Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

HISTORY OF CANAAN

ক্যানান


২য় সহস্র খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে প্রাচীন নিকট প্রাচ্য সভ্যতার দক্ষিণ লেভান্ত অঞ্চলে ক্যানান ছিল সেমিটিক ভাষাভাষী সভ্যতার একটি জনপদ। সর্বশেষ ব্রোঞ্জ যুগের আমার্ণা পিরিয়ডে (১৪তম খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) ক্যানানের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল যেখানে অঞ্চলটিতে মিশরীয়, হিট্টি, মিটান্নি ও অ্যাসিরিয় সাম্রাজ্যের স্বার্থ এক ও অভিন্ন হয়েছিল। ক্যানান সম্পর্কে আমরা আজ যেটুকুই জানি তা অত্র অঞ্চলের টেল হাজর, টেল মেগিডো, এন. এসুর ও গেজের এর পুরাতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে

 
ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে ভূগোল সংশ্লিষ্ট আলোচনায় ক্যানান নামটি দেখা যায়, যার অর্থ প্রতিজ্ঞা বা অঙ্গীকারাধীন ভূমিক্যানানাইট দ্বারা একাধিক আদিবাসি জনগোষ্ঠি বোঝানো হয়েছে যারা দক্ষিণ লেভান্ত বা ক্যানানে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী অথবা গ্রাম্য যাযাবর জণগোষ্ঠি হিসেবে বেড়ে উঠেছিল। বাইবেলে সর্বাধিক ব্যবহৃত আদিবাসি শব্দ হিসেবে ক্যানান শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। বাইবেল বিষয়ক পন্ডিত মার্ক স্মিথ পুরাতাত্ত্বিক উপাত্ত থেকে উল্লেখ করে বলেন যে, “ইসরায়েলী সংস্কৃতি ক্যানানাইট এর সাথে মিলেমিশে একাকার হয়েছে এবং এর থেকেই এর উৎপত্তি হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, “ইসরায়েলী সংস্কৃতি ক্যানানাইট সংস্কৃতি দ্বারা বহুলাংশে প্রভাবিত ছিল।

 
খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ ৫০০ সময়কাল থেকে যারা গ্রীকদের কাছে ফিনিশীয় হিসেবে পরিচিত তারাই পূর্ববর্তীকালে বহু শতাব্দী ধরে ক্যানানাইট হিসেবে পরিচিত ছিলো। এমনকি লেট এ্যান্টিকুইটির সময়কালে যে সব ফিনিশীয় ও ক্যানানাইট ভাষা-ভাষী জনগণ কার্থেজে (৯ম খ্রীষ্ট পুর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত তিউনিশিয়ার তৎকালীন রাজধানী) অভিবাসী হয়েছিলো তথাকার অর্থাৎ উত্তর আফ্রিকার পিউনিকরাও এদেরকে চানানীহিসেবে সম্বোধন করতো।

 

ব্যুৎপত্তি

ইংরেজি শব্দ ‘‘ক্যানান” (১৫০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে উচ্চারিত; স্বরবর্ণের উচ্চারণ ভিন্নতার কারণে) হিব্রু - কনন থেকে কইনে গ্রীক ভাষায় খানান থেকে ল্যাটিনে ক্যানান শব্দ হিসেবে এসেছে।

 

আমার্ণা বর্ণমালা ও মিশরীয় প্রাচীন টেক্সটে কিনাহনা থেকে (১৪শ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) শব্দটির ব্যুৎপত্তি ঘটে। গ্রীক ভাষায় হেকাটাসের লেখায় এটাকে খনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২য় খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে রোমান কলোনী বেরিটাসের মুদ্রায় এটিকে ফিনিশীয় ভাষায় খোদাইকৃত হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

 

যদিও শব্দটির ব্যুৎপত্তি অনিশ্চিত তবু প্রাচীন ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, শব্দটি সেমিটিক মূল থেকে এসেছে যাতে খনা অর্থ বিনীতভাবে, বিনয়ের সাথে বশ্যতা স্বীকার করছি বা আপনার বাধ্যগত বোঝানো হয়। কতিপয় পন্ডিত মনে করেন, শব্দটি দ্বারা নীচু ভূমি বা জলাশয় বোঝায়, যা উত্তরের বা উপরের দিকে অবস্থিত আরামঅঞ্চলের অর্থাৎ উচ্চভূমি শব্দটির বিপরীত। আবার অন্যান্য পন্ডিতরা মনে করেন, এর অর্থ বশ্যতা স্বীকার করছি বা আপনার বাধ্যগত কারণ মিশরীয়রা যেমন তাদের প্রদেশ লেভান্তের ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করতো আর পরবর্তীকালে এটাই রোমানদের দ্বারাও ব্যবহৃত হয়েছিলো কারণ এটাই ছিলো আল্পসের উত্তরে প্রথম রোমান কলোনি যা প্রোভেন্স এর মর্যাদা পেয়েছিলো এবং তারা এটাকে বলতো প্রোভিন্সিয়া নস্ট্রা।

 

এফ্রাহিম এভিগডর স্পেইজর ১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দে বিকল্প পরামর্শ রেখে বলেন, শব্দটি হুরিয়ান কিনাহু থেকে উৎপত্তি হয়েছে যার অর্থ রক্তাভ বা লাল রং। যাতে ক্যানান ও ফিনিশিয়ার সমার্থক শব্দ হচ্ছে লাল রংয়ের ভূমি। বিশ শতকের শুরুতে নুজির হুরিয়ান সিটিতে প্রাপ্ত ট্যাবলেটে কিনাহু শব্দটি দেখা যায়। যার সমার্থক শব্দ হচ্ছে লাল বা রক্তাভ রং, যা ১৬০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ব্যবিলনের কাসাইট শাসকরা আয়াস সাপেক্ষে মুরেক্স মোলাস থেকে উৎপাদন করত। আবার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে ফিনিশিয়ানরা কাঁচ তৈরির বাইপ্রোডাক্ট থেকে উৎপাদন করত। লাল বা নীলাভ বস্ত্র, যা একটি প্রসিদ্ধ ক্যানানাইট রফতানি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল, এক্সোডাসেও যার উল্লেখ রয়েছে। রংগুলো তাদের উৎপত্তিস্থলের সাথে মিলিয়ে নামকরণ করা হয়েছিল। ফিনিশিয়া নামটি একই পণ্যের উল্লেখ করতে গ্রীক শব্দ পার্পল এর সাথে সম্পর্কিত। তবে নিশ্চিত করে বলা কঠিন যে, ঐ নাম থেকেই গ্রীক শব্দটি ব্যুৎপত্তি লাভ করেছিল কিনা বা গ্রীক শব্দটি থেকে ঐ নামটি এসেছিল কিনা। ফিনিশিয়ার টায়ারের লাল বা নীলাভ বস্ত্র আশপাশের এলাকায় বেশ প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিল। আবার রোমানরা তাদের রাজতন্ত্রে লাল বা নীলাভ বস্ত্রটিকে মহত্তের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করত। যাই হোক, রবার্ট ড্রিউসের মতে, স্পেইসারের প্রস্তাবনা সচরাচরভাবে পরিত্যক্ত হয়েছিল।


প্রত্মতত্ত্ব ও ইতিহাস


পর্যালোচনা


ক্যানানের জন্য নিম্নবর্ণিত কালপর্ব বিদ্যমান ছিল:


. ৪৫০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের পূর্বে (প্রাগৈতিহাসিক-প্রস্তর যুগ): পশু শিকারী সমাজ ক্রমান্বয়ে কৃষিকাজ ও পশুপালন সমাজে রূপান্তর লাভ করে।


. ৪৫০০-৩৫০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে (চ্যালকোলিথিক: কৃষিকাজ ও ধাতব শিল্পের উত্থান পর্ব)


. ৩৫০০-২০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে (আদি ব্রোঞ্জ যুগ: এলাকায় লিখিত রেকর্ড তৈরির পূর্বে)


. ২০০০-১৫৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে (মধ্য ব্রোঞ্জ যুগ: শহর-নগরের বিকাশ)


. ১৫৫০-১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে (লেইট ব্রোঞ্জ যুগ: মিশরীয় কর্তৃত্ব ও প্রভাব)


. ১২০০- বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময় পর্যন্ত লৌহ যুগ


লৌহ যুগ পরবর্তীকালে শাসকগণ যে এলাকা শাসন করতেন, সাম্রাজ্যের সাথে মিলিয়ে বিভিন্ন কালপর্বের নামকরণ করতেন: যেমন অ্যাসিরীয়ান, ব্যাবিলনীয়ান, পার্সিয়ান, হেলেনিস্টিক (গ্রীস সংশ্লিষ্ট) এবং রোমান।

 
প্রাথমিক সার্কাম-অ্যারাবিয়ান নোমাডিক প্যাস্টোরাল কমপ্লেক্স এর সাথে অভিবাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আসা জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ দ্বারা সিটুতে ক্যানানাইট সংস্কৃতি বিকশিত হয়। সার্কাম-আরাবিয়ান নোমাডিক প্যাস্টোরাল কমপ্লেক্স পূর্বসুরী নতুফিয়ান ও হারিফিয়ান সংস্কৃতি থেকে পরবর্তী সার্কাম-অ্যারাবিয়ান নোমাডিক প্যাস্টোরাল কমপ্লেক্স বিকাশ লাভ করে যাতে কৃষিকাজ, পশুপালন ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে বিস্তার লাভ করে। ৬২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে জলবায়ু সঙ্কটের কারণে লেভান্ত এলাকায় প্রথম কৃষি বিপ্লবের সূচনা ঘটে। ক্যানানের অধিকাংশ এলাকা পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় কনিফারস্কেলেরোফিলাস - প্রশস্ত পাতাসমৃদ্ধ বন দ্বারা আচ্ছাদিত

 
চ্যালকোলিথিক (৪৫০০-৩৫০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ)

 
ঘাসুলিন সংস্কৃতি নামক অভিবাসনের প্রাথমিক তরঙ্গটি ৪৫০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ক্যানানে প্রবেশ করে। এটিই ছিল ক্যানানে চ্যালকোলিথিকের গোড়াপত্তন। তাদের অজ্ঞাত মাতৃভূমি থেকে তারা ধাতব শিল্পকর্মের একটি পূর্ণাঙ্গ কারিগরি প্রযুক্তি নিয়ে এসেছিল। তারা ছিল তামা শিল্পকর্মের দক্ষ কারিগর, বস্তুত প্রাচীন বিশ্বে তাদের কাজ ছিল অনেক আধুনিক প্রযুক্তির ধাতব শিল্পকর্ম। পরবর্তী মেকপ সংস্কৃতি ধারণকারী লোকদের মত তাদের শিল্পকর্ম ছিল কারিগরি নৈপুণ্যসমৃদ্ধ ও সৌন্দর্যমন্ডিত। কোন কোন পন্ডিতের মতে, তাদের ধাতব শিল্প নৈপুণ্য দুটো শাখায় বিস্তৃত হয়েছিল এবং মূল তামার খনি ছিল ওয়াদি ফেনানে। ক্যামব্রিয়ান বুর্জ ডোলোমাইট শেল ইউনিট থেকে খনিজ পাথর হিসেবে তামা সংগ্রহ করা হত। আহরিত সকল তামা বীরসেবার বিভিন্ন সাইটে গলানো হতো। তারা উত্তর মেসোপটেমিয়ার বার্কেস্থ এবং এজিয়ান সাগরের সাইক্লাডিক সংস্কৃতির অনুরূপ ভায়োলিন আকৃতির তামার পাত্র তৈরি করত।


জেনেটিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঘাসুলিয়ানরা হাপলো গ্রুপ টি-এম ১৮৪ এর মালিক ছিল। চ্যালকোলিথিক কালপর্বের শেষদিকে দক্ষিণ ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের এন. এসুরে নগর বসতির উত্থান ও বিস্তার ঘটে।


আদি ব্রোঞ্জ যুগ (৩৫০০-২০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ)


আদি ব্রোঞ্জ কালপর্বে অন্যান্য সাইট উন্নত হয়েছিল যেমন এবলা (যেখানে পূর্ব সেমিটিক ভাষা এবলেইট ব্যবহৃত হতো)তবে ২৩০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে এবলা মেসোপটেমিয়ার আক্কাডিয়ান সম্রাট সারগন দ্য গ্রেট এর করায়ত্ত হয় (বাইবেলীয় মতে)। সুমেরিয়ান রেফারেন্সে তাদেরকে মার্তু (তাবু বাসী) অভিহিত করা হয়; পরবর্তীকালে সুমেরিয়ান রাজা উরুকের এনশাকুশানার শাসনামলে ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিমে আমোরাইট দেশ সারগন এর পূর্বে আমুরু অস্তিত্বশীল ছিল। পূর্বতন সুমেরিয়ান রাজা লুগাল এ্যানী মুন্ডুকে একটি ট্যাবলেটের (লিখিত বা উৎকীর্ণ লিপি সম্বলিত লিপিফলক) কৃতিত্ব দিতে হয় যিনি এ অঞ্চলে আন্দোলন করেছিলেন, যদিও সেই লিপিফলকটি কম কৃতিত্বপূর্ণ কারণ তা শতবর্ষ পরে আবিষ্কৃত হয়েছিল।


কাদেশ ও হাজরে  এবং আমুরু (সিরিয়া) আমোরাইট থাকাকালে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তে ছিল ক্যানান। আমোরাইট জনপদের অভ্যন্তরে উগারিটকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২১৫৪ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে আক্কাদিয়ান সাম্রাজ্যের পতনের পরে খিরবেত কেরাক (মৃৎশিল্প) ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠির আবির্ভাব ঘটে, যারা মূলতঃ টাইগ্রিস নদীর পূর্ব প্রান্তে জাগরোস পর্বতমালা (আধুনিক ইরানে) থেকে এসেছিল। তাছাড়া, ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা যায়, ২৫০০-১০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে চ্যালকোলিথিক জাগরোস থেকে দেশান্তরী ও ব্রোঞ্জ যুগের জনগোষ্ঠি দক্ষিণ লেভান্তে অভিবাসী হয়েছিল।

 
এ সময়ে দক্ষিণ লেভান্তে প্রথম নগরের আবির্ভাব দেখা যায়, যার প্রধান কেন্দ্র ছিল এন এসুর এবং মেগিডো। এ সকল প্রোটো-ক্যানানাইটরা দক্ষিণে মিশর এবং উত্তরে এশিয়া মাইনর (হুরিয়ান্স, হাট্টিয়ান্স, হিট্টিস, লুইয়ান্স) এবং মেসোপটেমিয়ার (সুমের, আক্কাদ, অ্যাসিরীয়) জনগোষ্ঠির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত এবং লৌহ যুগ পর্যন্ত  তাদের এ প্রবণতা অব্যাহত ছিল। তবে নগরগুলো পরিত্যাগের মধ্য দিয়ে এ কালপর্বের পরিসমাপ্তি ঘটে। নগরের বাসিন্দারা গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক ও পশুপালন জীবনব্যবস্থা বেছে নেয়। যদিও শিল্পনির্ভর উৎপাদন ও  ব্যবসা-পথ উন্মুক্ত ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে লেইট ব্রোঞ্জ যুগে উগারিট রাজ্যের (সিরিয়ার রাস শমরায়) উৎকৃষ্ট নিদর্র্শন হিসেবে বিবেচিত হত। ক্যানানাইট, এমনকি উগারিট ভাষায়ও ক্যানানাইট ভাষার ব্যুৎপত্তি পাওয়া যায় না।


সেমিটিক এবলা লিপিফলক নিয়ে লর্ড অফ গানানার (২৩৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে) বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে কিছু পন্ডিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, টেল মার্দিখ প্রত্নতত্ত্বে দেবতা ডাগনকে লর্ড অফ ক্যানানআখ্যা দেয়া হয়েছিল। যদি তা সত্যি হয় তাহলে, ২৫০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে একটি দেশ হিসেবে ক্যানানের ব্যাপারে এবলাইটরা সচেতন ছিল। জনাথন টাব অভিমত জ্ঞাপন করেন যে, গা-না-না শব্দটি ক্যানানাইটের তৃতীয় সহস্রাব্দের রেফারেন্স হতে পারে, যেখানে একই সময়ে অষ্টাদশ শতাব্দীতে তার নির্দিষ্ট উল্লেখ পাওয়া গিয়েছিল।


মধ্য ব্রোঞ্জ যুগ (২০০০-১৫৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ)


এ সময়ে নগরায়ণ প্রবণতা ফিরে আসে এবং অঞ্চলটি অনেকগুলো ছোট নগর-রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়। এর মধ্যে সবচেউল্লেখযোগ্য ছিল হাজর। একাধিক প্রমাণে ক্যানানাইট সামগ্রী উৎপাদনের বিভিন্ন দিকে মেসোপটেমিয়ার সুস্পষ্ট প্রভাব দেখা যায় এবং পুরো অঞ্চলটি একটি সুসংহত বৃহৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নেটওয়ার্কের আওতাধীন হয়েছিল।

 

আক্কাদের নারাম-সিনের শাসনামলের(২২৪০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে) প্রথম দিকে আক্কাদ, সুবার্তু/অ্যাসিরীয়া, সুমের ও এলাম - এই চার জনপদ দ্বারা আমুরু পরিবেষ্টিত ছিল। আমোরাইট রাজবংশ মেসোপটেমিয়ার অধিকাংশ এলাকাসহ লার্সা, আইসিন দখল করে ১৮৯৪ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ব্যাবিলন প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে দক্ষিণ ও উত্তর ক্যানানে আমুরু শব্দটি অ্যাসিরীয়ান/আক্কাদিয়ান শব্দে আত্তীকরণ করা হয়। সে সময়ে ক্যানানাইট এলাকটি দুটো কনফেডারেশনে বিভক্ত হয় - একটি ছিল জেজরিল উপত্যকার মেগিডোতে, দ্বিতীয়টি ছিল অর্নেট নদী তীরবর্তী কাদেশ নামীয় উত্তরাঞ্চলীয় নগরে। সুমু এবাম নামক জনৈক আমোরাইট সেনাপতি ১৮৯৪ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ব্যবিলনকে একটি স্বাধীন নগর-রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যাবিলনের একজন আমোরাইট রাজা হাম্মুরাবি (১৭৯২-১৭৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে) প্রথম ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যা শুধুমাত্র তার জীবদ্দশায় টিকে ছিল। তার মৃত্যুর পরে আমোরাইটদেরকে অ্যাসিরীয়া থেকে বিতাড়িত করা হয়। তবে ব্যাবিলনের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা ১৫৯৫ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল। আবার ১৫৯৫ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে তারা হিট্টিস কর্তৃক বিতাড়িত হয়।

 

জনৈক মিশরীয় অফিসার সিনুহে আধা-কল্পিত গল্প বলতে গিয়ে বর্ণনা করেন যে, অত্র এলাকায় আপার রেটজেনু ও ফেনেখুতে ১ম সেনাসরেটের আমলে (১৯৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে প্রাথমিক মিশরীয় প্রকৃত প্রতিবেদনে মেন্টু, রেটজেনু ও সেকমেম (সেচেম) অভিমুখী অভিযানটিকে সেবেক-খু-স্টিলি নামে অভিহিত করা হয়, যা ৩য় সেনাসরেটের শাসনামলে (১৮৬২ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) সংঘটিত হয়।

 
প্রাচীন অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য (২০২৫- ১৭৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) এর প্রথম শামসি আদাদের (১৮০৯-১৭৭৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) নিকট মুট বিশির যে পত্র পাঠিয়েছিলেন তার ভাষান্তর হচ্ছে, “এটা রাহিসুমে যেখানে লুণ্ঠণকারীরা (হাব্বাতুম) এবং ক্যানানাইটরা (কিনাহনুম) বসবাস করে  সিরিয়ার তৎকালীন আউটপোস্ট মারির ধ্বংসাবশেষের ভেতরে ১৯৭৩ সালে এটি পাওয়া গিয়েছিল। মারি বর্ণমালার অপ্রকাশিত রেফারেন্সে একই উপাখ্যানের উল্লেখ রয়েছে। কিনাহনুম বলতে বিশেষ কোন অঞ্চলের লোক না বিদেশি বংশোদ্ভুত কোন লোক তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যেমন রবার্ট ড্রিউস বলছেন, ক্যানানের প্রথম নির্দিষ্ট হস্তলিপি আলালাখ মূর্তির (স্ট্যাচু) উপরে পাওয়া যায়।

 
আধুনিক সিরিয়ার আলালাখ থেকে প্রাপ্ত একটি রেফারেন্সে আমিয়া বলতে ক্যানানের ভূমিবোঝানো হয়েছিল যা ইদরিমের ভাস্কর্যমূর্তিতে দেখা যায় (ষোড়শ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) তার শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত জনপ্রিয় বিদ্রোহে ইদরিমকে তার মায়ের আত্মীয়ের সাথে নির্বাসনে পাঠানো হয়, যারা ক্যানানে আশ্রয় প্রার্র্থনা করে। যেখানে তার নগর পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি একটি আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

 
১৬৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ক্যানানাইটরা পূর্ব নীল বদ্বীপ আক্রমণ করে, যেখানে হাইকসোস নামে তারা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। মিশরীয় খোদাইকর্ম বা অভিলিখনে কঠোরভাবে আমর ও আমারু প্রয়োগ করা হয়; যা ফিনিশিয়ার উত্তরাংশের পার্বত্য অঞ্চল থেকে অর্নেট পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল।

   
অনেকগুলো সাইটে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে যা দেখা যায়, পরবর্তীকালে তা ক্যানানাইট হিসেবে চিহ্নিত হয়। দেখা যায়, মধ্য ব্রোঞ্জ যুগে সেখানে হাজর নগরের বদৌলতে চরম উন্নতি সাধিত হয়েছিল। হাজর ছিল মিশরের একটি নামমাত্র রাজ্য। উত্তরে ইয়ামখাদ ও কাতনা প্রতিপত্তিসম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ নগর ছিল এবং দেখা যায়, বাইবেলে উল্লিখিত হাজর যেমন ছিল প্রধান নগর তেমনি ছিল দক্ষিণাঞ্চলের একটি সফল কোয়ালিশন।

 
লেইট ব্রোঞ্জ যুগ: (১৫৫০-১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ)

 
প্রাথমিক ব্রোঞ্জ যুগে মিশরীয় ও হিট্টি সাম্রাজ্যের উত্থানের পূর্বে ক্যানানাইট কনফেডারেশন কেন্দ্রীভূত ছিল মেগিডো ও কাদেশে। পরবর্তীকালে নিও-অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য ঐ এলাকাটি আত্মীকরণ করে।

 
বাইবেল অনুসারে, প্রাচীন সেমেটিক ভাষাভাষী অভিবাসীরা যারা আমোরাইট অঞ্চলে বসতি স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন, তা আরও পূর্বে ব্যবিলনীয়রা নিয়ন্ত্রণ করত। হিব্রু বাইবেলেটেবিল অফ পিপল আমোরাইটদের উল্লেখ রয়েছে (বুক অফ জেনেসিস ১০:১৬-১৮এ) ক্যানানের প্রাথমিক ইতিহাসে আমোরাইটগণ উল্লেখনীয় অবদান রেখেছিলেন বুক অফ জেনেসিস ১৪:এফ, বুক অফ যশুয়া ১০: এফ, বুক অফ ডেটেরোনমি ১:১৯ এফ, ২৭, ৪৪তাদেরকে দক্ষিণাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় অবস্থানরত দেখা যায়বুক অফ নাম্বার্স ২১:১৩, বুক অফ যশুয়া ৯:১০, ২৪:৮, ১২ তে দুজন মহান আমোরাইট রাজার উল্লেখ  রয়েছে, যারা জর্ডানের পূর্বে হেসবন ও আসটেরোথ এ বাস করতেন। বুক অফ জেনেসিস ১৫:১৬, ৪৮:২২; বুক অফ যশুয়া ২৪:১৫, বুক অফ জাজেজ ১:৩৪ তে আমোরাইটকে ক্যানানাইটের সমার্থক হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে আমোরাইট নামটি কখনই উপকূলে বসবাসকারী জনগণের জন্য ব্যবহৃত হয়নি।

 
অগ্রবর্তী বা অতীতের শতাব্দীসমূহে বাইবেলে দেখা যায়, ক্যানানের কিছু অংশ বিশেষ ও দক্ষিণ পশ্চিম সিরিয়া মিশরীয় ফারাওদের জায়গীর ছিল। তবে মিশরীয়রা ছিল বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন, উপর্যুপরি স্থানীয় বিদ্রোহ ও আন্তঃনগর দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণের মত তারা যথেষ্ট সামর্থ্যবান ছিল না। অন্যান্য এলাকা যেমন উত্তর ক্যানান ও উত্তর সিরিয়া সে সময়ে অ্যাসিরীয় শাসনাধীনে চলে আসে।


৩য় থাটমোস (১৪৭৯-১৪২৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) ও ২য় আমেনহোটেপ (১৪২৭-১৪০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) এর অধীনে মিশরীয় শাসকদের নিয়মিত কঠোর শাসন ও তাদের সেনাবাহিনীর নিয়মিত পদচারণায় আমোরাইট ও ক্যানানাইটরা যথেষ্ট আনুগত্য প্রদর্শন করেছে। ৩য় থাটমোস জানান, জনগণের জন্য একটি জলজ্যান্ত আতঙ্ক ছিল হাবিরু বা আপিরু, যাকে প্রথম দেখা গিয়েছিল। ধারণা করা হয় তারা ছিল ভাড়াটে বাহিনী, লুণ্ঠনকারী অথবা সমাজ থেকে বহিস্কৃত। যারা জীবনের কোন এক সময় বসতিপূর্ণ  জীবন যাপন করেছিল। তবে খারাপ ভাগ্য বা পরিস্থিতির চাপে জনগণের কাছে শেকড়বিহীন যাযাবরে পরিণত হয়েছিল। তারা স্থানীয় মেয়র বা রাজা বা রাজপুত্র কর্তৃক ভাড়াকৃত হয়ে বেঁচে থাকার প্রস্তুতি নিয়েছিল।


সুমেরিয়ান রাজ ৩য় শুলগীর শাসনামলে তার এলাকা থেকে তারা লুণ্ঠনকারী বা হাবিরি নামে এসেছিল তবে ক্যানানে তাদের উপস্থিতির কারণে এশিয়া মাইনর থেকে উত্তর অ্যাসিরীয়া পর্যন্ত একটি নূতন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। হুরিয়ানের ইন্দো-আর্য শাসক মিটান্নির শাসনামলে এ ঘটনা ঘটে। হাজরের (১৫০০-১৩০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) অর্থস্ট্যাট গীর্জার সিংহ মূর্তি ব্রোঞ্জ যুগে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

 
হাবিরুকে আদিবাসী দল নয় বরং একটি সামাজিক দল বলে মনে হয়। একটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাসিন্দাদের অধিকাংশ ছিল হুরিয়ান, যদিও তাদের মধ্যে সেমিট, সামান্য সংখ্যক কাসাইট ও লুইয়ান আগন্তুক ছিল। ৩য় আমেনহোটেপের শাসনামলে এশীয় প্রদেশগুলো শান্তশিষ্ট ছিল না, হাবিরু বা আপিরুর আগমন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। ধারণা করা হয় যে, অস্থির শাসকরা তাদের সহায়তা চেয়েছিল কারণ প্রতিবেশি রাজ্যের সহায়তা ছাড়া তাদের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব ছিল। আব্দি-আশির্টার পুত্র আজিরু সাহসী ও মহৎ নেতা হিসেবে দামেস্কের সমতল এলাকা পর্যন্ত রাজ্য সম্প্রসারিত করেছিলেন। কাতনার গভর্নর আকিজ্জি ৩য় আমেনহোটেপের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন। তিনি আজিরুর প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করেছিলেন। পরবর্তী ফারাওয়ের আমলে পিতা-পুত্র উভয়েই মিশরের অনুগত গুবলার গভর্নরকে নানাভাবে উত্যক্ত করে। মিশরীয় রাজতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করে হিট্টি সাম্রাজ্যের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে।

 
এভাবে ক্যানানে মিশরীয় আধিপত্য বড় ধরনের হোচট খায়, যখন ৩য় আমেনহোটেপের আমলে হিট্টিরা সিরিয়া অভিমুখে অগ্রসর হয়। যখন তারা সেখানে চাপের মুখে পড়ে তারা আমোরাইটদের অপসারণ করে সেমেটিক অভিবাসন ত্বরান্বিত করে।


আব্দি-আশির্টা ও তার পুত্র আজিরু প্রথমদিকে হিট্টিদের ভয়ে ভীত ছিল, পরবর্তীতে তারা তাদের রাজার সাথে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়। হিট্টিদের সাথে যোগ দিয়ে মিশরের অনুগত দেশগুলোকে তারা আক্রমণ ও দখল করে। দূরবর্তী ফারাওয়ের কাছে সহায়তার জন্য আকুল আকুতি জানিয়েও তা ব্যর্থ হয়। কারণ ফারাও তখন তার ধর্মীয় অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন।


আমার্না চিঠিপত্র থেকে উত্তর সিরিয়ায় হাবিরি সম্পর্কে জানা যায়। ফারাওয়ের কাছে এটাক্কামা লিখেছিলেন, “লক্ষ্য করুননামিওয়াজা কাদেশ ও উবিতে আমার রাজার সকল নগর কাদেশ ও উবিতে সা-গাজের কাছে ছেড়ে দিয়েছে। তবে আমি যাবো, দেবতা ও সূর্য যদি আমার আগে পৌঁছে যায়, আমার রাজার নিকট ফিরিয়ে দিতে হাবিরির কাছ থেকে আমি নগরগুলোর দায়িত্ব নেব, যেন বুঝতে পারে আমি কে এবং আমি সাগাজকে বহিষ্কার করব।

 
একইভাবে সিদনের (সিদুনা) রাজা জিমরিদা ঘোষণা দেন যে, “আমার সকল নগর যেগুলো রাজা আমার হাতে দিয়েছেন, সেগুলো হাবিরির হাতে চলে এসেছে। জেরুজালেমের রাজা আব্দি-হেবা ফারাওয়ের কাছে লিখেছেন, “যদি মিশরীয় সেনারা এ বছর আসে, জমি-জমা ও রাজপুত্ররা আমার রাজার নিকট থাকবে। তবে সেনারা না এলে এ সকল জমি-জমা ও রাজপুত্ররা আমার রাজার নিকট থাকবে না।

 
আব্দি-হেবার প্রথম বিপর্যয় ঘটে লাবায়া পুত্র আইলকিলির হাতে, যিনি হাবিরির সাথে একটি প্রতারণাপূর্ণ চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। গিনার অবরোধের কারণে এই পরাক্রমশালী যোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। এ সকল রাজপুত্ররা ফারাওয়ের কাছে লিখিত পত্রে একে অন্যের বিরুদ্ধে মারাত্মক কুৎসা রটনা করত। আবার নিজেদের নির্দোষিতা ও দুরভিসন্ধি সম্পর্কে সাফাই গাইত। উদাহরণস্বরূপ নামিওয়াজার কথা বলা যায়, এটাক্কামা তাকে অবাধ্যতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে ফারাওয়ের কাছে লিখেছিলেন, “লক্ষ্য করুন, আমি, আমার যোদ্ধারা, আমার রথসহ ভ্রাতারা এবং আমার সাগাজ ও আমার সূতী একত্রে আমার লর্ডের আদেশ পালনের অপেক্ষায় রয়েছি।’’

 
নুতন রাজ্যের শুরুতে মিশর লেভান্তের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত। অষ্টাদশ রাজবংশ পর্যন্ত দৃঢ় শাসন অব্যাহত ছিল, তবে উনবিংশ ও বিংশ রাজবংশে এসে মিশরীয় শাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। হিট্টির বিরুদ্ধে কাদেশে (১২৭৫ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) অসমাপ্ত যুদ্ধের কারণে ২য় রামেসেস নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সক্ষম হলেও অচিরেই হিট্টিরা উত্তর লেভান্ত (সিরিয়া ও আমুরু) দখল করে নেয়। ২য়  রামেসেস তার বিল্ডিং প্রজেক্ট নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন, যখন এশীয় নিয়ন্ত্রণকে পাত্তা না দিলে ঐ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ক্রমশঃ ক্ষীণ হতে থাকে। তার উত্তরসুরী মার্নেপ্তাহের আমলে মার্নেপ্তাহ ঘোষণায় দক্ষিণ লেভান্তের বিভিন্ন স্থাপনা ও ইসরায়েল নামক জনপদ ধ্বংসের দাবি করা হয়। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যালোচনায় মার্নেপ্তাহ ঘোষণার স্থাপনা ও জনপদ ধ্বংসের দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি; তাই এটিকে এক ধরনের প্রোপাগান্ডা বলা যায়। অভিযানে দক্ষিণ লেভান্তের কেন্দ্রীয় উঁচু ভূমিকে পরিত্যাগ করা হয়। দক্ষিণ লেভান্ত থেকে মিশরীয় প্রত্যাহার ছিল একটি দীর্ঘসূত্রী প্রক্রিয়া যা ত্রয়োদশ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ থেকে দ্বাদশ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত শত বছর চলমান ছিল। মিশরীয় প্রত্যাহারের কারণ ছিল সম্ভবতঃ মিশরের নিজস্ব কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গোলযোগ, কোন বহিঃশক্তির আক্রমণ নয়। সেসময়ে জলদস্যুদের উৎপাত একটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল, ১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে জলদস্যুরা মিশরে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে সামান্য প্রমাণ পাওয়া যায়। অনেক মিশরীয় গ্যারিসন বা সাইট; এমনকি দক্ষিণ লেভান্তের মিশরীয় গভর্নরের প্রাসাদ কোনরূপ ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়াই পরিত্যক্ত হয়েছিল, তেমনিভাবে দেইর আল বালাহ, আস্কালন, টেল মর, টেল এল ফারাহ (দক্ষিণ), টেল গেরিসা, টেল জেম্মেহ, টেল মাসোস এবং কুবুর এল ওয়ালইদাহ ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়াই পরিত্যক্ত হয়েছিল। তবে দক্ষিণ লেভান্তের কোন মিশরীয় সাইটই ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া পরিত্যক্ত হয়নি।

 
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষদিকের যুদ্ধে আপেকের মিশরীয় গ্যারিসন ধ্বংস হয়। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষে ১১৩৪ থেকে ১১১৫ সময়কালের মধ্যে জাফায় মিশরীয় ফটক কমপ্লেক্স ধূলিস্মাৎ হয়। বেথ শেয়ান মনে করেন পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়নি, সম্ভতঃ মধ্য-দ্বাদশ শতাব্দীতে কোন ভূমিকম্পের ফলে তা বিধ্বস্ত হয়েছিল।


আমার্না চিঠিপত্র

 
ক্যানানাইট রেফারেন্সে ১৩৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের ফারাও আখেনাতেনের আমার্না চিঠিপত্র পাওয়া যায়। সে সকল চিঠিপত্রের কোন কোনগুলো চতুর্দশ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ক্যানানের গভর্নর ও রাজপুতরা মিশরীয় রাজা আখেনাতেনের (৪র্থ আমেনহোটেপ) কাছে পাঠিয়েছিলেন। অন্যদিকে আমর ও আমুরু কিনাহি ও কিনাহনি ভাষায় সিরিয়ায় চিঠিপত্র যোগাযোগ করা হত। চিঠিগুলো অফিশিয়াল ও অ্যাসিরীয় ও ব্যবিলনীয় পূর্ব সেমেটিক আক্কাদিয়ান কূটনৈতিক ভাষায় লেখা হত।

 
লেইট ব্রোঞ্জ যুগের অন্যান্য নিদর্শন


উগারিটের টেক্সটে একটি চিঠির কপি পাওয়া যায়। উগারিটের রাজপুত্র কর্তৃক ক্যানানের রাজপুত্র বরাবরে পরিশোধিত অর্থ বিষয়ে উগারিট রাজা ২য় রামেসেসের কাছে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন। জনাথন টাবের মতে, এতে বোঝা যায়, উগারিটের জনগণ নিজেদেরকে ক্যানানাইট মনে করতেন না। আধুনিক মতামত অবশ্য এ ধারণাকে সমর্থন করে না।


অন্যান্য উগারিট রেফারেন্সে দেখা যায়, রাজকীয় এস্টেটের অনুসারী ব্যবসায়ীবৃন্দের তালিকা, যেসকল এস্টেটের মধ্যে একটিতে ছিল তিন ধরনের উগারিটবাসী - এক. আশদাদাইত, দুই. মিশরীয় ও সবশেষটি ক্যানানাইট।

 
আশুর ট্যাবলেট (লিখিত বা উৎকীর্ণ লিপি সম্বলিত লিপিফলক)


১ম শালমানেসেরের আমলের প্রাপ্ত একটি মধ্য অ্যাসিরীয় চিঠির কপিতে দেখা যায়, জনৈক অ্যাসিরীয় অফিসার ক্যানানে ভ্রমণ করেছেন।

 
হাট্টুসা চিঠিপত্র


হাট্টুসা থেকে চারটি রেফারেন্স পাওয়া যায়ঃ


সিডার দেবতাদের উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতি জাগানিয়া আখ্যান: যাতে ক্যানান, সিডন, টায়ার ও সম্ভবতঃ আমুরুর উল্লেখ ছিল


৩য় হাট্টুসিলি বরাবর ২য় রামেসেসের চিঠি, যাতে রামেসেস পরামর্শ দিচ্ছেন- ক্যানানে তার ভাইয়ের সাথে দেখা করে সে তাকে মিশরে নিয়ে যাবে


একটি খন্ডিত টেক্সট যাতে ক্যানানকে মিশরের একটি উপ-জেলা (সাব-ডিস্ট্রিক্ট) বলা হয়েছে


৩য় হাট্টুসিলির নিকট ২য় রামেসেসের চিঠি যাতে বলা হয়েছে কিনজা ও হারিটার যাত্রাপথে তিনি ক্যানানে ভূমি পরিদর্র্শন করবেন।

 
ব্রোঞ্জ যুগের পতন

 
এ্যান কিলব্রিউ দেখিয়েছেন, প্রাক-ইসরায়েলী মধ্য ব্রোঞ্জ ও ইসরায়েলী লৌহ যুগে (১৮০০-১৫৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ এবং ৭২০-৫৮৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) জেরুজালেমের মত নগরগুলো ছিল বৃহত্তর যার চারদিক ছিল দেয়ালবেষ্টিত। তবে লেইট ব্রোঞ্জ যুগ ও ১ম লৌহ যুগের আগমনের সময় জেরুজালেম ছোট, অপেক্ষাকৃত তাৎপর্যহীন ও অরক্ষিত নগরে পরিণত ছিল।

 
আমার্না কালপর্বের পরেই নূতন একটি সমস্যা দেখা দেয় যে কারণে দক্ষিণ ক্যানানে (অঞ্চলের অন্য অংশ অ্যাসিরীয় নিয়ন্ত্রণে ছিলমিশরীয় নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়। ফারাও হোমেনহাব নোমাডিক পাস্টোরালিস্ট আদিবাসী নেতা শাসুর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। শাসু জর্ডান নদী পার হয়ে মিশরীয় বণিকদের উপর হামলা করত। ১ম শেঠি ১২৯০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে যুদ্ধে শাসুসহ মৃত সাগরের দক্ষিণ ও পূর্বে বসবাসরত সেমেটিক ভাষাভাষী নোমাডদেরকে পরাস্ত করে। কাদেশের যুদ্ধের ভগ্নদশা থেকে বের হয়ে ২য় রামেসেস মিশরীয় প্রভাব বজায় রাখতে প্রচন্ডরূপে ক্যানান আক্রমণ করে। মিশরীয় সেনারা মোয়াব ও আম্মানে হামলা করে, যেখানে রামেসেস নামীয় একটি স্থায়ী নগর-দূর্গ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।


কোন কোন পন্ডিত মনে করেন, হাবিরু সাধারণভাবে হিব্রু নামে পরিচিত সকল নোমাডিক গোত্রের বিশেষত জাজের সময়কালের আদি ইসরায়েলীদের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। জাজ তার গোত্রের জন্য ঐ স্থানটিকে উর্বর ও উপযুক্ত ভেবেছিলেন। সে যাই হোক, শাসুদের বর্ণনা করতে শব্দটি তেমন ব্যবহৃত হয়নি। শব্দটি দিয়ে প্রাচীন সেমেটিক ভাষী-মোয়াবিট, আমোনাইট ও এডোমাইটরা বোঝাতো কিনাতা অনিশ্চিত।


১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে দক্ষিণ লেভান্তের কোন বড় নগর বা স্থাপনা ধ্বংস হয়েছিল কিনা সে সম্পর্কে যৎসামান্য প্রমাণ পাওয়া যায়। লাচিসে ৩য় ফসি টেম্পল ধর্মীয় আচার মেনে ধ্বংস করা হয়েছিল, যখন এই এলাকার একটি বাড়ি আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল। এটি একটি ভয়াবহ প্রমাণ ছিল। এর পরে নগরটি পূর্বের তুলনায় আরও সৌন্দর্যমন্ডিত করে পুনর্নির্মিত হলেও মেগিডোতে নগরের অধিকাংশ এলাকায় ধ্বংসের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি এবং সম্ভবতঃ এ এলাকার রাজপ্রাসাদ ধ্বংস হয়েছিল। তবে তাও নিশ্চিত নয়। হাজরের স্মৃতিস্তম্ভ যখন ধ্বংস করা হয় তখন ছিল মধ্য-ত্রয়োদশ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ, লেইট ব্রোঞ্জ যুগ শুরুর অনেক আগে। তবে, ১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে বিশেষতঃ আস্কালুনা, আসডুডু, টেল এস সাফি, টেল বার্না, টেল ডোর, টেল গেরিসা, টেল জেমেহ, খিরবেড রাহুড, টেল জেরর এবং টেল আবুতে অনেক সাইটে বাড়িঘর বা স্থাপনা আগুনে ভস্মীভূত হলেও একেবারে ধূলোয় মিশে যায়নি।


অনেক গবেষণায় ১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের পরে দক্ষিণ লেভান্তে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়ার দাবি করা হলেওলেইট ব্রোঞ্জ যুগ শেষ হওয়ার পরে দক্ষিণ লেভান্তে ব্যবসায়ীদের অন্য এলাকার সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছিল বলে অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক জেসে মিলেক দেখিয়েছেন, সাধারণ ধারণায় সাইপ্রিয়ট ও মিসেনাহের মৃৎশিল্প ১৩০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ক্ষীণতর হয়েছিল, বস্তুতঃ মিসেনাহের কুমোর শিল্প ১২৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে দুর্বলতর হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ধ্বস নামেনি, ১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে মিশরের সাথে ব্যবসা চলছিল। বিভিন্ন টিমের সম্পাদিত প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা যায়, ব্রোঞ্জ তৈরির প্রয়োজনে অ-স্থানীয় ধাতব টিনের ব্যবসা ১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের পরেও চলমান ছিল। ঐ ধাতব উপাদানের উৎস ছিল আধুনিক আফগানিস্তান, কাজাকস্তান এমনকি ইংল্যান্ডের কর্নওয়াল। প্রাথমিক লৌহ যুগে ১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের পরে সারদিনিয়া থেকে দক্ষিণ লেভান্তে সীসা আমদানি করা হত।

 

লৌহ যুগ


প্রাথমিক লৌহ যুগে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের ফিলিস্টাইন নগর-রাষ্ট্র ও মোয়াব, আম্মান, জর্ডান নদীর পূর্বপারের আরাম-দামেস্ক রাজ্য বাদে দক্ষিণ লেভান্তে ইসরায়েল ও যুদাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে উত্তর লেভান্ত অনেকগুলো ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়।

 
১০ম থেকে ৯ম খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে পুরো অঞ্চলটি (সকল ফিনিশিয়া ও ক্যানানাইট রাষ্ট্র, আর্মেনিয়ান রাজ্য, ইসরায়েল, ফিলিস্টিয়া ও সামারাসহ) নিও-অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের করায়ত্ত হয় এবং ৭ম খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের সমাপ্তি পর্যন্ত তিনশত বছরে সেভাবে ছিল। সাম্রাজ্যের সম্রাট আশুর নাসিরপাল, ২য় আদাদ-নিরারি, ২য় সার্গন, ৩য় টিগলার পিলেসাট, ইশারহাদন, সেনাচেরিব এবং আশুরবানিপাল ক্যানানাইটে প্রভাব বিস্তারের জন্য উন্মুখ ছিল। ২৫তম মিশরীয় রাজবংশ ঐ অঞ্চলের একটি উন্নত এলাকা দখলের ব্যর্থ চেষ্টা চালায় এবং নিজেরাই নিও-অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য কর্তৃক নির্মূল হয়। ৬১৬ থেকে ৬০৫ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের মধ্যে নানা তিক্ত গৃহযুদ্ধের কারণে নিও-অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। ব্যবিলনীয়, মেডেস, পার্সিয়ান ও সিথিয়ান্সের আক্রমণ তাদের পরাজয় ত্বরান্বিত করেছিল। নিও-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলসহ, ক্যানান ও সিরিয়ার সকল ভূমিইসরায়েল ও যুদাহ রাজ্য দখল করে নেয়। তারা সহজেই মিশরীয়দের পরাজিত করে ঐ এলাকায় অপেক্ষমাণ থেকে পূর্বাঞ্চল দখলের পায়তারা করে।

 
৫৩৯ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে নিও-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য নিজেই ভেঙ্গে পড়লে অঞ্চলটি আকিমেনিদ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ৩৩২ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। পরবর্তীকালে গ্রীক বীর আলেক্সান্ডার দি গ্রেট এলাকাটি দখল করলে ২য় খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের শেষ দিকে রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এর পরে ৭ম খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে আরব-ইসলামী আক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত তা বাইজেন্টাইনদের দখলে ছিল।

 
মিশরীয় অক্ষরলিপি ও গূঢ়লিপি (১৫০০-১০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ)


২য় খ্রীষ্ট পূর্ব সহস্রাব্দে, প্রাচীন মিশরীয় টেক্সটে একটি মিশর নিয়ন্ত্রিত উপনিবেশ বা কলোনি বুঝাতে ক্যানান শব্দটি ব্যবহার করা হয়। হিব্রু বাইবেলে ক্যানানের সংজ্ঞায় যার সীমানা ভূমধ্যসাগরের পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা হয়। শব্দটির মিশরীয় ও হিব্রু ব্যবহার অভিন্ন নয়। মিশরীয় টেক্সটে তুরস্কের নিকটবর্তী উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার কাদেশের উপকূলীয় নগরকে ক্যানানের ভূমি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাতে মিশরীয় ব্যবহারে  ভূমধ্যসাগরের সমগ্র লেভান্তে উপকূল মনে হয়। এর ফলে শব্দটি আরেকটি মিশরীয় শব্দের সমার্থক করা হয়।

 
উত্তর ক্যানানের লেবানন, লিটানি নদী থেকে অর্নেট নদীর জলাভূমি পর্যন্ত অংশটি মিশরীয়দের কাছে উচ্চ রেটজেনু নামে পরিচিত ছিল। মিশরীয় অভিযানে জাহী শব্দটি জর্ডান নদীর জলাভূমি বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। প্রাচীন বহু মিশরীয় উৎস থেকে এশিয়ার অভ্যন্তরে কানাহায় সামরিক অভিযানের তথ্য পাওয়া যায়।

 
প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের উৎসে ক্যানান নামটির প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে এমন একটি কালকে উল্লেখ করা হয় যখন মিশরীয় নূতন রাজ্যের কলোনিটির অস্তিত্ব ছিল (ষোড়শ থেকে দ্বাদশ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ)এ নামটি ব্যবহার শুরুর সময়ে লেইট ব্রোঞ্জ যুগ (১২০৬-১১৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) সমাপ্ত হয়েছিল।


সে সময়ে শব্দটি আশপাশের এলাকায় পরিচিত ছিল। পন্ডিতগণ অবশ্য দ্বিমত পোষণ করে এর অবস্থান ও সীমানা নিয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন অধিবাসীরা তাদের নিজেদের বোঝাতেই শব্দটি ব্যবহার করত।


মিশরের অষ্টাদশ রাজবংশ থেকে এখন পর্যন্ত ১৬টি রেফারেন্স পাওয়া যায়ঃ

 
২য় আমেনহোটেপ খোদিত শব্দাবলিযাতে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ক্যানানাইটদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রাকৃতিক বিবরণ সম্বলিত তিনটি তালিকা

 
১ম প্যাপিরাস এ্যানাসথাসি সিলে থেকে গাজার পথকে ক্যানানের ভূমির শেষ বলে অভিহিত করেছেন


মার্নেপ্তাহ স্টিল


প্যাপিরাস এ্যানাসথাসি ৩এ ৫-৬ থেকে প্যাপিরাস এ্যানাসথাসি ৪ ১৬,৪ হুরু থেকে ক্যানানাইট দাসদের আগমন হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন


প্যাপিরাস হারিস উল্লেখ করেছেন, ৩য় রামেসেস কর্তৃক লেভান্তের পতনের পরে (১১৯৪ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) দেবতা আমেনের জন্য একটি মন্দির উৎসর্গ করেন যাতে দক্ষিণ লেভান্তের লোকজন তাকে সমীহ করে। কোন কোন মতে এটি পাপা-ক্যানানে নির্মাণ হচ্ছিল বলে, যার অর্থ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। কোন কোন মতে এটিকে গাজা শহর বা সমগ্র মিশরীয় ভূখন্ড বলা হয়েছে।

 
গ্রীস-রোমান ইতিহাস


পাশ্চাত্য সাহিত্য বিশেষতঃ হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসিতে প্রথমবারের মত গ্রীক শব্দ ফিনিশিয়ার ব্যবহার দেখা যায়। হিব্রু বাইবেলে তার দেখা না মিললেও নিউ টেস্টামেন্টের বুক অফ এ্যাক্টে শব্দটি তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে। ৬ষ্ঠ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে হেকাটাস অফ মিলেটাস নিশ্চিত করে বলেন, ফিনিশিয়াকে পূর্বে χνα বলা হতো যে শব্দটিকে ফিলো অফ ব্যবলোস তার মিথোলজিতে নিজের উপনাম শযহধ হিসেবে ব্যবহার করেছেন যাকে পরবর্তীকালে ফিনিক্স বলা হয়। সানচুনিয়াথনের লেখা থেকে জানা যায়, ব্যবলোস, বেরিটাস ও টায়ার ছিল সেময় পর্যন্ত নির্মিত প্রথম নগরসমূহ, শাসক ছিলেন ক্রোনাস এবং জনগণের পেশা ছিল মৎস্য আহরণ, পশু শিকার, কৃষি কাজ, জাহাজ তৈরি ও লেখালেখি।


বৈরুত এবং লাওডিসিয়া শহরের মুদ্রায় খোদাইকৃত রয়েছে - “অফ লাওডিসিয়া, এ মেট্রোপলিস ইন ক্যানানযার অর্থ ক্যানানের একটি নগর হচ্ছে লাওডিসিয়া। এ সকল মুদ্রা ৪র্থ এ্যান্টিওকাসের সময়কালের (১৭৫-১৬৪ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) ও তার উত্তরসুরীদের আমলের।

 
সেন্ট অগাস্টিনো উল্লেখ করেছেন যে, সাগর তীরবর্তী ফিনিশিয়ানরা তাদের মাতৃভূমিকে ক্যানান নামে অভিহিত করত। অগাস্টিনো আরও যোগ করেন, উত্তর আফ্রিকার হিপ্পের সাদামাটা লোকজন পিউনিক চানানি বলত; ল্যাটিন পিউনিক এর অর্থ অ-রোমান। কোন কোন পন্ডিত অভিমত দেন, অগাস্টিনো যে পিউনিক শব্দটির কথা উল্লেখ করেছেন, হয়তা বা তা লিবিয়ান।

 
গ্রীকরা প্যালেস্টাইন শব্দটিও জনপ্রিয় করেছিলেন। প্যালেস্টাইন শব্দটি ফিলিস্টাইন বা ক্যানানের দুর্গম অঞ্চলের এইজান পেলাসজিয়ানের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছিল, যাতে ফিনিশিয়া বাদ রাখা হয়েছিল (৪৮০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ)১১০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ থেকে হাসমোনিয়ানরা একটি জুদিয়ান-সামারিটান-ইদুমায়েন-ইটুরিয়ান-গ্যালিলিয়েন জোট গঠন করে এ অঞ্চলে তাদের কর্তৃত্ব সম্প্রসারণ করে। বৃহত্তর এলাকায় জুদিয়ান (ইহুদি) নিয়ন্ত্রণের ফলে জুদিয়ান শিরোনামটি যুদিয়ায় পরিবর্তিত হয়, যে নামটি দিয়ে পূর্বে শুধুমাত্র জুদিয়ান পর্বতমালার একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল, যুদাহের আদিবাসীদের বরাদ্দকৃত যা ছিল সাবেক যুদাহ রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র। ৭৩ থেকে ৬৩ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের মধ্যে রোমান প্রজাতন্ত্র ৩য় মিতরিডাটিক যুদ্ধে যুদিয়া বিজয়ের পরে এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব সম্প্রসারিত করে। সাবেক হাসমোনিয়ান রাজ্য পাঁচটি জেলায় বিভক্ত করা হয়। ১৩০-১৩৪ সালে বার কোখবা বিদ্রোহের নিষ্পেষণে যুদাহ প্রদেশ গ্যালিলির সাথে হাত মিলিয়ে সিরিয়া প্যালেস্টিনা নামে একটি নূতন প্রদেশ গঠন করে। পরিস্থিতিগত প্রমাণে দেখা যায়, হার্দিয়ান নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল, তবে নির্দিষ্ট তারিখ নিশ্চিত নয়। কতিপয় পন্ডিতের মতেযুদাহের সাথে বিভক্তি সম্পন্ন করার অভিপ্রায়ে নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল। অবশ্য এ মতটিও বিতর্কিত।

 
পরবর্তী উৎস


প্যাডিগেঁ স্ট্যাচু হচ্ছে ক্যানান সম্পর্কে জ্ঞাত সর্বশেষ মিশরীয় রেফারেন্স। একটি ক্ষুদ্র স্ট্যাচুতে খোদাইকৃত, “ক্যানান ও পেলেসেটের দূত অপীর পুত্র পাডিয়েসেট। সময়টি ছিল ৯০০ থেকে ৮৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দখোদাইকর্মের ৩০০ বছর পরে যা অভিলিখন হিসেবে আবিষ্কৃত হয়।
৯০০ থেকে ৩৩০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে প্রভাবশালী নিও-অ্যাসিরীয় ও আকিমেনিদ সাম্রাজ্য ক্যানান সম্পর্কে কিছুই অবহিত করেনি।


ক্যানানাইট


ক্যানানাইটরা ছিল প্রাচীন ক্যানানের বাসিন্দা। প্রাচীন ক্যানান আধুনিক ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন, জর্ডান, তুরস্কের দক্ষিণ সীমান্ত ও দক্ষিণ সিরিয়া ও সিরিয়া উপকূলের সাথে সম্পর্কিত। এটিকে মানব ইতিহাসের অন্যতম পুরনো সভ্যতা বলে বিশ্বাস করা হয়।

 
ইতিহাস


তৃতীয় সহস্রাব্দ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের মাঝামাঝি সময়ে কানাউম এলাকায় বসবাসকারী লোকজনই পরবর্তীকালে  লেভান্তের বাসিন্দা হন। আক্কাদিয়ান শব্দ কিনাহু দ্বারা লাল বা রক্তাভ রংয়ের পশম বোঝায়, উপকূলীয় এলাকায় রং করা হত এবং এটি ছিল এ অঞ্চলের মুখ্য রফতানি পণ্য।  প্রাচীন গ্রীকরা পরবর্তীকালে ক্যানানাইটদের সাথে বাণিজ্য করত - ক্যানানাইট শব্দটির অর্র্থ মনে হচ্ছে মুখ্য। ক্যানানাইটদের যখন ফিনিক্স হিসেবে রেফার করা হয়, শব্দটি গ্রীক ভাষা থেকে এসেছে (যার অর্থ লাল বা রক্তাভ)এর সাথে গ্রীকরা যে  বস্ত্রের ব্যবসা করত তাও বোঝাত। রোমানরা ফিনিক্স শব্দটি প্রতিলিপিকরণ করে পোনাস করেছে; দেখা যায়, কার্থেজে বসবাসকারী ক্যানানাইটদের উত্তরসুরীদেরকে পুনিক নামে অভিহিত করা হতো।


কাজেই, যেখানে ফিনিশিয়া ও ক্যানানাইট একই সংস্কৃতিকে রেফার করে, প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকগণ সাধারণভাবে ব্রোঞ্জ যুগের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ব্রোঞ্জ যুগে প্রাক-১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে লেভান্তের জনতা ক্যানানাইট ছিল। লৌহ যুগে তাদের উত্তরসুরীরা, বিশেষতঃ যারা উপকূলে বসবাস করত তারা ছিল ফিনিশিয়ান। সাম্প্রতিককালে ক্যানানাইট শব্দটি ২য় পর্যায়ের লৌহ যুগের রাজ্য লেভান্ত বোঝায়, আরামিন সম্রাট তাদের শাসন করেনি বরং ফিলিস্টাইন, ইসরায়েল ও যুদাহের কোন আদিবাসী গোষ্ঠি শাসন করেছিল।

 
সংস্কৃতি


প্রত্নতত্ত্ববিদ জনাথন এন. টাব এর মতে, আমোনাইট, মোয়াবাইট, ইসরাইলিট ও ফিনিশিয়ানরা নিঃসন্দেহে স্ব স্ব সংস্কৃতির পরিচিতি ধারণ করত এবং তারা সকলে ক্যানানাইট হলেও, “৮ম সহস্রাব্দ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে তারা কৃষিনির্ভর পল্লীতে বসতি গেড়েছিল।


ক্যানান নামটি বিশেষ কোন সেমেটিক ভাষী আদিবাসী দলকে রেফার করে কিনা সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছেতারা কোথায় বসবাস করত, আদিবাসী দল কোন এলাকা থেকে এসেছে বা কোন আদিবাসী দল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত অথবা সম্ভবতঃ এই তিন দলের সমাহার।

  
স্বল্প পরিসরের জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা অবিচল জলবায়ু প্রভাবিত হতে হতে কালপরিক্রমায় ক্যানানাইট সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছে। এ সময়ে মধ্য প্রাচ্য বিশেষতঃ প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া (সুমের, আক্কাদ, অ্যাসিরীয়া, ব্যাবিলনীয়া), হিট্টিস, মিনওয়ান ক্রিট নগরগুলো  ব্যবসায়ী বণিকদের প্রধান কেন্দ্র ছিল। আবার প্রত্যন্ত এলাকায় কৃষিকাজের সূচনা হয়েছিল। উপকূলীয় শহর ও কৃষি ভূমি মরুকরণ এর কারণ ঝড়ের দেবতাদের (কেউ কেউ তেসুর হুরিয়ান নামে) আবার কেউ বায়াল হাদাদ এবং ইয়া, ইয়াম বা সাগরের বা পানির দেবতা নামে অভিহিত করতেন। প্রাথমিক ক্যানানাইট সভ্যতার বৈশিষ্ট্য ছিল দেয়াল বেষ্টিত ক্ষুদ্র বাজার-নগর যার চারদিকে কিষাণ-কিষাণির বসবাস, যারা স্থানীয় উদ্যানবিদ্যাজাত উৎপাদন (হর্টিকালচার প্রোডাক্ট) সহ জলপাই, মদ তৈরির জন্য আঙ্গুর, পেস্তাবাদাম এর বাণিজ্যিক চাষ করত। তাদের আবাসের চারদিকে শস্য বিশেষতঃ গম, বার্লির আবাদ করা হত। গ্রীষ্মের শুরুতে ফসল তোলা হত, আবার ট্রান্সুমান নোমাডিকরা পশু পালন, বর্ষা মৌসুমে পশুর পালের সাথে থাকা, ফসলের মুড়াসদৃশ স্থানে পশু চড়াতো গ্রীষ্মকালে, যার পাশেই থাকতো পানির ব্যবস্থা । গেজার ক্যালেন্ডার ও বাইবেলের বর্ষপঞ্জীতে এজাতীয় কৃষিচক্রের প্রমাণ পাওয়া যায়।

 
দ্রুত জলবায়ূ পরিবর্তনকালীন সময়ে ভূমধ্যসাগরীয় সে ধরনের মিশ্র কৃষি পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যায়; অন্যদিকে জীবননির্ভর খাদ্যসামগ্রী রাখার কারণে বাণিজ্যিক উৎপাদন হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। মেষপালন ছিল নোমাডিকদের বছরভিত্তিক কর্মকান্ড, অন্যদিকে উপজাতি সম্প্রদায় ইউফ্রেটিস নদীর উত্তর প্রান্তে বা মিশরীয় বদ্বীপের  দক্ষিণে মেষপাল নিয়ে চক্রাকারে ঘুরে  ফিরে জীবিকা নির্বাহ করত। মাঝে মধ্যে উপজাতি সর্দাররা শত্রুপক্ষের বসতির উপরে অবরোধ বা হামলা করে তাদের আনুগত্য আদায় করত, বণিকদের উপর কর ধার্য করত। নগরগুলোর উপর হামলা ও পাল্টা হামলা বা প্রতিবেশি দেশে হস্তক্ষেপ করতে গিয়ে উপজাতি সর্দাররা মাঝে মাঝে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হত। এর ফলে আন্তঃউপজাতি দ্বন্দ্ব প্রকট হত। বাইবেলের প্যাট্রিয়ার্কাল গল্পে এ জাতীয় সামাজিক চিত্র ফুটে উঠেছে। মেসোপটেমিয়ায় আক্কাদিয়ান সাম্রাজ্যের পতন ও মিশরের প্রথম উত্থানের সময় হাইকসোস আক্রমণ ও অ্যাসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় মধ্য ব্রোঞ্জ যুগের পতনের সময় ক্যানানাইট এলাকা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা দুর্বল হতে থাকে; মিশর, ব্যাবিলনীয়া ও কিছুটা কম হলেও অ্যাসিরীয়া তাদের বিচ্ছিন্নতা পরিহার করে। জলবায়ু স্থির হলে উপকূলীয় এলাকায় ফিলিস্তিন ও ফিনিশিয়ান এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্য চালু হয়। হেবরন হয়ে কাদেশ, বার্নিয়া, লাচিস, জেরুজালেম, বেথেল, সামারিয়া, সেসেম, শিলগ থেকে গ্যালিলি হয়ে জেজরিল, হাজর এবং মেগিডো পর্যন্ত বাজার অবকাঠামো উন্নীত করার ফলে, ব্যবসা বাণিজ্য অতিরিক্ত করারোপ থেকে  রক্ষা পায়। এ অঞ্চলের দ্বিতীয় সারির নগরগুলোও উন্নত হতে থাকে। ইলাথ, টিমনা, ইডম, মোয়াব, আম্মান পর্যন্ত ৩য় বাণিজ্য পথ (রুট) সম্প্রসারণ করা হয়। যুদাহ ও সামারিয়ার আদি রাজ্যসমূহ (যেমন ফিলিস্টাইন ও তারিন) ছিল ২য় বাণিজ্য পথ, তবে আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

 
পরিশেষে এ সকল উন্নতির সুবাদে অনেক শক্তিশালী প্রতিবেশি দেশ যেমন প্রাচীন মিশর, অ্যাসিরীয়া, ব্যাবিলনিয়া, প্রাচীন গ্রীক, পার্সিয়ান ও রোমানদের উত্থান ঘটে। যারা ক্যানানাইটদের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, কর-খাজনা আরোপ করে। বিলম্বিত ক্যানানাইট সভ্যতা তখনই পতনোন্মুখ হয় যখন গ্রীক-রোমান সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করতে থাকে। পরে বাইজেন্টাইন ও উমাইয়া খেলাফতের বিস্তৃতি ঘটে। এখনো সিরিয়ার ক্ষুদ্র পল্লীতে ক্যানানাইট সভ্যতার ভাষাতত্ত্বের দুটি শাখাওয়োস্টার্ন আরামিক অনুশীলন করা হয় যেখানে মুখে বলার ভাষা হিসেবে ১০০ খ্রীষ্টাব্দে ফিনিশিয়ান ক্যানানাইট বিলুপ্ত হয়েছে। আক্কাদিয়ান শাখার ইস্টার্ন আরামিক এখনো অ্যাসিরীয়, ইরাক, ইরান, উত্তর সিরিয়া ও দক্ষিণ তুরস্কে ব্যবহৃত হচ্ছে।


মধ্য ব্রোঞ্জ যুগে (২০০০-১৫৫০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে) ক্যানানাইট নগরের অবশিষ্টাংশ ধারণ করেছিল তেল কাবরী। সে সময় এ নগরটি পশ্চিম গ্যালিলির নগরসমূহের নগর ছিল, নগরের কেন্দ্রে ছিল একটি রাজপ্রাসাদ। তেল কাবরী ছিল একমাত্র ক্যানানাইট নগর, যার পুরোটাই খনন করা দরকার, কারণ নগর পরিত্যক্ত হবার পরে এর অবশিষ্টাংশের উপরে অন্য কোন নগর তৈরি করা হয়নি। এটি উল্লেখ্য কারণ প্রধান এক্সট্রা ক্যানানাইট সংস্কৃতির প্রভাব সম্বলিত ছিল মিনোয়ান; মিনোয়ান স্টাইলে রাজপ্রাসাদটি সুসজ্জিত করা হয়।

 
জেনেটিক গবেষণা


২০২০ সালে পরিচালিত একটি জেনেটিক গবেষণায় দেখা যায়, ব্রোঞ্জ যুগের ক্যানানাইট জনসংখ্যা স্থানীয় নিওলিথিক জনগণ ও চ্যালকোলিথিক জাগরোস পর্বতমালার জনগণের মিশ্রণ থেকে আগত। গবেষকদের মতে, ২৫০০ থেকে ১০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের মধ্যে জাগরোস/অথবা ককেসাস থেকে ধারাবাহিকভাবে লেভান্তে অভিবাসনের ফলেই সম্ভবতঃ এ মিশ্রণ ঘটেছে। গবেষণায় আরও দেখা যায়, অধিকাংশ আধুনিক ইহুদি ও লেভান্তিন আরব-ভাষী গ্রুপগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন ক্যানানাইট জনগণ। ঐ জনগণের ৫০% অথবা ততোধিক অংশের পূর্বপুরুষরা ব্রোঞ্জ যুগের লেভান্তে ও চ্যালকোলিথিক জাগরোসে বসবাস করতেন। আধুনিক যুগের গ্রুপগুলোর পুরুষতান্ত্রিকতা থাকলেও প্রাচীন ডিএনএ ডাটা দিয়ে তা মডেল করা সম্ভব নয়, ব্রোঞ্জ যুগের ঐ অঞ্চলের অতিরিক্ত জেনেটিক উপাত্ত একান্ত গুরুত্বপূর্ণ।


ইহুদি ও খ্রীষ্টান ধর্মগ্রন্থ


হিব্রু বাইবেল


ক্যানান ও ক্যানানাইট শব্দগুলো হিব্রু বাইবেলে ১৬০ বার উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানতঃ তোরাহ ও দ্য  বুক অফ যশুয়া এন্ড জাজেস অংশে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক ও টেক্সট প্রমাণে যেহেতু এই ধারণাকে সমর্থন করা হচ্ছে যে, আদি ইসরায়েলীরা নিজেরাই ছিল ক্যানানাইট, তাই বাইবেলীয় ইতিহাস ক্রমশঃ জটিলতর হচ্ছে। হিব্রু বাইবেলে যেখানে প্রাচীন ইসরায়েলী থেকে ক্যানানাইট জাতিসত্তা বিবর্তন লাভ করেছে বলে বলা হয়েছে, জনাথন টাব ও মার্ক তাঁদের প্রত্নতাত্ত্বিক ও ভাষাতাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় বলেছেন- ইসরায়েল ও যুদাহ রাজ্যই ক্যানানাইট সংস্কৃতির ভিত্তিভূমি।

 
হিব্রু বাইবেলে যে পূর্বপুরুষকে ক্যানান বলা হয় তিনি নুহুর নাতিদের একজন। হামের অভিশাপ  নামে অভিহিত বর্ণনায় তার সম্পর্কে জানা যায় যে চিরস্থায়ী দাসত্বের জন্য ক্যানানকে অভিশপ্ত করা হয়েছিল, কারণ তার পিতা হাম মদাসক্ত, উলঙ্গ নুহুকে দেখে ফেলেছিলো। বাইবেলে সে সময়কার দেখে ফেলা বলতে যৌন ইঙ্গিত প্রদান করত, যেমন লেভিটিকাস ২০:১১ তে যে লোকটি তার পিতার স্ত্রীর সাথে শয়ন করেছিলেন, সে তার পিতার নগ্নতা উন্মুক্ত করেছিল। ফলে, হাম কর্তৃক কি ধরনের নীতিভ্রষ্টতা বা অনৈতিকতা এবং মাতৃ অনাচার সাধিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে ব্যাখ্যাদানকারীগণ বিভিন্ন সম্ভাবনার ইঙ্গিত প্রদান করেছেন।


বুক অফ জেনেসিসের অনুচ্ছেদে টেবিল অফ নেশনস্ এ ক্যানানাইটদেরকে ক্যানানের উত্তরসুরী বলে অভিহিত করা হয়েছে। জেনেসিস ১০:১৫ তে বলা হয়েছে:


ক্যানান হচ্ছে সিডনের পিতা, তার ফার্স্টবর্ন; এবং হিট্টি, জেবুসাইট, আমোরাইট, গিরাগাসাইট, হিভিটস্, আর্কাইটস্, সিনিটস্, আর্ভাডাইটস্, জেমারাইটস্ এবং হামাথাইটসদের। পরবর্তীকালে, ক্যানানাইট বংশসমূহ বিক্ষিপ্তভাবে বিস্তৃত হয়ে সিডন থেকে ক্যানানের সীমান্ত হয়ে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে পৌছে জেরার হয়ে গাজা পৌছে। এরপরে তারা জর্ডান উপত্যকার ভেতর দিয়ে সোদম, গোমোরাহ, আদমাহ ও জেবোইম হয়ে লাশা পৌছে।


ধারণা করা হয়, ক্যানানাইট অধিবাসীরা ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে বসতি স্থাপন করেছিল (যশুয়া ৫:), লেবানন হয়ে ফিনিশিয়া (ইশিয়াহ ২৩:১১) পৌছে সেখান থেকে ফিলিস্টিয়া যাবার পথে গাজা উপত্যকা অতিক্রম করে এবং পরে জর্ডান উপত্যকায় যায় (যশুয়া ১১:, নাম্বার ১৩:২৯, জেনেসিস ১৩:১২)

 
ফিলিস্টাইন যখন ক্যানানাইট প্রতিবেশির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, তখন তা উপজাতি ক্যানানাইট ছিল না এবং মিজরাইমের অধস্তন বংশ পরম্পরা হিসেবে টেবিল অফ ন্যাশনসে তালিকাভুক্ত ছিল। আরামিয়ানস্, মোয়াবাইট, এ্যামোনাইট, মিডিয়ানাইট এবং ইডোমাইটরা শেম বা আব্রাহাম এর বংশধর যারা জেনেটিক্যালি ক্যানানাইট ও আমোরাইট থেকে আলাদা আর ক্যানানের সন্তান হলো হীথ যিনি হিট্টাইটদের প্রতিনিধিত্ব করে।


শেইর পর্বতের সাবেক হোরাইটদেরকে ক্যানানাইট (হিভিট) বলা হলেও এ বর্ণনার সমর্থনে প্রত্যক্ষ কোন প্রমাণ নেই। আপার মেসোপটেমিয়ায় বসবাসরত হুরিয়ানরা হুরিয়ান ভাষায় কথা বলত।


বাইবেলীয় সীমান্ত

 
বাইবেলীয় ব্যবহারে নামটি জর্ডান নদীর পূর্ব পাড়ের এলাকা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। বলা হত ক্যানানাইটরা সাগর তীর, জর্ডানের পাশে (বুক অফ নাম্বার ১৩:২৯) ও জর্ডানে (বুক অফ যশুয়া ২২:) বসবাস করছে। জন এন. অসওয়াল্ট অভিমত প্রকাশ করেন যে, জর্ডানের পশ্চিমের ভূমি ও জর্ডানের পূর্ব দিকের পৃথক ভূমি নিয়ে ক্যানান গঠিত। অসওয়াল্ট আরও যোগ করেন যে, “বাইবেলে ক্যানান একটি পৌরাণিক চরিত্র ধারণ করেছে।” ভূমিটি যেহেতু দেবতার দান তাই এটি প্রাচুর্যেরও কেন্দ্র। বুক অফ নাম্বার ৩৪:২ এ একটি শব্দসমষ্টি হচ্ছে, “ক্যানানের মাটি তার সীমানা দ্বারা সংজ্ঞায়িত।সীমানা তখন নাম্বার ৩৪:-১২ তে চিত্রিত। ক্যানানাইট শব্দটি সমতল থেকে বিশেষতঃ নীচু এলাকার অধিবাসীদের বোঝাতে বাইবেলীয় হিব্রুতে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষতঃ যারা সাগর উপকূল ও জর্ডান নদীর তীরে বসবাস করত। অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারা নিচু এলাকা পছন্দ করত না।

 
ক্যানান অনুসন্ধান

 
ইয়াহওয়েহ প্রতিজ্ঞা করে বলেন যে, বুক অফ জেনেসিসে আব্রাহামকে প্রদত্ত ক্যানানের মাটি এবং পরিশেষে তা ইসরায়েলী ও আব্রাহামের উত্তরসুরীদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। বাইবেলীয় হিব্রুতে ইসরায়েলীদের ক্যানান অনুসন্ধানকে সাবেক পয়গম্বরঅথবা নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন বুক অফ যশুয়ায় জাজেস, স্যামুয়েল ও রাজা নামে বর্ণনা করা হয়েছে। এ সকল গ্রন্থে মুসা নবীর মৃত্যুর পরে যশুয়ার নেতৃত্বে  ইসরায়েলী কর্তৃক ক্যানানে প্রবেশের  বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। ক্যানানের মাটিকে ইসরায়েলী ভূমি নামে পুণঃ নামকরণ করাই প্রতিজ্ঞাকৃত ভূমিতে ইসরায়েলী বিজয় নামে চিহ্নিত করা হয়।

 
ক্যানানাইটদেরকে সাতটি থেকে একটিমাত্র জাতিগত আঞ্চলিক বিভাজনের জাতিসত্তা বলা যেতে পারে, এক্সোডাসের পরে ইসরায়েলীরা যাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। অন্যান্য জাতিসত্তাগুলো ছিল হিট্টি, গীর্জাসাাই্ট, অ্যামোরাইট, পেরিজাইট, হিভিটস্ এবং জেবুসাইট (ডেটেরোনমি ৭:)৬১৩ টির মধ্যে একটি ঐশী আদেশে বলা হয়েছে, ৬টি  ক্যানানাইট জাতির নগরের কোন বাসিন্দাই (একমাত্র গীর্জাসাাইট ব্যতীত) বেঁচে ছিলেন না (ডেটেরোনমি ২০:১৬)

 
৭৩৮ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে নিও অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য ইসরায়েল এলাকাটি দখল করে নেয়। ৫৮৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে যুদাহ রাজ্য নিও অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮ অথবা ৩০ মাসব্যাপী একটি অবরোধের ফলে জেরুজালেম নগরের পতন হয়। ৫৮৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে যুদাহের অধিকাংশ এলাকা আক্রান্ত হয়েছিল এবং সাবেক রাজ্যটির জনসংখ্যা ও অর্থনীতি মাত্রাতিরিক্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে।

 
নিউ টেস্টামেন্ট


নিউ টেস্টামেন্টের মাত্র দুস্থানে ক্যানান শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে: উভয় বারই ওল্ড টেস্টামেন্টের কাহিনীর সংক্ষিপ্তায়ন করতে গিয়ে খ্রীষ্টের দ্বাদশ শিষ্যের কর্মকান্ড বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া, প্রাপ্ত খনানিয়া শব্দটি ম্যাথিউস ভার্সন অফ দ্য এক্সরসিজম অফ দি সিরোফোনেসিয়ান ওম্যানস্ ডটার, যেখানে গসপেল অফ মার্কে সিরোফোনেসিয়ান শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

 
ক্যানান নামটির ব্যবহার

   
সেকেন্ড টেম্পল পিরিয়ডে (৫৩০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ৭০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) হিব্রু ভাষায় ক্যানানাইট বলতে আদিবাসী বোঝাত না, বরং বণিকএর সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বুক অফ জব ৪০:৩০ অথবা বুক অফ প্রোভার্ব ৩১:২৪ এ বণিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।


ক্যানানাইট নামটি পরবর্তীকালে ৫০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ থেকে প্রাচীন গ্রীক ভাষায় জনগণের ভাষা এবং ফিনিশিয়া ও পরবর্তী  ক্যানানাইট ভাষী থেকে কার্থেজ (৯ম খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) ভাষীতে রূপান্তরিত হয়। উত্তর আফ্রিকার পুনিকদের (চানানী) আত্মপরিচয়েও নামটি ব্যবহৃত হত। হিব্রু বাইবেলে পরবর্তীকালে ক্যানানাইট ও ফিনিশিয়দের এই সুস্পষ্ট ব্যবহার দেখা যায় যেমন বুক অফ জাকারিয়াহ এর শেষদিকে বণিক শ্রেণী অথবা ইসরায়েল ও প্রতিবেশি সিডন ও টায়ারের একেশ্বরবাদী উপাসনাকারী বোঝাতে ব্যবহৃত হত। আবার নিউ টেস্টামেন্টে এর একক স্বাধীন ব্যবহার দেখা যায় (যেখানে এর বিকল্প সিরোফিনিশিয়ান দুটো সমান্তরাল উপায়ে ব্যবহৃত হয়েছে)

 

ক্যানানের সেপ্টুয়াজিন্ট (৩য় ও ২য় খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ) ভাষায় অনুবাদ হচ্ছে ফিনিশিয়া।

 
উত্তরাধিকার


প্রতিজ্ঞাকৃত ভূমির সমার্থক ব্যবহার হচ্ছে ক্যানান যেমন ক্যানানের আনন্দময় বেলাভূমিগানটিতে হে ভ্রাতা, তুমি কি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে ক্যানানের আনন্দময় বেলাভূমিতে,” ক্যানানের কথা এভাবে ব্যবহৃত হয়েছে যা পরবর্তীকালে ব্যাটল হাইম অফ দ্য রিপাবলিকে পরিণত হয়।

 

১৯৩০ ও ১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দে প্যালেস্টাইনে কিছু সংস্কারবাদী ইহুদি পন্ডিত ক্যানানতত্ত্ব খুঁজে পেয়েছেন যাতে, ইহুদি নয়, বরং একক হিব্রু পরিচিতি, ক্যানানাইটের আদি ইতিবৃত্ত, সংস্কৃতি অনুসন্ধান করেন।



Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak