Skip to main content

Setara bibi under the lamp post - Literature - observerbd.com

Setara bibi under the lamp post - Literature - observerbd.com : The glittering city aroundLife is rich with red, blue light of neonWide sky over the headPieces of moonlight, scatteredAnd in that splashed pieces of meteorThose are taken by the scientists of NASASo height the civilization reachesThis city is the flow of happiness nowSome men like us pass the wayWith frustration

প্রাচীন জেরুজালেমের ইতিহাস HISTORY OF JERUSALEM latest update

 

প্রাচীন জেরুজালেমের ইতিহাস

HISTORY OF JERUSALEM

 

জেরুজালেমের দীর্ঘ ইতিহাসে এটি ৫২ বার আক্রান্ত, ৪৪ বার দখল ও পুনর্দখল, ২৩ বার অবরুদ্ধ এবং দু’বার ধ্বংস হয়েছিল। শহরটির প্রাচীনতম অংশটি খ্রীষ্টপূর্ব ৪র্থ সহস্রবর্ষে জনবসতিতে ভরে ওঠায়, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন নগরী হিসেবে জেরুজালেম গড়ে উঠেছিল।

নগরটি, ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন এ দুটোর মধ্যে কোন জাতিসত্তার, তা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫,০০০ বছরের অধিককালের জনবসতির ইতিবৃত্ত বিশ্লেষণ। কারণ নগরটির কেন্দ্রীয় অবস্থানকে ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন উভয় জাতিসত্তায় স্থান দেয়া হয়েছিল। আবার, ইতিহাস প্রায়শঃই আদর্শগত পক্ষপাতিত্ব বা ভূমিকা দ্বারা প্রভাবিত হতো। উদাহরণ স্বরূপ, নগরটির ইতিহাসে ইহুদিদের সময়কাল ইসরায়েলী জাতীয়তাবাদীদের কাছে প্রাধান্য পেয়েছিল, যার প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, আধুনিক ইহুদিদের আবির্ভাব ও গোড়াপত্তন হয়েছিল ইসরায়েলে, অন্যদিকে নগরটির ইতিহাসে ইসলামী কালপর্ব প্যালেস্টাইনীদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যাদের অভিমত এ ধারণা দেয় যে, আধুনিক ফিলিস্তিনিরা বিভিন্ন জনগোষ্ঠী থেকে বিস্তার লাভ করেছিলেন যারা অত্র এলাকায় বসবাস করতেন। ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, উভয় জাতিই নগরটির ইতিহাস এই বলে দাবি করেছেন যে, অন্যপক্ষ তাদের আপেক্ষিক দাবি জোরালো করতে নগরটিকে রাজনীতিকরণ করেছেন এবং নগরটির ইতিহাস প্রণয়নে বিভিন্ন লেখক ও ইতিহাসবেত্তা বিভিন্ন কালের নানা ঘটনার সমাবেশ ঘটিয়ে নগরটির গোড়াপত্তন হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন।

 

প্রাচীন যুগ

পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণাদি থেকে দেখা যায়, জেরুজালেমের প্রথম বসতির গোড়াপত্তন হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ২৮০০ বর্ষের মাঝামাঝি সময়ে গীহন ঝর্ণায়। খ্রীষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে এ নগরটি সম্পর্কে সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় মধ্য মিশরীয় ভাষ্কর্য লিপিতে, যেখানে নগরটিকে রুসালিমাম নামে রেকর্ডে অভিহিত করা হয়। ব্যুৎপত্তিগতভাবে এখানে মূল অক্ষর স-ল-ম দ্বারা “শান্তি” (আধুনিক ভাষায় সালাম বা আধুনিক আরবি বা হিব্রু ভাষায় শালোম এর সাথে তুল্য) অথবা ক্যানানাইট ধর্মে সন্ধ্যার দেবতা শালিম এর সাথে তুলনা করা যায়।

ক্যানানাইট ও মিশরীয় কালপর্ব

পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণে দেখা যায়, খ্রীষ্টপূর্ব ১৭ শতাব্দীতে ক্যানানাইটরা তাদের প্রাচীন জলব্যবস্থা রক্ষাকল্পে জেরুজালেমের পূর্বপার্শ্বে বিশালকায় দেয়াল নির্মাণ করেছিলো

১৫৫০-১৪০০ খ্রীষ্টপূর্ব কালে প্রথম আহমোস ও প্রথম থাটমোস এর অধীন মিশরীয় নূতন রাজধানীর পরেই জেরুজালেম মিশরের কাছে একটি জায়গীর বা প্রজা হিসাবে পরিগণিত হয়েছিল। বস্তুতঃ প্রথম আহমোস ও প্রথম থাটমোস মিশরের সীমানা বিস্তৃত করে লেভান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেছিলেন। উরুসালিমের রাজা আবদি-হেবা এবং তার রাজাধিরাজ তৃতীয় আমেনহোটেপ আমারনা বর্ণমালায় লিখিত ভাষায় পত্র যোগাযোগ করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

খ্রীষ্টপূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এ অঞ্চলে মিশরীয় আধিপত্য হ্রাস পেতে থাকে, ব্রোঞ্জ যুগ যখন সমাপ্তির পথে ছিল। ১১৭৮ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে তৃতীয় রামেসিস ও সাগর বিচরণকারীদের (Sea People) মধ্যে জাহীর (Djahy) যুদ্ধ (কেনানদের মিশরীয় নাম ছিল জাহী) সংঘটিত হয়েছিল, তখন থেকেই মিশরীয়দের প্রভাব কমতে শুরু হয়। ১২৭৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে সংঘটিত হয় কাদেশের যুদ্ধ (Battle of Kadesh), যখন থেকে মিশরীয় ও হিট্টিস (তৎকালীন আনাতোলিয়া নগর-রাষ্ট্রের হাটুসা-উইলুসা অংশ) জনগোষ্ঠির প্রভাব-প্রতিপত্তি হ্রাস পেতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এ ধরনের ক্ষমতা-হ্রাস অত্র অঞ্চলে অধিক সংখ্যক স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছিল।

বাইবেল অনুসারে, এ সময় জেরুজালেম জেবুস নামে পরিচিত ছিল এবং এর স্বাধীন কেনানাইট অধিবাসীদেরকে জেবুসাইট নামে অভিহিত করা হতো।

 

ইসরায়েলী কালপর্ব

ধর্মগ্রন্থ বাইবেল অনুসারে, নগরের ইসরায়েলী ইতিহাসের শুরু ১০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে, কিং ডেভিড জেরুজালেম জয় করেছিলেন, যে কারণে জেরুজালেম ডেভিডের নগরে পরিণত হয়ে ইসরায়েল যুক্তরাজ্যের রাজধানী হয়েছিল। স্যামুয়েলের গ্রন্থ অনুসারে, জেবুসাইটরা জেরুজালেম নগর দখলে ইসরায়েলীদের প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছিল এবং সেই সময় থেকে রাজা ডেভিড সবধরনের দখল প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল, যদিও জেবুসাইটরা দাবি করেছিল, এমনকি অন্ধ ও খোড়া ব্যক্তিরাও ইসরায়েলী সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করতে পারবে। স্যামুয়েলের গ্রন্থে ও ম্যাসোরেটিক টেক্সটে উল্লেখ পাওয়া যায় যে, ডেভিড অপহরণ দ্বারা একটি পানির শ্যাফটে সৈন্য পাঠিয়ে এবং নগরের ভেতর থেকে আক্রমণ করে নগরটি দখল করেছিল। বর্তমানে পুরাতাত্ত্বিকগণ এ ধরনের প্রচেষ্টাকে অসম্ভব হিসেবে আখ্যায়িত করছেন, কারণ গীহন ঝর্ণা ছিল একমাত্র স্থান শুধুমাত্র যেখান থেকেই পানির শ্যাফটে নগর অভিমুখে রওয়ানা করতে পারতো - যেটি অত্যন্ত মজবুতভাবে প্রতিরোধকৃত হওয়ার কথা (এ পথে যে আক্রমণ হতে পারে তা তাদের কাছে অজানা কিছু নয়)। প্রাচীন সেপটুয়াজিস্ট টেক্সটে দেখা যায়, একটি পানির শ্যাফট নয় বরং ডেভিডের সেনারা পানির টানেল বাদ দিয়ে বরং ড্যাগার ব্যবহার করেই জেবুসাইটদের পরাস্ত করেছিল। জেরুজালেমে তখন আরাউনাহ নামে আরেকজন রাজা ছিল, সম্ভবতঃ নগরটি ডেভিডের নিয়ন্ত্রণের পূর্বে। বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে সম্ভবতঃ তিনি ছিলেন জেরুজালেমের জেবুসাইট বাদশাহ্। বাইবেলে বর্ণিত ধারণায় ওফেলের উপরে দন্ডায়মাণ নগরটি তখন দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হয়েছিল এবং ডেভিড জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করেছিলেন। স্যামুয়েলের গ্রন্থ অনুসারে, আরাউনাহের নিকট থেকে ক্রয়কৃত জমির উপর নির্মিত ভবনের মেঝেতে ডেভিড একটি পূজার বেদি নির্মাণ করেছিলেন। বাইবেলের অনুসারী পন্ডিতগণ এ প্রচেষ্টাকে ইসরায়েলী স্থাপনায় একটি পুণ্যস্থানের ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

পরবর্তীকালে, বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে, বাদশাহ সলোমন অধিকতর সুন্দর একটি গীর্জা নির্মাণ করেছিলেন। সলোমনের গীর্জা এমন একটি অবস্থানে নির্মিত হয়েছিল, যা ছিল ডেভিডের বেদির সমপর্যায়ের। কালক্রমে গীর্জাটি ঐ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়, পরিশেষে হেজেকিয়া ও যোশিয়াহের ধর্মীয় সংস্কারের ফলে জেরুজালেম গীর্জাটি ধর্মীয় ইবাদতের তীর্থস্থান হিসেবে রূপলাভ করে, যেখানে অন্যদের ব্যয়ে ধর্মীয় রীতি ও আচার-আচরণ যেমন শিলোহ ও বেথেল অনুশীলন শুরু হয়। তবে, কে. এল. নোল তার গ্রন্থ “কেনান এন্ড ইসরায়েল এন এন্টিকুইটি : এ টেক্সটবুক অন হিস্টরি এন্ড রিলিজিওন”- এ মত দিয়েছেন যে, জেরুজালেমকে ধর্মপালনের কেন্দ্র অভিহিত করে বাইবেলের দাবি ফিকশন বা কল্পকথা, যদিও যোশিয়াহর সময়কালে তার শাসনাধীন এলাকাটি এত ক্ষুদ্র ছিল যে, জেরুজালেম গীর্জাটি একমাত্র পুণ্যস্থান হয়ে উঠেছিল। সলোমনের বর্ণনায় বলা হয়েছে যে তিনি জেরুজালেমে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন নির্মাণ করেছিলেন, যার মধ্যে তার প্রাসাদ, মিলো (যার পরিচিতি বিতর্কিত) ছিল। বাইবেলের বর্ণনার সমর্থনে খনন কাজের কোন প্রমাণাদি রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে পুরাতাত্ত্বিকগণ দ্বিধাবিভক্ত। আইলাত মাজার বলেন, সঠিক সময়ে অনুসন্ধান হলে তার বৃহৎ পাথুরে ভবনের প্রমাণ পাওয়া যাবেযেখানে ইসরায়েলী ফিনকেনস্টেইন মতবিরোধ করে জানান যে, বিষয়টির ব্যাখ্যা ও তারিখ বিভ্রান্তিকর।

৯৩০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ইসরায়েলী বৃহত্তর রাজ্য থেকে যখন যুদাহ রাজ্য বিচ্ছিন্ন হয়, (সলোমনের রাজত্বের শেষদিকে যদিও ইসরায়েলী ফিনকেনস্টেইন এবং অন্যান্যরা একত্রিত বা সংযুক্ত রাজধানী নিয়ে মতবিরোধ করেছেন, জেরুজালেম যুদাহ রাজ্যের রাজধানী হয়, যখন ইসরায়েলী রাজধানী সামারিয়ার শেচেমে স্থানান্তরিত হয়।

থমাস এল. থম্পসন যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, এটি কেবলমাত্র একটি নগর হিসেবে গড়ে উঠেছিল যেখানে রাষ্ট্রীয় রাজধানী হিসেবে ৭ম শতাব্দীতে কাজ শুরু হয়েছিল।

তবে ওমর সের্গি যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, বর্তমান পুরাতাত্ত্বিক গবেষণায় ডেভিড সিটি ও ওফেলে প্রাপ্ত নমুনায় মনে হচ্ছে দ্বিতীয় লৌহ যুগ এর সময়কালে জেরুজালেম একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর ছিল।

বাইবেল ও আঞ্চলিক পুরাতাত্ত্বিক - উভয় গবেষণায় প্রতীয়মাণ হয় যে, ৯২৫-৭৩২ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে অঞ্চলটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান ছিল। ৯২৫ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে মিশরীয় ফারাও প্রথম শেশঙ্ক তৃতীয় অন্তবর্তীকালে অঞ্চলটি আক্রমণ করেন, যিনি সম্ভবতঃ প্রথম ফারাও এর মতই ছিলেন। বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে, প্রথম ফারাও পুণ্যস্থান জেরুজালেম দখল করেছিলেন। প্রায় ৭৫ বছর পরে জেরুজালেম সেনাবাহিনী একটি অপরিকল্পিত অবস্থায় নিও এ্যাসিরিয়ান রাজা তৃতীয় শালমানেসেরের এর সাথে কারকারের যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। বাইবেল অনুসারে যুদাহর রাজা যেহোশাফাত উত্তর ইসরায়েলের রাজা আহাবের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন।

বাইবেলের ব্যাখ্যা অনুসারে ঐ যুদ্ধের স্বল্পকাল পরে ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেম দখল করেন। আরব ও ইথিওপিওরা কিং যেহোরামের বাড়ি লুটপাট করে শুধুমাত্র তার ছোট পুত্রকে বাদ রেখে পরিবারের সবাইকে সহ সবকিছু নিয়ে যায়।

দুই দশক পরে আরাম দামেস্কের হাজায়েল জেরুজালেমসহ অধিকাংশ কেনান দখল করে নেয়।

বাইবেলের ব্যাখ্যা অনুসারে যুদাহের যেহোয়াশ জেরুজালেমের সকল ধনসম্পদ উপহার হিসেবে প্রদান করেন, তবে হাজায়েল নগরের সকল রাজপুত্রকে ধ্বংস করতে উদ্যত হন। এক শতাব্দী পরে নগরটি ইসরায়েলী যেহোয়াশ দ্বারা আক্রান্ত হয়, যিনি দেয়াল ধ্বংস করে যুদাহ বন্দী আমাজিয়াহকে নিয়ে যান।

প্রথম গীর্জা সময়কালের শেষদিকে জেরুজালেম রাজ্যের একমাত্র ধর্মীয় তীর্থস্থান এবং তীর্থযাত্রীদের নিয়মিত পুণ্যস্থান হিসেবে আবির্ভূত হয়। এটি এমন একটি ঘটনা পুরাতাত্ত্বিকগণ যাকে প্রমাণিত ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন, যদিও সেখানে ব্যক্তিগত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হতো বর্তমান সময়ে যা বিস্তার লাভ করেছে।

এ্যাসিরীয় ও ব্যবিলনীয় যুগ

যুদাহের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেম প্রায় ৪০০ বছরের জন্য বজায় ছিল। ৭০১ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে তা এ্যাসিরীয় অবরোধে ছিল। সামারিয়ার মত না হলেও ইসরায়েলের উত্তর অংশের রাজধানীর পতন ঘটেছিল বিশ বছর আগেই। বাইবেলের ব্যাখ্যা অনুসারে, এটি ছিল একটি অভূতপূর্ব ঘটনা যাতে একজন এঞ্জেল বা দূত সেনাচেরিব সেনাবাহিনীর প্রায় ১,৮৫,০০০ সদস্যকে হত্যা করেন। টেলর প্রিজমে রক্ষিত সেনাচেরিব এর নিজস্ব বিবরণ থেকে জানা যায়, ঐ ঘটনার সমসাময়িক কালে যুদাহের রাজা হেজেকিয়াহ্ খাচায় বন্দী পাখির মত নগরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন এবং পরিশেষে সেনাচেরিবকে ৩০ ট্যালেন্ট স্বর্ণ এবং ৮০০ ট্যালেন্ট রৌপ্য মুদ্রা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী দিয়ে মুক্ত হয়েছিলেন।

৫৯৭ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে জেরুজালেম অবরোধ ব্যবিলনীয়দের দখল নিতে সহায়তা করেছিল যাতে তারা তরুণ রাজসহ অভিজাত সভাসদসহ যেহোচিনকে নিয়ে যায়। জেদেকিয়াহ ব্যবিলনীয় রাজা হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। ঐ সময় নেবুচাদ নেজার বিদ্রোহ করেন এবং অত্যন্ত ক্ষমতাশীল একটি রাষ্ট্রের রাজা হিসেবে দেশ শাসন করেন (৫৮৭/৫৮৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে)। তিনি নগরটি পুনর্দখল করেন জেদেকিয়াহর সামনে তার উত্তরসুরীদের হত্যা করেন। তিনি জেদেকিয়াহর চোখ উপড়ে ফেলেন যাতে সেটি তার শেষ দেখা হয়। তখন ব্যবিলনীয়রা জেদেকিয়াহ ও যুদাহের উচ্চ সভাসদগণকে বন্দী করেন।

ব্যবিলনীয়রা তখন গীর্জা জ্বালিয়ে দিয়ে ধ্বংস করেন, নগরের দেয়াল ধ্বংস করে গেডালিয়ার পুত্র আচিকামকে যুদাহের গভর্ণর নিয়োগ করেন। মাত্র ৫২ দিন শাসনের পরেই নেতানিয়াহের ছেলে ইসামোয়েল গেদালিয়াকে গোপনে হত্যা করেন । নেবুচাদ নেজারের প্রতিশোধ গ্রহণ প্রক্রিয়া দেখে কিছু মানুষ মিশর ছেড়ে পালিয়ে যান।

পার্সিয়ান (আচেমেনিদ) কালপর্ব

বাইবেল এবং সম্ভবতঃ সাইরাস, সিলিন্ডার দ্বারা সত্য বলে সমর্থিত ব্যাখ্যা অনুসারে ব্যবিলনে কয়েক দশক বন্দীদশায় কাটানোর পরে এবং আচেমেনিদ কর্তৃক ব্যবিলন দখলের পরে পারস্যেও দ্বিতীয় সাইরাস ইহুদিদেরকে যুদাহে ফিরে যেতে এবং গীর্জা পুনর্নিমাণের অনুমতি দেন। এজরা-নেহিমিয়াহ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, দারিযুস দ্য গ্রেট (৫১৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) এর ৬ষ্ঠ বছরে দ্বিতীয় গীর্জার নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। যার প্রেক্ষিতে প্রথম আর্টাজেরেক্স এজরাকে পাঠান এবং নেহেমিয়াহকে নগরের দেয়াল পুনর্নিমাণের নির্দেশ প্রদান করেন এবং এবার-নারিসাতরাপির মধ্যকার এহুদ প্রদেশ শাসন করতে বলেন। এসকল ঘটনাপঞ্জি হিব্রু বাইবেলের ঐতিহাসিক বিবরণের শেষ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

এ সময়ে আরামিক খচিত “এহুদ মুদ্রা প্রস্তুতকরণ” প্রবর্তন করা হয় - ধারণা করা হয় জেরুজালেম বা নিকটস্থ কোথাও টাকশালে মুদ্রা প্রস্তুত করা হয়, তবে কোন মুদ্রায় টাকশালের চিহ্ন ছিল না।

 

ক্লাসিকাল এন্টিকুইটি সময়কাল

হেলেনিস্টিক কালপর্ব

টলেমিক ও সেলুসিড প্রদেশ

মহামতি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট যখন পারস্য সাম্রাজ্য দখল করেন, জেরুজালেম ও যুদিয়া তখন গ্রীক ও হেলেনিয় প্রভাবের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পরে দাদোচাই যুদ্ধের পরে জেরুজালেম ও যুদিয়া প্রথম টলেমিক এর অধীনে টলেমিক নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং এহুদ মুদ্রা প্রস্তুত অব্যাহত রাখে। ১৯৮ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে সংঘটিত পানিয়াম যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে পঞ্চম টলেমি এন্টিকাস দি গ্রেট এর অধীনস্থ সেলুসিড এর নিকট জেরুজালেম ও যুদিয়ার নিয়ন্ত্রণ হারান।

সেলুসিড এর অধীনে বহু ইহুদি হেলেনিয় হয়েছিলেন এবং তাদের সহায়তায় জেরুজালেমকে হেলেনিয় প্রভাবাধীন করতে চেষ্টা করেছিলেন। পরিশেষে ১৬০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ম্যাথিয়ুস ও তার পাঁচ পুত্রের পরিচালিত বিদ্রোহের ফলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ম্যাথিয়ুসের পাঁচ পুত্রগণ হচ্ছেন: সিমোন, ইয়োকানান, ইলিয়াজার, জনাথন ও যুদাস ম্যাকাবাস ওরফে ম্যাকাবাস। ম্যাথিয়ুসের মৃত্যুর পরে বিদ্রোহী নেতা হিসাবে যুদাস ম্যাকাবাস ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৬৪ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে তিনি জেরুজালেম দখল করে গীর্জায় প্রার্থনা প্রবর্তন করেন। এই দিনের উৎসবকে হানুকা ইহুদি উৎসব নামে অভিহিত করা হয়।

হাসমোনিয়ান কালপর্ব

ম্যাকাবিনের বিদ্রোহের ফলশ্রুতিতে স্বায়ত্বশাসিত ও পরবর্তীতে স্বাধীন হাসমোনিয়ান এর রাজধানী হয় জেরুজালেম যা এক শতাব্দীর অধিক সময় অব্যাহত ছিল। যুদাসের মৃত্যুর পরে তার ভ্রাতা জনাথন আফাস এবং সিমোন থাসি রাজ্যটিকে সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ হিসাবে গড়ে তুলতে সফল হয়েছিলেন। তাদের পরে ক্ষমতা দখল করেন সিমোনের পুত্র জন হিরক্যানাস, যিনি স্বাধীনতা অর্জন ছাড়াও যুদিয়া সীমানা সম্প্রসারণ এবং টাকশালে মুদ্রা প্রস্তুতকরণ শুরু করেছিলেন।

হাসমোনিয়ান যুদিয়া একটি রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠছিল এবং রাজা এরিস্টোবুলাসের এবং পরবর্তীকালে আলেকজান্ডার জানায়েসের অধীনে সম্প্রসারিত হয়েছিল। তার বিধবা স্ত্রী সালোম আলেকজান্দ্রা ৬৭ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে মৃত্যুবরণ করলে, মায়ের উত্তরাধিকার কে হবেন তা নিয়ে তার পুত্র দ্বিতীয় হিরক্যানাস ও দ্বিতীয় এরিস্টোবুলাস পারস্পরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাদের বিরোধ নিরসন করতে রোমান জেনারেল পম্পেইকে নিয়োগ করা হলে সে যুদিয়ার ক্ষমতা দখল করে।

পম্পেই দ্বিতীয় এরিস্টোবুলাস কে বাদ দিয়ে তারই ভাই হিরক্যানাসকে সমর্থন প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে পম্পেই জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার জন্য অবরোধ করে রাখেন। বিজয় অর্জনের পরে পম্পেই হলি অফ হলিস ঢুকিয়ে গীর্জাকে অপবিত্র করেন। কারণ শুধুমাত্র উঁচু মানের পুরোহিতরাই তা করতে পারেন। উচ্চপদস্থ পুরোহিত হিসেবে দ্বিতীয় হিরক্যানাস নিয়োগ লাভ করেন এবং তার রয়াল টাইটেল বাদ রাখেন এবং ৪৭ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে একজন ইথানার্ক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। যুদিয়া স্বায়ত্বশাসিত প্রদেশ হিসেবে অব্যাহত ছিল তবে আংশিক হলেও সীমিত স্বাধীনতা ছিল। সর্বশেষ হাসমোনিয়ান রাজা ছিলেন এরিস্টোবুলাসের পুত্র দ্বিতীয় এ্যান্টিগোনাস মাতিয়াহু।

প্রাথমিক রোমান কালপর্ব

৩৭ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ৪০ দিনের অবরোধ শেষে হেরড দি গ্রেট জেরুজালেম দখল করেন, যার ফলে হাসমোনিয়ান শাসনের অবসান ঘটে। রোমানদের প্রজা-রাজ হিসেবে হেরড যুদিয়া প্রদেশ শাসন করতে থাকেন, দ্বিতীয় গীর্জাটির মেরামত ও পুননির্মাণ করেন, পারিপার্শ্বিক কমপ্লেক্সের আয়তন দ্বিগুণের অধিক সম্প্রসারণ করেন এবং অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে মুদ্রা প্রস্তুতের টাকশাল চালু করেন। টেম্পল মাউন্ট প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় তীর্থস্থান হিসেবে রূপলাভ করে। প্লিনি দি এল্ডার হেরডের অর্জন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেরুজালেমকে “কেবলমাত্র যুদাহ নয় বরং পূর্বাঞ্চলীয় নগরসমূহের মধ্যে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ” আখ্যায়িত করেন। ঐতিহাসিক তালমন্দ মন্তব্য করেন যে, “যে ব্যক্তি টেম্পল অফ হেরড দেখেননি, তিনি তার জীবনে কোন সুন্দর ভবন দেখেননি”। টাকিটাস লিখেছেন, ”জেরুজালেম হচ্ছে ইহুদিদের রাজধানী, এখানে একটি গীর্জা ছিল যা ছিল অতিশয় সমৃদ্ধ।”

হেরড ক্যাসারিয়া মারিতমাও তৈরি করেছিলেন যেটি জেরুজালেমের পরিবর্তে রোমান প্রদেশের রাজধানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে হেরডের মৃত্যুর পরে ৪ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে রোমান প্রিফেক্ট, প্রোকিউরেটর ও আইন প্রণেতাদের মাধ্যমে যুদিয়া ও জেরুজালেম নগর সরাসরি রোমান শাসনের অধীনে আসে। তবে, হেরডের অন্যতম দুর্বলতা ছিল যে তিনি যুদিয়া প্রদেশের নামমাত্র রাজা হিসেবে ক্ষমতা লাভ করেছিলেন।

খ্রীষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে যীশু খ্রীষ্ট জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করেন। নিউ টেস্টামেন্টের বিবরণ অনুসারে, এটি ছিল যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়া, উত্থান ও আরোহণ ঘটনাসম্বলিত। এ্যাক্ট অফ এ্যাপোস্টল অনুসারে জেরুজালেমে যীশু প্রথম পবিত্র বাণী লাভ করেন এবং গসপেল বা তাঁর জীবনী প্রচারণা শুরু করেন এবং তার পুনরুত্থান দাবি করেন। এভাবেই জেরুজালেম খ্রীষ্টীয় প্রচারণার প্রাথমিক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে এবং খ্রীষ্টান চার্চের পাঁচ রোমান ক্যাথলিকের একজনের নিবাস হিসেবে গড়ে ওঠে। গ্রেট সচিমের পরে, এটি পূর্বাঞ্চলীয় গোঁড়া চার্চের অংশ হয়ে ওঠে।

দ্বিতীয় গীর্জা পিরিয়ডের শেষদিকে জেরুজালেমে আয়তন ও জনসংখ্যা সর্বাধিক পর্যায়ে পৌছে যা ২০ শতকের পূর্বে কমবে না। সে সময়ে ঐ নগরে প্রায় ৭০,০০০ থেকে ১০০০,০০০ মানুষ বসবাস করতেন।

ইহুদি-রোমান যুদ্ধ

৬৬ খ্রীষ্টাব্দে রোমান যুদাহ প্রদেশের ইহুদি জনগণ রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, যাকে আমরা প্রথম ইহুদি-রোমান যুদ্ধ বা মহা বিদ্রোহ বলে জানি। তখন ইহুদি বিদ্রোহ প্রতিরোধের প্রধান কেন্দ্র ছিল জেরুজালেম। অস্বস্তিকর পাঁচ মাসের অবরোধের ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যত রোমান সম্রাট তিতুস জেরুজালেম পুনর্দখল করেন এবং ৭০ খ্রীষ্টাব্দে জেরুজালেমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেন। দ্বিতীয় গীর্জা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়, অবশিষ্ট ছিল বৃহদাকার বহিঃ দেয়াল যা এসপ্লানেডকে সাপোর্ট দিত যে এসপ্লানেডের উপরে গীর্জাটি দাঁড়িয়েছিল, তার একটি অংশ ওয়েস্টার্ন ওয়াল নামে পরিচিত ছিল। তিতুসের বিজয়কে তিতুস গেট নির্মানের দ্বারা স্মরণীয় করে রাখা হয়। এই বিজয় ফ্ল্যাভিয়ান ডাইনাস্টিকে সাম্রাজ্যের উপর দাবি প্রতিষ্ঠার অধিকার প্রদান করে। জেরুজালেমের পতনকে উদযাপনের জন্য রোমে একটি বিজয় উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে সুপরিচিত তিতুস তোরণসহ দুটি বিজয় তোরণ নির্মিত হয়েছিল। গীর্জার ধনসম্পদ লুটের ঘটনাও প্রদর্শন করা হয়েছিল।

রোমান কলোনি “আলিয়া ক্যাপিটোলিনা” হিসেবে পরবর্তীকালে জেরুজালেমকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ও পুনর্গঠিত করা হয়। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় বিদেশি রীতিনীতির প্রচলন করা হয় এবং ইহুদি জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। ১৩২ খ্রীষ্টাব্দে সংঘটিত বার কোখবা বিদ্রোহের কারণে আলিয়া ক্যাপিটোলিনার নির্মাণকাজ করা হয়েছিল বলে বিবেচনা করা হয়। আগেভাগে বিজয়ের ফলশ্রুতিতে সিমোন বার কোখবার নেতৃত্বে ইহুদিরা তিন বছরের জন্য যুদাহের অধিকাংশ এলাকা নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করে তবে তারা জেরুজালেম নিয়ন্ত্রণের দাবি করেছিল কিনা, তা অনিশ্চিত।

পুরাতাত্ত্বিক গবেষণায় বার কোখবার নগরায়ণের কোন প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। হাড্রিয়ান একটি বিধ্বস্ত সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়ে বিদ্রোহ দমন করেন, প্রায় ৫ লক্ষাধিক ইহুদি নিধন করে একটি রোমান কলোনি হিসেবে নগরটির পুনর্গঠন করেন। জেরুজালেম এলাকা থেকে ইহুদিদের বহিষ্কার করা হয় এবং নগরে প্রবেশ করলে মৃত্যু নিশ্চিত এই মর্মে ইহুদিদের জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে ব্যতিক্রম ছিল তিষা বা’ভ দিনটি - যেদিন ইহুদি সম্প্রদায় উভয় গীর্জা ধ্বংসের জন্য শোক পালন করেন।

লেইট এন্টিকুইটি সময়কাল

লেইট রোমান যুগ

লেইট রোমান শাসনামলের আলিয়া ক্যাপিটোলিনা রোমের একটি কলোনি বা উপনিবেশ ছিল - যেখানে সবধরনের প্রতিষ্ঠান ও প্রতীকের সমারোহ ছিল, ছিল ফোরাম এবং রোমান দেবদেবীর মূর্তি। নগরের প্রধান কর্মযজ্ঞটি হাড্রিয়ান প্রধান কার্ডো ও ডেকুমানাস জংশনে আয়োজন করেন, যে স্থানটি বর্তমানে ক্ষুদ্র মুরিস্তান নামে অভিহিত। জুপিটার ক্যাপিটোলিনিয়াসে তিনি বিশালাকারের একটি গীর্জা নির্মাণ করেন পরবর্তীকালে যেটি চার্চ অফ দি হলি সিপালচার হয়েছিল। নগরটিতে কোন দেয়াল ছিল না, রোমের দশম সেনাবাহিনীর ৩০০০-৬০০০ সদস্যের একটি গ্যারিসন নগরের সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করত। পরবর্তী দুই শতাব্দীকাল নগরটি তুলনামূলক সাধারণ রোমান নগর হিসেবে অস্তিত্বশীল ছিল।

গিবাত রামের নিকটে মানাহতে রোমের সেনাবাহিনীর জন্য একটি সমাধিস্থল, রোমান ভিলাসাত আইন ইয়েল ও রামাত রাচেল এবং দশম সেনাবাহিনীর একটি বড় চুল্লী রয়েছে, সবগুলোই আধুনিক জেরুজালেমের সীমার অভ্যন্তরে। আকলিয়া ক্যাপিটোলিনার পার্শ্ববর্তী পল্লী এলাকার সকল চিহ্ন রোমান প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত। বিলম্বিত রোমান যুগে রোমের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নাগরিকবৃন্দ অত্র এলাকায় বসবাস করতেন। নগরে তখনও ইহুদি প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না রোমান প্রদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাইজেন্টাইন কালপর্ব

 

রোমান সাম্রাজ্য খ্রীষ্টীয় প্রভাবিত হওয়ার পরে জেরুজালেম খ্রীষ্টীয় প্রার্থনা-বন্দনার একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ৩১২ খ্রীষ্টাব্দে আকাশে একটি ক্রস চিহ্ন দেখার পরে কনস্টানটাইন দি গ্রেট খ্রীষ্টধর্মকে আনুকূল্য প্রদর্শন শুরু করেন, খ্রীষ্টধর্মকে বৈধতাদানের জন্য এডিক্ট অফ মিলানে স্বাক্ষর করেন এবং তার মা হেলেনাকে যীশুর সমাধি অনুসন্ধানের জন্য জেরুজালেমে প্রেরণ করেন। হেলেনা তীর্থযাত্রীদের সাথে জেরুজালেম ভ্রমণ করেন এবং যীশু যেখানে ক্রুশবিদ্ধ, সমাহিত ও পুনরুত্থান করেন, তা অনুসন্ধান করেন। ৩৩৫ খ্রীষ্টাব্দে যেখানে হলি সিপালচার চার্চ নির্মিত হয় তা তিনি খুঁজে পান। ট্রু ক্রস বা সত্যি ক্রস খুঁজে পান বলে তিনি দাবি করেন। বাইজেন্টাইন কালপর্বে প্রাপ্ত সমাধিগুলো ছিল খ্রীষ্টানদের, যাতে বোঝা যায়, বাইজেন্টাইন যুগে জেরুজালেমের অধিবাসীরা শুধুমাত্র খ্রীষ্টান ছিল।

৫ম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বদিক, বর্তমান নামীয় কনস্টান্টিনোপল থেকে নগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শাসন করা হতো। কয়েক দশকের মধ্যে জেরুজালেম বাইজেন্টাইন থেকে পারস্য শাসনাধীনে চলে আসে পরে আবার রোমান-বাইজেন্টাইন শাসনাধীনে চলে যায়। সাসানিদ দ্বিতীয় খসরু ৭ম শতাব্দীতে সিরিয়া আক্রমণ করেন, তার জেনারেল শাহরবারাজ ও শাহীন প্যালেস্টাইনী ইহুদিদের সহায়তায় জেরুজালেম আক্রমণ করেন, যারা বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়েছিল।

 

৬১৪ খ্রীষ্টাব্দে জেরুজালেম অবরোধ করা হয়, ২১ দিনের বিরামহীন অবরোধ ও যুদ্ধের দ্বারা জেরুজালেম দখল করা হয়। বাইজেন্টাইন ঘটনাপঞ্জিতে দেখা যায়, সাসানিদ এবং ইহুদিরা নগরের বিশেষতঃ মামিলা পুলের প্রায় দশ হাজার খ্রীষ্টানকে হত্যা করে, তাদের স্মৃতিসৌধ ও হলি সিপালচার চার্চসহ অনেক চার্চ ধ্বংস করে। এ বিষয়ে অবশ্য ঐতিহাসিকগণের মধ্যে প্রবল মতবিরোধ রয়েছে। বিজিত নগরগুলো ১৫ বছর ধরে সাসানিদদের হাতে ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না বাইজেন্টাইন সম্রাট হেরাক্লিয়াস ৬২৯ খ্রীষ্টাব্দে তা পুনর্দখল করেন।

মধ্য যুগ

প্রাথমিক মুসলিম কালপর্ব

রাশিদুন, উমায়াদ এবং আব্বাসীয় খেলাফত

৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দে জেরুজালেম আরব খেলাফতের প্রথম আবিষ্কার ছিল; ঐ সময়ের আরবীয় ঐতিহাসিকগণের মতে রাশিদুন খলিফা উমর ইবনে আল-খাত্তাব আনুগত্য প্রদর্শন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ও প্রার্র্থনা করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে ঐ নগরে যান। উমর ইবনে আল-খাত্তাব নগরে ইহুদিদের ফিরে আসবার ও স্বাধীনভাবে বসবাসের অনুমতি দেন। রোমান ও বাইজেন্টাইন কর্তৃক ধ্বংসযজ্ঞের প্রায় তিন শতাব্দী পরে এ ঘটনা ঘটে।

মুসলিম শাসনের প্রথম শতকে বিশেষতঃ উমায়াদ বংশের আমলে (৬৫০-৭৫০) নগরটির অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। ৬৯১-৬৯২ খ্রীষ্টাব্দে টেম্পল মাউন্টের উপরে মসজিদ বাদ দিয়ে রকের ডোম তৈরি করা হয়। এটি একটি পুণ্যস্থান, ভিত্তিপ্রস্তরকে যা পবিত্র করে।

৭ম শতকের শেষ ও ৮ম শতকের শুরুতে উমায়াদ শাসনামলে কম্পাউন্ডের দক্ষিণ প্রান্তে আল-আকসা মসজিদও তৈরি করা হয়। পবিত্র কোরআন শরীফে একই নামের একটি মসজিদের উল্লেখ করা হয়েছে, মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর রাতের ভ্রমণে যা পরিদর্শন করেছিলেন। কোরআনে জেরুজালেমকে অন্য কোন নামে উল্লেখ করা হয়নি এবং আল-আকসা মসজিদের সঠিক অবস্থান কোরআনে উল্লেখ করা হয়নি। কতিপয় পন্ডিত এ যুক্তিকে প্রতিহত করে বলেন, কোরআনে উল্লিখিত আল-আকসা মসজিদ ও জেরুজালেমের টেম্পল মাউন্টের মধ্যকার সংযোগ সম্পর্কিত বিষয়টি ছিল উমায়াদ আমলের একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা যার লক্ষ্য ছিল মক্কার পবিত্রতার মাহাত্ম্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, মক্কা যখন তাদের শত্রু আব্দুল্লাহ আল যুবায়ের দ্বারা শাসিত হয়েছিল।

আব্বাসীয় যুগ (৭৫০-৯৬৯)

সাধারণভাবে প্রাথমিক মুসলিম আমলে সবচেয়ে কম লিখিত হয়। টেম্পল মাউন্ট এলাকা ভবন তৈরির কেন্দ্র ছিল বলে সুপরিচিত ছিল, ভূমিকম্পে ভবন ধ্বংস হলে আবার তা মেরামত করা হতো।

ভূগোল বিশারদ ইবনে হাওকাল ও আল-ইশতাখরি (১০ম শতাব্দী) জেরুজালেমকে প্যলেস্টাইনের সর্বাধিক উর্বর প্রদেশ বলে অভিহিত করেছেন, যেখানে জেরুজালেমে জন্মগ্রহন করা ভূগোল বিজ্ঞানী আল-মুকাদ্দাসি (জন্ম ৯৪৬) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে দি বেস্ট ডিভিশনস্ ইন দ্য নলেজ অফ দ্য ক্লাইমসে এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মুসলিম শাসনামলে রাজধানী দামেস্ক, বাগদাদ ও কায়রো যে ধরনের মর্যাদা পেয়েছিল, জেরুজালেম সে জাতীয় রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক মর্যাদা লাভ করতে পারেনি। বায়াত আল-মুকাদ্দাসির আরবি নাম থেকে আল-মুকাদ্দাসি তার নাম গ্রহণ করেছিলেন, ভাষাগতভাবে যা হিব্রু ভাষায় বেইত হা মিকদাস, পবিত্র গৃহ এর সমার্থক ছিল।

ফাতিমীয় কালপর্ব

প্রাথমিক আরব যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মীয় সহিষ্ণুতা। তবে ১১ শতকের শুরুতে মিশরীয় ফাতিমিদ খলিফা আল-হাকিম বি আমর আল্লাহ সকল চার্চ ধ্বংসের নির্দেশ প্রদান করেন। ১০৩৩ খ্রীষ্টাব্দে আরেকটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয় যাতে আল-আকসা মসজিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফাতিমীয় খলিফা আলী-আজ-জাহির ১০৩৪-১০৩৬ খ্রীষ্টাব্দে তা পুনর্নির্মাণসহ মসজিদটিকে সম্পূর্ণ নান্দনিকভাবে গড়ে তোলেন। মূল অংশ ক্রমান্বয়ে কমে পনেরটি থেকে সাতটিতে নেমে আসে। আজ-জাহির কেন্দ্রীয় হল ও সরু পথের ৪টি খিলানে ঢাকা পথ তৈরি করেন, যেগুলো মসজিদটির ভিত্তি হিসেবে কাজ করত। কেন্দ্রীয় সরু পথটি অন্যান্য সরু পথের তুলনায় দ্বিগুণ প্রশস্ত করা হয় এবং বৃহদাকার একটি ত্রিকোণাকার ছাদ যার উপরে কাঠের তৈরি গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছিল। পারস্যের ভূগোলবিদ নাসির খুসরো ১০৪৭ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে আল আকসা মসজিদ পরিদর্শন করে তার বিবরণ দেন:

হারাম এলাকাটি (মহৎ পুণ্যস্থান) নগরের পূর্বদিকে অবস্থিত এবং এই কোয়ার্টারের বাজার থেকে একটি নান্দনিক পথ দিয়ে আপনি এ এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনআপনার ডানদিকে দুটো বিশাল স্তম্ভ (রিয়াক) পাবেন, যার প্রতিটি ২৯টি মার্বেল পিলার দ্বারা তৈরি, যার কেন্দ্র ও ভিত্তি রঙিন মাার্বেলে সজ্জিত এবং জোড়াগুলো সীসা দ্বারা যুক্ত। ধনুকাকৃতির খিলানগুলোর উপরে পিলার যেটি সিমেন্ট বা চুন-বালুর মিশ্রণ ছাড়া পাথর দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। প্রতিটি খিলান অনধিক পাঁচ বা ছয়টি পাথরের ব্লক দিয়ে তৈরি। এসকল স্তম্ভের সারি মাকসুরাহ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

সেলজুক কালপর্ব

আজ-জাহিরের উত্তরাধিকার আল-মুস্তানসির বিল্লাহের অধীনে ফাতিমীয় খেলাফত ভঙ্গুরতা ও পতনের দিকে ধাবিত হয়, বিভিন্ন গোষ্ঠি-উপগোষ্ঠি কায়রোতে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তুরস্কেও জনৈক যুদ্ধবাজ - আটসিজ ইবনে উভাক ১০৭১ খ্রীষ্টাব্দে জেরুজালেম দখল করেন, মধ্য প্রাচ্যে সেলজুক তুর্কী সম্প্রসারণকল্পে তিনি সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনের অধিকাংশ এলাকা অবরোধ করে রাখেন। তুর্কীরা যেহেতু গোঁড়া সুন্নী ছিলেন, তারা কেবলমাত্র ফাতিমীয়দের বিরোধী ছিলেন না, অসংখ্য শিয়া মুসলিমের শত্রু ছিলেন, যারা ফাতিমীয় শতবর্ষের পরে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি হারাতে যাচ্ছিল। জেরুজালেমে ১০৭৬ খ্রীষ্টাব্দে শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যে রায়ট সংঘটিত হলে শিয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও নগরের খ্রীষ্টান সম্প্রদায় নিরাপদে ছিলেন এবং খ্রীষ্টান পুণ্যস্থানসমূহে ভ্রমণের অনুমতিপ্রাপ্ত ছিলেন।

বাইজেন্টাইনদের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহ এবং সিরিয়ার অরাজকতা ইউরোপ থেকে তীর্থযাত্রী আগমনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। বিভিন্ন অরাজকতায় চার্চগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেলজুকরা চার্চগুলোর সংস্কার নিষিদ্ধ করেছিলেন। সেসময়ে নগরে তেমন সংখ্যক ইহুদি সম্প্রদায় ছিলেন না।

১০৮৬ খ্রীষ্টাব্দে দামেস্কের সেলজুক আমীর প্রথম তুতুশ আর্তুক বে কে জেরুজালেমের গভর্ণর নিয়োগ করেন। আর্তুক ১০৯১ খ্রীষ্টাব্দে মারা গেলে তার পুত্র সকমেন ও ইলগাজী পিতার উত্তরাধিকার হন। ১০৯৮ সালের আগস্ট মাসে সিরিয়ায় প্রথম ক্রুসেডের ফলে সেলজুকরা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে, ফাতিমীয়রা ভিজিয়ের আল আফদাল শাহানশাহের নেতৃত্বে এ নগরে পা রাখেন এবং অবরোধ করে রাখেন। ছয় সপ্তাহ পরে, সেলজুক গ্যারিসন আত্মসমর্পণ করলে দামেস্কর দিয়ার বেকার ত্যাগের অনুমতিপ্রাপ্ত হয়। ফাতিমীয় ক্ষমতালাভের ফলে অনেক সুন্নী বহিস্কৃত হন, অনেকে হত্যার শিকার হন।

ক্রুসেডার/আয়ূবীয় কালপর্ব

১২ থেকে ১৩ শতাব্দীর মধ্যে কখনও যাকে মধ্যকাল বা জেরুজালেমের ইতিহাসে মধ্য যুগ নামে অভিহিত করা হয়।

 

প্রথম ক্রুসেডার রাজ্য (১০৯৯-১১৮৭)

১০৯৯ খ্রীষ্টাব্দে ক্রুসেডার কর্তৃক দখল হলে জেরুজালেমে ফাতিমীয় নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়। এই দখলের ফলে সকল মুসলিম ও ইহুদি অধিবাসী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। জেরুজালেম তখন জেরুজালেম রাজ্যের রাজধানী হয়। ২২ জুলাই, ১০৯৯ তারিখে বুলিয়নের গডফ্রে জেরুজালেমের লর্ড নির্বাচিত হন, তবে তিনি রয়াল ক্রাউন হতে পারেননি এবং এক বছর পরেই মারা যান। ব্যারন তখন গডফ্রের ভাই বল্ডউইন, কাউন্ট অফ এডেসাকে জেরুজালেমের লর্ডের দায়িত্ব অর্পণ করেন, যাকে ক্রিষ্টমাস ডে’ তে বেথলেহেমের ব্যাসিলিকায় প্যাটরিয়ার্ক ডেইমবার্ট ক্রাউন অর্পণ করা হয়।

পশ্চিম থেকে আগত খ্রীষ্টান অধিবাসীরা যীশুর জীবনের সাথে সম্পৃক্ত প্রধান পূণ্যস্থানগুলো পুনর্গঠন করেন। হলি সিপালচার চার্চকে একটি সুন্দর চার্চ হিসেবে গড়ে তোলা হয় এবং টেম্পল মাউন্টের মুসলিম পূণ্যস্থান ও জামি আল আকসা খ্রীষ্টীয় উদ্দেশ্যে সংস্কার করা হয়। এ সময়ে ফ্রাঙ্কিশ নগরটি দখল করলে নাইট হসপিটালার ও নাইট টেম্পলার এর সামরিক আদেশ শুরু হয়। ১২শ শতাব্দীতে জেরুজালেমে তীর্থযাত্রীদের ভ্রমণ সুবিধার জন্য তা সুরক্ষিত করা হয়েছিল।

 

আয়ূবীয় নিয়ন্ত্রণ

১২৯১ সাল পর্যন্ত জেরুজালেম রাজ্য স্থায়ী হয়েছিল; তবে সালাইউদ্দীন ১১৮৭ সালে জেরুজালেম পুনর্দখল করেন। সালাহউদ্দীন সকল ধর্মের প্রার্থনা ও রীতি-প্রথা পালনের অনুমতি প্রদান করেন।

চেলম এর রাব্বী ইলিজাহের মতানুসারে ১১শ শতাব্দীতে জার্মান ইহুদিরা জেরুজালেমে বসবাস করতেন। বলা হয়, জার্মান ভাষী ইহুদিরা ডোলবার্জার নামক এক তরুণ জার্মানীর জীবন রক্ষা করেছিলেন, এ কারণে প্রথম ক্রুসেডের নাইটগণ জেরুজালেম অবরোধ করতে এসেছিলেন। প্রতিদানের জন্য ডোলবার্জারের পরিবারের একজন প্যালেস্টাইনে ইহুদিদেরকে উদ্ধার করে জার্মান শহর ওরমে নিয়ে গিয়েছিলেন। পবিত্র নগরে জার্মান সম্প্রদায়ের অতিরিক্ত প্রমাণাদি হালাকিক প্রশ্নমালা আকারে ১১শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানী থেকে জেরুজালেমে পাঠানো হয়।

১১৭৩ সালে তুদেলার বেঞ্জামিন জেরুজালেম পরিদর্শন করেন, তিনি এটিকে জ্যাকব, আর্মেনীয়, গ্রীক ও জর্জিয়ান অধ্যুষিত একটি ছোট নগর হিসেবে উল্লেখ করেন। ডেভিডের টাওয়ারের নিচে নগরের প্রান্তে দু’শত ইহুদি বসবাস করতেন। ১২১৯ সালে দামেস্কের আয়ূবীয় সুলতান আল-মোয়াজ্জাম নগরটির দেয়াল উৎপাটন করেন। ফলশ্রুতিতে জেরুজালেম প্রতিরোধহীন হয়ে পড়ে, নগরটির মর্যাদার হানি ঘটে। শান্তি চুক্তির জন্য ক্রুসেডারদের কাছে নগরটি ছেড়ে দেয়ার প্রত্যাশায় আয়ূবীয়রা নগরের দেয়াল ধ্বংস করেন। ১২২৯ সালে মিশরীয় শাসক আল-কামিলের সাথে চুক্তির বদৌলতে, জেরুজালেম জার্মানীর দ্বিতীয় ফ্রেডরিক এর হাতে চলে যায়। ১২৩৯ সালে দশ বছরের যুদ্ধবিরতি শেষ হলে তিনি দেয়ালসমূহ পুনর্গঠন করেন, যেগুলো আবার একই বছরে কেরাকের আমীর আন নাসির দাউদ কর্তৃক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

১২৪৩ সালে জেরুজালেম আবার খ্রীষ্টান শাসনাধীনে আসে এবং দেয়ালসমূহ পুনর্গঠন করা হয়। ১২৪৪ সালে খাওয়ারেজমিয়ান সম্রাট নগরটি দখল করেন তবে ১২৪৭ সালে পুনরায় আয়ূবীয়দের দ্বারা বিতাড়িত হন। ১২৬০ সালে হালাকু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলীয়রা প্যালেস্টাইন অবরোধ করেন। তবে মঙ্গোলীয়রা কখনও প্যালেস্টাইনে ছিল কি-না তা পরিষ্কার নয়, কারণ সেময়ে সেখানে বসতি স্থাপনকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়নি। তবে, রিপোর্টে দেখা যায়, জেরুজালেমে অস্থায়ীভাবে বসবাসরত কিছু ইহুদি পার্শ্ববর্তী গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিল।

মামলুক কালপর্ব

১২৫০ খ্রীষ্টাব্দে আয়ূবীয় রাষ্ট্রের অরাজকতার সুযোগে মামলুকদের উত্থান ঘটে; ক্ষমতায় এসে তারা মামলুক সুলতানী প্রবর্তন করেন, যা বাহরী ও বুরুজি নামে দু’ভাগে বিভক্ত। আয়ূবীয়রা সিরিয়ায় ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেন, কিন্তু ১২৬০ সালে মঙ্গল আক্রমণের পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। মামলুক সেনাবাহিনী মঙ্গলদের পরাজিত করলে পরবর্তীতে মামলুক সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বেবার্স মিশর, লেভান্ত ও হিজাজের শাসক হন। ১২৬০ সাল থেকে ১৫১৬ সাল পর্যন্ত মামলুকগণ জেরুজালেমসহ প্যালস্টাইন শাসন করেন। ১২৬০ পরবর্তী দশকসমূহে তারা ঐ অঞ্চলের অবশিষ্ট ক্রুসেডারদের ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। ১২৯১ সালে আক্রি দখলের ফলে এগুলোর সবশেষটির পতন ঘটে ।

স্থাপত্যশিল্পে মামলুক পৃষ্ঠপোষকতার উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ছিল জেরুজালেম। ৯০ শতাংশ অবশিষ্ট স্থাপনা এ সময়ে নগরে ব্যাপক নির্মাণ যজ্ঞ পরিচালনার প্রমাণ। ১৩তম থেকে ১৫তম শতাব্দী পর্যন্ত তা চলমান ছিল। যে সকল স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল তার মধ্যে ছিল মাদ্রাসা, লাইব্রেরি, হাসপাতাল, কারাভান সরাইখানা, ঝর্ণা ও গণ প্রক্ষালনকক্ষ। অধিকাংশ স্থাপনা টেম্পল অফ মাউন্ট বা হারাম শরীফের চতুর্পার্শ্বে গড়ে উঠেছিল। পুরনো প্রবেশদ্বার জৌলুসহীন হয়ে পড়লে তদস্থলে নূতন গেট তৈরি করা হয়। এ সময়ে টেম্পল মাউন্ট প্লাজার প্রান্তসহ উত্তর ও পশ্চিম দিকের দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্মগুলো পুনর্গঠন করা হয়। আল নাসির মুহাম্মদের আমলে সিরিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত মামলুক আমীর তানকিজ ১৩৩৬-৩৭ সালে সুক আল কটন (সূতার মার্কেট) নামে একটি নূতন মার্কেট এবং বাব আল কটন (কটন গেট) প্রতিষ্ঠা করেন, যা দিয়ে টেম্পল মাউন্ট থেকে এ বাজারে আসা যেত।

পরবর্তী মামলুক সুলতান আল-আশরাফ কাইতবেও এ নগরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। মাদ্রাসা আল-আশরাফিয়ার নির্মান শুরু করে ১৪৮২ খ্রীষ্টাব্দে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। কিছুকাল পরে ১৪৮২ সালে কাইতবে নিকটস্থ সাবিল নির্মাণ করেন। উভয় স্থাপনাই টেম্পল মাউন্টে অবস্থিত। এ নগরে মামলুকদের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ছিল কাইতবে’র সমাধিসৌধ।

ইহুদি উপস্থিতি

রাব্বিনিকাল ইহুদি ঐতিহ্য অনুসারে একটি ঘটনায় দেখা যায়, ১২৬৭ সালে ইহুদি কাতালান ঋষি নাহম্যানিড জেরুজালেম ভ্রমণ করেছিলেন, যেখানে তিনি একটি সিনাগগ তৈরি করেছিলেন, অনেক পরে যেটি তার নামে নামকরণ করা হয়েছিল, বর্তমানে জেরুজালেমের ২য় চালু প্রাচীন সিনাগগ, পরে কারাইত ইহুদিরা ৩০০ বছরের সিনাগগ তৈরি করেন।

ল্যাটিন উপস্থিতি

ফ্রান্সিসান প্রতিষ্ঠিত ফ্রান্সিস অফ আসিসির ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী প্রথম প্রাদেশিক শাসক ছিলেন তার ভাই ইলিয়া। ১২১৯ সালে প্রতিষ্ঠাতা নিজে এলাকা পরিদর্শন করে মুসলিমদের কাছে শত্রু নয় বরং ভাইয়ের বেশে খ্রীষ্টধর্মের মাহাত্ম্য প্রচার শুরু করেন। এ মিশনের এক পর্যায়ে মিশরের সুলতান মালিক আল-কামিলের সাথে সাক্ষাৎ হয়, যিনি তার অস্বাভাবিক আচরণে বিস্মিত হন। পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রান্সিসান প্রদেশ সাইপ্রাস, সিরিয়া, লেবানন এবং পবিত্র স্থান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। আক্রি দখলের পূর্বে (১৮ মে, ১২৯১) আক্রি, সিদন, এ্যান্টিওক, ত্রিপলী, জাফা ও জেরুজালেম এলাকায় ফ্রান্সিসানের খ্রীষ্টান ভিক্ষুদের উপস্থিতি ছিল।

সাইপ্রাস থেকে ল্যাটিন রাজত্বের শেষে তারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল, খ্রীষ্টীয়ান সরকার ও মিশরের মামলুক সুলতানের ভাল রাজনৈতিক সম্পর্কের অজুহাতে ফ্রান্সিসানগণ জেরুজালেম ফিরে যাবার পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৩৩৩ সালে ফরাসী ফ্রায়ার রজার গুয়েরিন মাউন্ট জিওনের উপরস্থ সিনাকল (যে প্রকোষ্ঠে সর্বশেষ নৈশভোজ হয়েছিল) কিনতে সমর্থ হন এবং ক্রীত জমিতে নেপলের রাজা ও রাণী প্রদত্ত অর্থে ফ্রায়ারদের জন্য একটি আশ্রম/মঠ নির্মাণ করেছিলেন। পোপের দুটো আজ্ঞাপত্র - গ্রাটিয়াস আগিমাস ও নুপার ক্যারিসিমা, তারিখ: ২১ নভেম্বর, ১৩৪২, পোপ ষষ্ঠ ক্লিমেন্ট অনুমোদন করে একটি নূতন স্থাপনা নির্মাণ করেন যেগুলো পবিত্র মাটিতে (কাস্টডিয়া টেরা স্যাঙ্ক) ফ্রান্সিসান হাজত (কাস্টডি) নামে পরিচিত ছিল।

যে-কোন অর্ডারার প্রদেশ থেকে আগত ফ্রায়াররা পিতার আইনের অধীনে মাউন্ট জিওনের উপরে প্রতিষ্ঠিত আশ্রম জেরুজালেমে ছিল। সিনাকলে, হলি সিপালচার চার্চে এবং বেথলেহেমের নেটিভিটির ব্যাসিলিকায় তাদের মুখ্য কাজ ছিল ঐ সকল খ্রীষ্টান পুণ্যস্থানে উপাসনামূলক জীবন নিশ্চিত করা এবং পশ্চিম থেকে আগত তীর্থযাত্রী, মিশর, সিরিয়া ও লেবাননে আগত ইউরোপীয় বণিকদেরকে আধ্যাত্মিক সহায়তা যোগান দেয়া। পূর্বদেশীয় খ্রীষ্টান ওরিয়েন্টাল সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপনও তাদের উদ্দেশ্য ছিল।

ব্রাদার আলবার্টে ডা সার্তিয়ানো ওরিয়েন্টাল খ্রীষ্টান (গ্রীক, কপ্ট ও ইথিওপিয়ান) ইউনিয়নের জন্য তার ধর্মীয় মিশনে মাউন্ট জিওনের উপরে প্রতিষ্ঠিত আশ্রম ব্যবহার করতেন। রোমে ফ্লোরেন্স কাউন্সিলের সময় (১৪৪০) ব্রাদার আলবার্টে এ কাজ করেছেন। একই কারণে ইথিওপিয়ান খ্রীষ্টান নেগাসের সাথে সাক্ষাতের পথে ব্রাদার গিওভানি ডি ক্যালাব্রিয়া জেরুজালেমে যাত্রাবিরতি করেন (১৪৮২)।

 

১৪৮২ খ্রীষ্টাব্দে ডমিনিকান পুরোহিত ফেলিক্স ফাবরি এভাবে বর্ণনা করেন, “জেরুজালেম হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষের বসবাসের স্থান এবং সবধরনের ঘৃণার সমাহার”। ঘৃণ্য বা পিশাচদের মধ্যে সারাকেন, গ্রীক, জ্যাকোবাইট, আবিসিনিয়ান, নেস্টোরিয়ান, আর্মেনিয়ান, জর্জিয়ান, মারোনাইট, টার্কোমান, বেদুইন, আসাসীন, দ্রুজ, মামলুক এবং ইহুদিরকে তিনি তালিকাভুক্ত করেন। তাদেরকে তিনি “সবার জন্য অভিশাপ” হিসেবে বর্ণনা করেন। তবে বোহেমিয়ার নামক একজন খ্রীষ্টান তীর্থযাত্রী যিনি ১৪৯১-১৪৯২ সময়কালে জেরুজালেম পরিদর্শন করেছেন তিনি তার গ্রন্থ “জার্নি টু জেরুজালেম” এ লিখেছেন, “খ্রীষ্টান ও ইহুদিরা চরম দারিদ্রের মধ্যে জেরুজালেমে বসবাস করতো এবং তাদের নানা ধরনের বঞ্চনার কারণে খ্রীষ্টানরা সংখ্যায় কম ছিল, তবে ইহুদি ছিল অনেক এবং মুসলিমরা বিভিন্নভাবে তাদেরকে হয়রানি করতো। খ্রীষ্টান ও ইহুদিরা ভিক্ষুকের মত বেশভূষায় তারা উপযুক্ত বলে বিবেচনা করতো। মুসলিমরা জানত যে, ইহুদিরা মনে করে এবং বলে এ নগরটি পবিত্রস্থান - যা তাদের জন্যই উৎসর্গীকৃত এবং যে সকল ইহুদি জেরুজালেমে বাস করে তারা যে-কোন স্থানের ইহুদির কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত কারণ মুসলিম প্রদত্ত সকল ধরনের দুর্যোগ ও বঞ্চনা সত্ত্বেও তারা ঐ স্থান ত্যাগে রাজি ছিল না। শুধুমাত্র ল্যাটিন খ্রীষ্টানরা প্রশান্ত হৃদয়ে এখানে আসে এবং মনে করে এ দেশের সবকিছু রোমের চার্চের কর্তৃত্বাধীন।

প্রাথমিক আধুনিক যুগ

প্রাথমিক অটোমান কালপর্ব

১৫১৬ খ্রীষ্টাব্দে বৃহত্তর সিরিয়াসহ জেরুজালেম অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে এবং বাসিন্দারা বাদশাহ্ সুলাইমানের প্রবর্তিত সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন। সুলাইমান নগরে দেয়াল নির্মাণ ও সংস্কার করেন, যেগুলো সাক্ষ্য হিসেবে এখনও জেরুজালেমের পুরনো শহরে বিদ্যমান রয়েছে। প্রাচীন বিভিন্ন কারুকাজে দেয়ালগুলো খোদাই/সজ্জিত করা হত। সুলাইমানের শাসনামল ও পরবর্তী অটোমান সুলতানের আমলে একটি ধর্মীয় শান্তির যুগ ফিরে এসেছিলখ্রীষ্টান, ইহুদি ও মুসলিম সবজাতিই ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করতেন: একই সড়কে ইহুদি মন্দির, চার্চ ও মসজিদ দেখা যেত। সকল ধর্মের জন্য নগরটি উন্মুক্ত ছিল, যদিও সুলাইমান পরবর্তীকালে ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার কারণে আর্থিক দৈন্য দেখা দিয়েছিল।

ল্যাটিন উপস্থিতি

 

তুর্কীরা ১৫৫১ সালে সিনাকল ও আশপাশের আশ্রম থেকে ফ্রায়ারদের উৎখাত করে। তবে নগরের উত্তর-পশ্চিম অংশের নানদের নিকট থেকে তাদেরকে জর্জিয়ান আশ্রম ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এটি পরে জেরুজালেমে কাস্টডির নূতন কেন্দ্র এবং ল্যাটিন সাধুদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল (আরবিতে দায়রা আল আতীন নামে পরিচিত)।

ইহুদি উপস্থিতি

১৭০০ খ্রীষ্টাব্দে যুদাহ হি হাসিদের নেতৃত্বে একটি সুসংগঠিত ইহুদি অভিবাসী দল ইসরায়েলের মাটিতে পা রাখেন। তার শিষ্যরা হুর্ভা ইহুদি মন্দির তৈরি করেন, যেটি ১৮ শতক থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত জেরুজালেমের প্রধান গোত্রসমূহ ও প্রধান ইহুদি মন্দির হিসেবে সেবা প্রদান করেছে। আরব শাসকদের দ্বারা ধ্বংস হলেও ইহুদি মন্দিরগুলো ২০১০ সালে পুনর্নির্মিত হয়।

স্থানীয় বনাম কেন্দ্রীয় ক্ষমতা

মেহমুদ পাশা কুর্দ বায়রাম প্রবর্তিত দুঃসহ কর নির্ধারণ নীতি ও সামরিক অভিযানের কারণে জেরুজালেমের প্রধান গোত্রসমূহ, কৃষকসমাজ ও বেদুইনরা অটোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, যাকে নকিব আল আশরাফের বিদ্রোহ বলে আখ্যায়িত করা হয়। নকিব আল আশরাফ ১৭০৩-১৭০৫ সালের মধ্যে নগরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে অটোমান সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। জেরুজালেমের আল ওয়াফাইয়া আল হুসাইনিয়া বংশের ক্ষমতার ক্রমাবনতির ফলে বিদ্রোহ ত্বরান্বিত হয় এবং আল হুসাইনিয়া পরিবার নগরের অন্যতম নেতৃস্থানীয় পরিবারে রূপলাভ করে। বিদ্রোহের পরে জেরুজালেমে হাজার হাজার অটোমান সৈন্য গ্যারিসনে রাখা হয়, এ কারণে স্থানীয় অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে।

লেইট আধুনিক যুগ

লেইট অটোমান কালপর্ব

১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অটোমান সাম্রাজ্য ধ্বসে পড়তে শুরু করে, নগরটি ছিল একটি মরা নদীর মত, জনসংখ্যা ছিল অনধিক ৮,০০০ মাত্র। নগরটি তখন ছিল যারপরনাই মিশ্র অধিবাসীর জনপদ - যুদাই, খ্রীষ্টান ও মুসলিম। জনগণ চারটি প্রধান বৃহৎ কমিউনিটিতে (ইহুদি, খ্রীষ্টান, মুসলিম ও আর্মেনীয়) বিভক্ত হয়। এর প্রথম তিনটি কমিউনিটি তাদের প্রকৃত দেশের ধর্মীয় সংযোগ অনুসারে অসংখ্য্য দল, উপদলে বিভক্ত হয়। হলি সিপালচার চার্চ যথাযথভাবে গ্রীক অর্থোডক্স, ক্যাথলিক, আর্মেনীয়, কপটিক ও ইথিওপিয়া চার্চে ভাগ হয়ে যায়। এ সকল গ্রুপের মধ্যে অসন্তোষ এতই গভীর ছিল যে, এক জোড়া নিরপেক্ষ মুসলিম পরিবার ঐ সকল পুণ্যভূমি রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সেসময়ে কমিউনিটিগুলো প্রাথমিক পূণ্যস্থানে বসবাস করত। মুসলিম সম্প্রদায় হারাম আশ শরীফ বা টেম্পল মাউন্ট (উত্তর-পূর্ব) ঘিরে বসবাস করতেন। খ্রীষ্টানরা হলি সিপালচার (উত্তর-পশ্চিম) চার্চের নিকটে বসবাস করতেন, ইহুদিরা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের (দক্ষিণ-পূর্ব) উপরে ঢালু প্রান্তে বাস করতেন এবং আর্মেনীয়রা জিওন গেটের (দক্ষিণ-পশ্চিম) নিকটে বসবাস করতেন। অত্র বিভাজন কোনভাবেই নিরঙ্কুশ ছিল না, যদিও বৃটিশ আমলে (১৯১৭-১৯৪৮) চারটি অংশের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল।

প্রথমটি ছিল মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ই্উরোপ থেকে আগত ইহুদি অভিবাসীদের ধ্বংস ও ক্ষরণ। প্রথম অভিবাসীগণ ছিলেন গোঁড়া ইহুদি: কিছু ছিলেন বয়ষ্ক ব্যক্তি, যারা মৃত্যুবরণ করতে এবং মাউন্ট অফ অলিভে সমাহিত হবার জন্যই জেরুজালেমে এসেছিলেন। অন্যরা ছিল শিক্ষার্থী যারা তাদের পরিবার পরিজনদের সাথে এসে যীশুর আবির্ভাবের অপেক্ষায় ছিলেন। স্থানীয় জনগণের সাথে যুক্ত হয়েছিল নূতন জীবন। একই সময়ে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি নগরে সঙ্কীর্ণ পথের অনুসন্ধান শুরু করেছিল, যাতে করে অটোমান সাম্রাজ্যেও আসন্ন পতনের পরে তাদের প্রতিপত্তি বাড়াতে পারে।

এটি ছিল খ্রীষ্টীয় ধর্মীয় পুনরুজ্জীবন কাল, অনেক চার্চ মুসলিম ও ইহুদিদেরকে খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করতে মিশনারি পাঠাতো, তাদের বিশ্বাস ছিল এর ফলে যীশুর দ্বিতীয় আগমন ত্বরান্বিত হবে।

সবশেষে বলা যায়, ইউরোপীয় উপনিবেশ ও ধর্মীয় উদ্দীপনার মিশ্রণ সাধারণ বাইবেলীয় মাটিতে নূতন বৈজ্ঞানিক স্বার্থ এবং বিশেষ ভাবে জেরুজালেমে একটি নূতন বৈজ্ঞানিক স্বার্থে বর্ণিত হয়েছিল।

পুরাতাত্ত্বিক ও অন্যান্য অনুসন্ধানে কিছু লক্ষণীয় বিষয় উদঘাটিত হয়েছে, যেগুলো জেরুজালেমের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।

১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দে নগরটির আয়তন ছিল মাত্র ১ বর্গকিলোমিটার যা ছিল জনসংখ্যার চাপে জর্জরিত। একারণে নূতন শহর নির্মাণ শুরু হয়েছিল, জেরুজালেমের একাংশ শহরের দেয়ালের বাইরে ছিল। দাবি পূরণে নূতন এলাকার অন্বেষণে রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ একটি কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু করেছিল, জাফা গেট থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে বর্তমানে যেটি রাশিয়ান কম্পাউন্ড নামে পরিচিত। ইহুদিরা প্রথম জেরুজালেম দেয়ালের বাইরে আবাসিক স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছিল, জিওন গেটকে উপেক্ষা করে হিনম ভ্যালীর ওপারে পাহড়ের উপরে একটি ছোট কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছিল। এ স্থাপনাটি মিশকেনত শানানিম নামে পরিচিত, যেটি বিস্তৃত হয়ে অন্যান্য নূতন কমিউনিটিকে পুরণো শহরের পশ্চিম ও উত্তরে বসতি স্থাপনে উৎসাহিত করেছিল। কমিউনিটি যে সময়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছিল, ভৌগোলিকভাবে যুক্ত হয়ে নিউ সিটি নামে পরিচিতি পেয়েছিল।

১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দে ইয়েমেন থেকে প্রায় ১৫০টি ইহুদি পরিবার জেরুজালেমে পৌঁছে। প্রথমদিকে জেরুজালেমের ইহুদিরা তাদেরকে গ্রহণ করেনি এবং তারা সুইডিশ-আমেরিকার কলোনির খ্রীষ্টান সহায়তায় একান্ত দুঃস্থ অবস্থায় বসবাস করতো। সুইডিশ-আমেরিকার কলোনির খ্রীষ্টানরা তাদেরকে গ্যাডাইট নামে অভিহিত করত। ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে ইয়েমেনীয়রা সিলওয়ানে চলে যায়।

বৃটিশ ম্যান্ডেট কালপর্ব

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বৃটিশরা মধ্যপ্রাচ্যে অটোমানদের পরাস্ত করে এবং প্যালেস্টাইন বিজয়ের ফলে ঐ সাম্রাজ্য বিভক্তির পথে অগ্রসর হয়। ইজিপশিয়ান এক্সপেডিশনারি ফোর্সের কমান্ডার ইন চীফ জেনারেল স্যার এডমান্ড এ্যালেনবি ১১ ডিসেম্বর, ১৯১৭ সালে পবিত্র নগরকে সম্মান দেখিয়ে পায়ে হেঁটে জেরুজালেমে প্রবেশ করেছিলেন।

১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে জেনারেল এ্যালেনবি অটোমানদের কাছ থেকে জেরুজালেম ছিনিয়ে নেন, নূতন শহরটি প্রতিবেশি ও কমিউনিটির কাছে নূতন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র জাতিসত্তার চোখে বিষয়টিকে গ্রহণ করেন। বৃটিশ রাজত্বে এ ধারা অব্যাহত থেকে জেরুজালেমের নিউ সিটি পুরণো শহরের দেয়ালের বাইরে গড়ে ওঠে এবং জেরুজালেমের পুরণো শহর দরিদ্রতর অবস্থা থেকে কিছুটা ভাল অবস্থায় বেড়ে ওঠে। শহরের প্রথম বৃটিশ সামরিক গভর্নর স্যার রোনাল্ড স্টর্স শহরে নূতন ভবনের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে একটি নগর পরিকল্পনা আদেশ প্রণয়ন করেন যাতে শহরের সম্মুখভাগ বালুপাথর দিয়ে সজ্জিত থাকে এবং শহরটি দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে নজর কাড়ে। বৃটিশ রাজত্বাধীন নগরের সৌন্দর্য বর্ধনে প্রো-জেরুজালেম কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

অটোমান শাসনামলের একটি প্রশ্নবিদ্ধ চাহিদা বৃটিশদের মেটানোর কথা ছিল। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি এবং একটি ট্রামপথ নির্মাণে অটোমান সাম্রাজ্যের মঞ্জুরকৃত ছাড় ছিল - যাতে ২৭ জানুয়ারি, ১৯১৪ তারিখে সিটি অফ জেরুজালেম এবং জনৈক গ্রীক নাগরিক এবং ইউরিপিডিস মাভ্রোম্যাটিক্স স্বাক্ষর করেছিলেন। এ সকল ছাড়ের আওতায় কাজ শুরু হয়নি এবং পরিশেষে বৃটিশ দখলদার বাহিনী তাদের আইনগত বৈধতা দিতে অস্বীকার করে। মাভ্রোম্যাটিক্স দাবি করেন, তার প্রদত্ত সুবিধা আউজা ছাড়ের সাথে যুগপৎ হওয়ায় সরকার ১৯২১ সালে রুটেনবার্গকে পুরস্কৃত করেন এবং তিনি তার আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। প্রথম দিকে বৃটিশ কর্তৃক ধ্বংস প্রচেষ্টা সত্বেও মাভ্রোম্যাটিক্স ছাড় হলি সিপালচার চার্চেও ২০ কি: মি: পরিধিতে জেরুজালেম ও অন্যান্য এলাকা (যেমন: বেথলেহেম) কভার করেছিল।

১৯২২ সালে লীগ অফ ন্যাশনস্ লুসান সম্মেলনে যুক্তরাজ্যকে প্যালেস্টাইন, প্রতিবেশি ট্রান্সজর্ডান শাসনের দায়িত্ব অর্পণ করে। ইরাককে এখানে বাদ রাখা হয়েছিল। ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে নগরের মোট জনসংখ্যা ৫২,০০০ থেকে ১,৬৫,০০০ এ পৌঁছে, যাদের দুই-তৃতীয়াংশ ইহুদি ও এক-তৃতীয়াংশ আরব (মুসলিম ও খ্রীষ্টান) ছিল। জেরুজালেমে আরব খ্রীষ্টান, মুসলমান ও ক্রমবর্ধমান ইহুদি জনগোষ্ঠির মধ্যকার সম্পর্ক অবনতিশীল ছিল বলে অশান্তি অব্যাহত ছিল। ১৯২০ ও ১৯২৯ সালে যথাক্রমে সংঘটিত নেবী মুসার রায়ট ও প্যালেস্টাইন রায়টে জেরুজালেম অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বৃটিশ শাসনাধীনে নগরের পশ্চিম ও উত্তরাংশে নূতন বাগিচা গড়ে তোলা হয় এবং উচ্চ শিক্ষার পাদপীঠ যেমন হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। জেরুজালেমের মাউন্ট স্কোপাসে দুটো নূতন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান: হাদাশা মেডিকেল সেন্টার ও হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সময়কালে সহিংসতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৪৬ সালের জুলাই মাসে নিষিদ্ধ জিওনিস্ট গ্রুপ ইরগুনের সদস্যরা কিং ডেভিড হোটেলের একাংশ বিস্ফোরণে ধূলিস্মাৎ করে, যেখানে বৃটিশ সেনারা অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছিল। ঐ বিস্ফোরণে ৯১ জন বেসামরিক লোক প্রাণ হারান।

২৯ নভেম্বর, ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অনুমোদিত একটি প্ল্যানে প্যালেস্টাইনকে দুটো রাষ্ট্রে বিভক্ত করা হয়: একটি ইহুদি অন্যটি আরব। প্রতিটি রাষ্ট্রকে তিনটি মুখ্য কাজ, সীমানা বহির্ভূত ক্রসরোড দ্বারা সংযোগ এবং জাফায় একটি আরব এনক্লেভ তৈরি সম্পন্ন করতে দায়িত্ব দেয়া হয়। পৃথক লিখিত চুক্তি হিসেবে সম্প্রসারিত জেরুজালেম আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকবে।

যুদ্ধ এবং ইসরায়েল ও জর্ডানের বিভক্তি (১৯৪৮-১৯৬৭)

১৯৪৮ সালের যুদ্ধ

বিভক্তির পরে জেরুজালেমের জন্য যুদ্ধে অনেক বৃটিশ সামরিকসহ ইহুদি ও আরব বেসামরিক মানুষ মারা যায়। ১৯৪৮ সালের মার্চের শেষদিকে ঠিক বৃটিশ প্রত্যাহারের পূর্বে, কোনরূপ হস্তক্ষেপে ইংরেজদের বিরক্তির প্রেক্ষাপটে আরবদের কর্তৃক জেরুজালেমে যাবার সড়ক কেটে ফেলা হয়, নগরের ইহুদিদেরকে অবরোধ করে রাখা হয়। পরিশেষে উক্ত অবরোধ শেষ হলেও উভয় পক্ষের অনেক বেসামরিক লোক হতাহত হয়। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পূর্বে ১৯৪৮ সালের মে মাসে বৃটিশ শাসনের অবসান ঘটে।

১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে আরব ও ইহুদি জনগণের ব্যাপক স্থানান্তর ঘটে। বেনী মরিসের মতে, উভয় পক্ষের প্রতি মোবান্দ মিলিশিয়া সহিংসতায় পুরনো শহরের ৩৫০০ (অত্যন্ত গোঁড়া) এর মধ্যে ১৫০০ ইহুদি একটি ইউনিট হিসেবে পশ্চিম জেরুজালেমে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল সেনারা তুলনামূলক জনবসতিপূর্ণ আরব পল্লী লিফটা (বর্তমানে জেরুজালেমের সীমানাধীন) দখল করে এবং এর অধিবাসীদেরকে ট্রাকে ভর্তি করে পূর্ব জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়া হয়। দেও ইয়াসীন, ইন কারেম ও মালচা গ্রামগুলো এবং জেরুজালেমের পুরনো শহরের জনপদ তালবিয়া, কাটামন, বাকা, মামিলা এবং আবু তোর ইসরায়েলী দখলে চলে যায়। এসকল পল্লীর বাসিন্দাদেরকে জবরদস্তিমূলকভাবে বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। ইসরায়েলী ঐতিহাসিক ও প্যালেস্টাইনী ঐতিহাসিক যথাক্রমে বেনী মরিস ও ওয়ালিদ খালিদির মতে, সহিংসার মধ্যে ব্যাপক বহিষ্কার ও প্রাণহানি ছিল।

১৯৪৮ সালের মে মাসে ওয়াইএমসিএ ভবনের বাইরে মার্কিন কনসাল থমাস. সি. ওয়াশন আততায়ীর হাতে নিহত হন। চার মাস পরে জেরুজালেমের কাটামন জেলায় জাতিসংঘের মধ্যস্থতাকারী কাউন্ট বার্নাডোটকে চরমবাদি ইহুদিরা গুলি করে হত্যা করে।

জর্ডান ও ইসরায়েলর বিভক্তি (১৯৪৮-১৯৬৭)

প্যালেস্টাইন বিভাজন পরিকল্পনার ১৯৪৭ সালের জাতিসংঘ প্রস্তাবে জেরুজালেমকে আন্তর্জাতিক প্রশাসনের আওতায় একটি শহর হিসেবে রাখা হয়। শহরটি সম্পূর্ণভাবে আরব রাষ্ট্রসমূহ দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল, শুধুমাত্র একটি মহাসড়ক আন্তর্জাতিক জেরুজালেমকে ইহুদি রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত রেখেছে।

১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পরে জেরুজালেমকে ভাগ করা হয়। নিউ সিটির পশ্চিম অংশ নবগঠিত ইসরায়েল রাষ্ট্র্রের অংশ হয়, অন্যদিকে পূর্বাংশের অর্ধেকসহ পুরনো অংশ জর্ডান দখল করেছিল। ডেভিড গুইনের মতে, ইহুদিদের পুণ্যভূমি বিবেচনা করে জর্ডান অন্যান্য বিষয় আলোচনার সাথে ইহুদিদের তাদের পুণ্যভূমিতে অবাধ যাতায়াতের বিশেষতঃ ওয়েস্টার্ন ওয়াল মাউন্ট অলিভে অবস্থিত ইহুদি সমাধিস্থলে যাতায়াতের আলোচনার জন্য কমিটি ও নিয়োগের অঙ্গীকার লঙ্ঘন করে। যা ১৯৫৯ সালের ৩ এপ্রিল তারিখের জর্ডান ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধ বিরতি চুক্তির অনুচ্ছেদ ৮.২ এর লঙ্ঘন ছিল। জর্ডান সমাধিস্থলে যাতায়াতের নূতন পথ ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করে এবং জর্ডানীয় সেনাদের ব্যবহারের জন্য সমাধিফলক ব্যবহৃত হত।

জেরাল্ড এম, স্টেইনবার্গের মতে জর্ডান ৫৭টি প্রাচীন ইহুদি আশ্রম, লাইব্রেরি এবং পুরনো জেরুজালেমের ধর্মীয় পাঠ কেন্দ্র ধ্বংস করে, তন্মধ্যে ১২টি সম্পূর্ণভাবে ও সমূলে ধ্বংস করা হয়। যেগুলো দন্ডায়মাণ ছিল সেগুলোর প্রবেশ মুখ পরিবর্তিত করা হয়, মানুষ ও পশুপাখি রাখার ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের নিকট পুরনো শহরকে উন্মুক্ত নগর হিসেবে ঘোষণা ও ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করার আবেদন করা হলেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।

১৯৫০ সালের ২৩ জানুয়ারি নেসেট একটি রেজুলেশন পাস করে যে, জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী ছিল।

ইসরায়েল রাষ্ট্র

ইসরায়েলী প্রতিরক্ষা বাহিনী ১৯৬৭ সালে ৬ দিনের যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। মরক্কো কোয়ার্টারের শত সহস্র ঘর-বাড়ি ধূলিস্মাৎ করে বাসিন্দাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। ওয়েস্টার্ন ওয়ালের নিকটে এ স্থলে পরবর্তীকালে একটি পাবলিক প্লাজা নির্মিত হয়। তবে, টেম্পল মাউন্ট কর্তৃপক্ষ ওয়াকফ (ইসলামী ট্রাস্ট) মঞ্জুর করেন এবং পরবর্তীকালে ইসরায়েল ও ওয়াকফ কর্তৃপক্ষ উভয়ে সাইটে ইহুদি প্রার্থনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

অধিকাংশ ইহুদি বিষয়টিকে নগরটির স্বাধীনতা হিসেবে উদযাপন করেন; একটি নূতন ইসরায়েলী ছুটির দিন প্রবর্তিত হয়। উৎসবে জেরুজালেম দিবস (ইরম জেরুজালেম) এবং সুবিখ্যাত অসাম্প্রদায়িক হিব্রু সঙ্গীত “স্বর্ণের জেরুজালেম” জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইসরায়েল রাষ্ট্র বর্তমানে ওয়েস্টার্ন ওয়ালে বিশাল জমায়েতের আয়োজন করে, ইসরায়েলী বিভিন্ন ইউনিট, সেনা কর্মকর্তারা শপথ গ্রহণ করেন। মৃত ইসরায়েলী সেনাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং সাড়ম্বরে ইসরায়েলী স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়। ইহুদি ধর্মীয় উৎসবে ১০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে এবং নিয়মিত উপস্থিত ব্যক্তিগণ দৈনিক প্রার্থনা চালিয়ে যেতে থাকেন। এভাবে ওয়েস্টার্ন ওয়াল একটি পর্যটন স্পটে রূপলাভ করে।

ইসরায়েলী নিয়ন্ত্রণের অধীনে সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে তাদের তীর্থস্থান ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয়। তবে পশ্চিম তীরে গাজা ছিটমহল এলাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে তার ব্যতিক্রম ছিল। আবার রাজনৈতিক কারণে ইহুদিদের জন্য টেম্পল মাউন্ট ভ্রমণ নিষিদ্ধ ছিল। তাদেরকে ছোট ছোট দলে মাউন্ট ভ্রমণের সুযোগ দেয়া হয়, তবে পড়াশোনা বা প্রার্থনা করতে বারণ করা হয়। এভাবে হলি অফ দ্য হলিতে ইহুদিদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হয়। ১৯৬৯ সালে আল-আকসা মসজিদে ভয়াবহ অগ্নি সংযোগের পরে, (অস্ট্রেলীয় মৌলবাদি খ্রীষ্টান ডেনিস মাইকেল রোহান শুরু করেছিল, পরবর্তীকালে তাকে কোর্ট থেকে মানসিক বিকারগ্রস্ত ঘোষণা করা হয়) সম্ভাব্য আরও আক্রমণের জন্য উদ্বেগ দেখা দেয়। ওয়েস্টার্ন ওয়াল টানেলে যাবার জন্য আরব অংশে একটি পথ খুলে দেয়া হলে রায়ট সংঘটিত হয়। ইসরায়েলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পথ খুলে দেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পূর্বসুরী প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেস শান্তির স্বার্র্থে তা স্থগিত রেখেছিলেন (বলেছিলেন ১০০০ বছর অপেক্ষা করা হয়েছে, তাই আরও কিছুদিন অপেক্ষা করা যেতে পারে।)।

বিপরীতভাবে ইসরায়েল ও অন্যান্য রাষ্ট্র টেম্পল মাউন্টে মুসলিম ওয়াকফ কর্তৃক খনন কাজের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয় খনন কাজের কারণে টেম্পল মাউন্টের রেলিকসের ক্ষতি হবে। সলোমনের আস্তাবলের উত্তরাংশে খননের কারণে দক্ষিণের দেয়াল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; তবে ২০০৪ সালে সংঘটিত ভূমিকম্পও পূর্বদিকের দেয়ালকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল।

জেরুজালেমের মর্যাদা একটি চরম বিতর্কিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নগরের পূর্বদিকের সংযোজনকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং অধিকাংশ রাষ্ট্র তেলআবিবে তাদের দূতাবাস পরিচালনা করেছিল। ২০১৮ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গুয়াতেমালা জেরুজালেমে দূতাবাস চালু করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদেও ৪৭৮ নং রেজুলেশনে বলা হয়, নেসেট কর্তৃক ১৯৮০ সালে জেরুজালেম আইন ঘোষণা এবং জেরুজালেমকে চিরকালীন রাজধানী ঘোষণা অবশ্যই বাতিল করতে হবে।

শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ঐ রেজুলেশনে সদস্য রাষ্ট্রদেরকে ঐ শহর থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের পরামর্শ দেয়। রেজুলেশনে পূর্ব জেরুজালেমসহ ১৯৬৭ সালের ইসরায়েলী দখল ও বসতি স্থাপনকে নিন্দা জানানো হয়।

ইসরায়েল যেহেতু ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা প্রতিবেশি সিলনে বসতি স্থাপন করে। ১৯৮০ সালে এরিয়েল শ্যারনের অধীনে গৃহায়ণ মন্ত্রী হার্টেজ সিলন ও পুরনো শহরের মালামালের নিয়ন্ত্রণ লাভের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। যুক্তি দেখায় যে সেগুলো পরিত্যক্ত সম্পত্তি। সন্দেহ দানা বাঁধে যে, কতগুলো লেনদেন বৈধ ছিল না, একটি গবেষণায় অসংখ্য ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়। বিশেষতঃ এফিডেবিটে দেখা যায়, আরবদের বসতিগুলো পরিত্যক্ত, ইহুদি সংস্থাগুলো মামলা করে, কোনরূপ সাইট পরিদর্শন ছাড়াই মামলা গ্রহণ করা হয়। হার্টেজ বলেন, পূর্ব জেরুজালেম এর যুদাই সংগঠন ও কোহানিম সংগঠন ইহুদি বসতি বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে যাদের সাথে ছিল সিলওয়ান ইয়েমেনী পল্লী পুনরুজ্জীবন কমিটি।


 

নোট লিখুন

 

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………।।

 

 

 

ছবি তুলে ০১৭১৬-৬৮১০৪৮ এ Whatsapp করুন এবং প্রাইজ মানি জিতুন

 

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

UCPDC - 600 Bangla

ইউসিপিডিসি-৬০০ ধারা-১ঃ ইউসিপিডিসি-এর প্রয়োগঃ ইউসিপিডিসি এর ২০০৭ সালের সংশোধনী আইসিসি পাবলিকেশন ৬০০ এর বিধি বা ধারাসমূহ (স্ট্যাণ্ড বাই লেটার অব ক্রেডিট সহ) সকল এলসিতে প্রয়োগ হবে। এলসিতে নির্দিষ্ট কোন স্থানে উল্লেখ না করলে তা সকল পক্ষের উপরই কার্যকর হবে। ধারা-২ঃ সংজ্ঞা ঃ অন্য কোন অর্থে ব্যবহার না করলে এই বিধিতে এ্যাডাভাইজিং ব্যাংক বলতে সেই ব্যাংককে বোঝাবে যে ইস্যুইং ব্যাংক এর অনুরোধে ঋণপত্র সুবিধা প্রদান করে। গ্রাহক বলতে সেই পক্ষকে বোঝাবে যার অনুরোধে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়। ব্যাংকিং কর্ম দিবস বলতে সেই দিনকেই বুঝাবে যেদিন ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট স্থানে উক্ত বিধি অনুযায়ী নিয়মিতভাবে তার প্রত্যাহিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। বেনিফিসিয়ারী বলতে সেই পক্ষকে বুঝাবে যার পক্ষে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। কমপ্লাইং প্রেজেণ্টেশন বলতে সেই প্রেজেণ্টেশনকে বুঝাবে যা ঋণের সকল শর্তানুযায়ী করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আদর্শ ব্যাংকিং চর্চার আওতাধীন। কনফার্মেশন বলতে কনফার্মিং ব্যাংক এর পাশাপাশি ইস্যুইং ব্যাংক কর্তৃক সুনির্দিষ্টভাবে একটি কমপ্লাইং প্রেজেণ্টেশনকে অনুমোদন ঝুঝায়। কনফার্মিং ব্যাংক বলতে সেই ব্যাংককে ঝুঝা

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে