Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

বিভক্ত গতিপথে বাংলার রাজনীতি

সম্ভবতঃ ১৯৮১ সালের জানুয়ারী মাসের দিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান আমাদের এলাকা অর্থাৎ পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী থানার পত্তাশী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে গিয়েছিলেন স্বনির্ভর খাল খনন কর্মসূচীর আওতায় খনন করা একটি খালের উদ্বোধন করতে। জনসভাটি হয়েছিল বাড়ীর পূর্ব পার্শ্বের একটি মাঠে। অজো পড়াগায়ের অতোটা গভীরে ঐ প্রথম কোন রাষ্ট্রপতির পা পড়েছিল। জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩১ মার্চ বিদায় নিলেন। খালটি অবশ্য আজও রয়ে গেছে।

আমার বয়স তখন ৭ বছর। আমি রাষ্ট্রপতিকে খুব কাছ থেকেই দেখেছিলাম। কেন জানি না ময়দানের সেই স্মৃতি আজও আমার কাছে জীবন্ত আর অম্লান। হয়তো অতোটা কম বয়সে দেখা ওরকম একটা মহাসমাগম আমার ছোট মনের উপর গভীর রেখাপাত করেছিল। জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর আমি আমার গ্রামের মানুষকে অনেক শোকাহত হতে দেখেছি। আমার মনে হয় সেদিনের কেউ কেউ সেই শোক আজও বহন করে।

বাংলার মানুষ রাজনীতিকে বরাবরই দেখেছে আবেগের বায়োস্কোপের ভেতর দিয়ে। রাজনীতিতে তাদের বেশীর ভাগেরই প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়নি। কিন্তু তাই বলে তারা যে খুব একটা দূরে রয়েছিল তা কিন্তু নয়। তারা সময়ে সময়ে উঁকি দিয়েছে। কথা বলেছে। ভোট দিয়েছে। আবার সবকিছু ভুলে গিয়ে গৃহকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ওদিকে রাজনীতির কুশীলবরাও যে থেমে ছিল তাও কিন্তু নয়। কেন্দ্রে এবং মাঝে মাঝে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথাও কোথাও রাজনীতির খেলা সবসময়ই চলমান ছিলো। এটাই স্বাভাবিক।

স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতির প্রথম সূত্রপাত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে।  ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তানের জন্মের মাত্র একমাস পরই রাষ্ট্রভাষাকে নিয়ে তমুদ্দিন মজলিস নামের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জোট মাত্র ১ মাসের মাথায় একটি চমৎকার পুস্তিকা প্রকাশ করে। প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ঐ পুস্তিকাটি ডঃ কাজী মোতাহের হোসেনের মতো বিদগ্ধ পন্ডিতের লেখায় সমৃদ্ধ ছিলো। যেখানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে জোরালো দাবী ছিল। পুস্তিকাটি নিঃসন্দেহে আমাদের ইতিহাসের সর্বপ্রথম এবং সর্বপ্রধান গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্যের একটি।
ভাষার প্রশ্নে এর পর টানা কয়েকটা বছর কেটে  গেল। এই সময় অবশ্য অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেমে থাকেনি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে প্রথম রাজনৈতিক সংগঠনের সূচনা হয়। শুরুতে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। অবশ্য আওয়ামী লীগের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংগঠন  বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ অনেক দেরীতে অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১১ই নভেম্বর জন্ম লাভ করে।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীর বিকেলে ভাষার জন্যে বাঙ্গালির যে তাজা রক্ত ঝরেছিল তার দাবী অর্জিত হয় ১৯৫৬ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারী সংবিধানের মাধ্যমে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার মাধ্যমে। অবশ্য মাঝখানে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের ঘটনাবলী সংগঠিত হয়। কিন্তু এই লেখায় আমরা সেই আলোচনায় যাবো না। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ কোথায় কিভাবে বিভক্ত হয়ে গেল।

১৯৬২তে শিক্ষা আন্দোলন হলো। এই আন্দোলন ছিল শরিফ কমিশনের প্রকাশিত রিপোর্টের বিরুদ্ধে গণ অসন্তোষের জন্যে। সরকার হামুদুর রহমান কমিশন গঠন করলেন। তারপর এলো ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন। এই ৬ দফাই উভয় পাকিস্তানের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল। বাঙ্গালী ছয় দফার হাত ধরে তর তর করে সামনে এগিয়ে গেলো। ছয় দফার এই দাবি সমূহ আদায়ের পথ ধরেই হয়েছিল ১৯৬৯ এর গণ অভ্যূত্থান। তারপর অনেক অঘটনের সেরা অঘটন ২৫শে মার্চের কালো রাত। পাকিস্তান বাংলাদেশকে আক্রমন করে সর্বশেষ ভুলটা করেছিল। সেই ভুলের মাসুল তারা দিয়েছে। মাত্র নয় মাসের মাথায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর।

এটা ছিলো পাকিস্তানের সাথে আমাদের বিভক্তি। কিন্তু এই বিভক্তিই যে শেষ কথা নয় তা আস্তে আস্তে প্রকট হতে লাগলো স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ঘটনাপ্রবাহে। আওয়ামী লীগের মধ্যে আগে থেকেই ঘাপটি মেরে থাকা ভিন্ন মতাবলম্বীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। আওয়ামী লীগের মধ্যে বঞ্চিতরা কেউ কেউ যেমন এদের সাথে যোগ দিলো তেমনি পরবর্তীতে মোশতাক সরকারের সাথেও কেউ মিশে গেলো। আরও মারাত্মক ঘটনা ঘটল যখন মঞ্চে জিয়ার আগমন ঘটল। তিনি রাতারাতি রাজনীতির দর্শনকে বদলে দিলেন। সামরিক শাসনের  পাশাপাশি একটা গনতান্ত্রিক অর্থে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা তৈরি করতে চাইলেন যার মধ্যে ইসলামের মিশেল দিলেন বাড়তি একটা ফ্লেভার তৈরির জন্যে। তাতে কাজ হলো। ইসলামী দলগুলো তার সাথে মাঠে নেমে পড়লো। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। ১৯৮১ তে তিনি একটা নোম্যান্স ল্যান্ডে বাংলাদেশকে ফেলে রেখে বিদায় নিলেন। এরপর আসলো আর এক জনের পালা। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে তিনি সবই করলেন। রাজনৈতিক দর্শন কিংবা দলীয় আদর্শ - এই শাসকের রাজনীতি কোন ভাবধারায়ই পুষ্ট ছিলো না। এদের পিছনে না ছিলো কোন রাজনৈতিক গুরু না তারা নিজেদের রাজনীতিতে ছিলেন বিশেষ কোন আদর্শের অনুসারী। ফলে যা হওয়ার তাই হলো। শুধু ক্ষমতার সময়কাল পার হলো। এছাড়াও এই সময়গুলোতে দুটি ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দলের উত্থান হলো যারা শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাভাবনার ধারক ও বাহক ছিলো। সত্যিকারের রাজনীতি জানা লোকগুলো এতোটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলো যে আমাদের রাজনীতি দিক নির্দেশনাহীন হয়ে পড়লো। বিভক্তি এতটা চরমে উঠলো যে কেউ কাউকে বিশ্বাস করা তো দূরে থাক শোনার মতো যুক্তিও অবশিষ্ট রইলো না। আমার শত ধারায় বিভক্ত হয়ে গেলাম।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak