছেও পৌঁছে যায়। চেয়ারম্যান দাঁতের কোনায় চিকন হাসি হাসে। এরকম সেতারা তার কতো দেখা আছে। হাতি ঘোড়া গেল তল মশা বলে কতো জল। পনের বছরের একটা পুচকে মেয়ে দেশ স্বাধীন করবে।
দিন যায়, মাস যায়।
সেতারাদের কাজকর্ম গোপনে গোপনে চলতে থাকে। উপর থেকে যদিও কিছু বোঝার উপায় নেই। তারা অত্যন্ত কৌশলী। এ কাজে কৌশলী না হলে সব বরবাদ হয়ে যাবে। কিন্তু সব কিছুরই একটা বিহিত শেষ পর্যন্ত আছেই। চেয়ারম্যান সেই বিহিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। শহর থেকে ফেরা তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুন ছেলেও নাকি সেতারার সাথে যোগ দিয়েছে। এবার আর চুপ থাকা চলবে না।
কয়েকটা ছোটখাটো অপারেশনে যথাসম্ভব সাহায্য করেছে সেতারারা। চেয়ারম্যানের ছেলে মান্নান তাদের সাথে থাকায় তাদের শক্তি বেড়ে কয়েকগুন হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান যেহেতু শান্তি কমিটির প্রধান তাই তার মুখ রাখা দায় হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এখন তার ছেলেই তার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। সেতারাকে কখন সামলাবে। মান্নানই যে সাক্ষাত যমদূত।
এলাকায় সেতারা মান্নান জুটি জয় জয়াকার। তাদের একের পর এক সাফল্যে মুক্তিযোদ্ধারা ভীষণ এগিয়ে। কোনঠাসা হয়ে পড়া রাজাকাররা চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে জড়ো হয়েছে। তাদের একটাই কথা। ঐ সেতারাই আপনার ছেলের মাথা খেয়েছে। বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী হয়েছে। ওদের থামাতে হবে।
চিন্তায় চেয়ারম্যানের মাথা নুয়ে আসছে। এ কি হলো! শেষ পর্যন্ত ঘরের শত্রু বিভীষন। এই জন্যেই কি সে ছেলেকে মানুষ করেছিলো। গুলতি হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো একটা পনের বছর বয়সের মেয়ের কাছে তাকে শেষ পর্যন্ত হেরে যেতে হবে।
রাত তখন গভীর।
চেয়ারম্যান সাহেব তার বন্ধুকে গুলি ভরে কাউকে না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। তারপর পা টিপে টিপে ওদের আস্তানায় গিয়ে হাজির। অন্ধকারে বুক চিরে বেরিয়ে এসে হঠাৎ করেই যমদূতের মতো মান্নানের বুকে বন্ধুক তাক করেন। পাশে বসা সেতারা। অন্যরা সবাই তাদের ঘিরে গোল হয়ে বসে আছে।
হঠাৎ চেয়ারম্যান সাহেবকে এভাবে হাজির হতে দেখে সবাই অবাক। এবার বাপ ব্যাটা মুখোমুখি হবে। চেয়ারম্যান সাহেব উদার গলায় বলেন, এই যে আমি কি একাই বাদ পড়ব। তা হবে না। আমি আমার বন্ধুক নিয়ে হাজির। আজ থেকে লড়াই হবে নতুন উদ্যমে।
সবাই হা করে চেয়ারম্যানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
Comments
Post a Comment