Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

মেঘে ঢাকা চাঁদ

শহরময় কেমন যেন একটা বুনো গন্ধ। মনে হচ্ছে শহরের অবস্থাটাই হঠাৎ করে বদলে গেছে। মানুষ সর্বত্রই কি যেন কানাকানি করছে। ফরিদের মনটাও কেমন যেন আনচান করছে। আজ কি তাহলে কিছু একটা হতে যাচ্ছে। আসলে পরিস্থিতি স্বাভাবিকই আছে। কোথাও কিছু ঘটেনি। ঘটার মতো কোন অবস্থাই নেই। তবুও ফরিদ তার নাকে বুনো গন্ধটা পাচ্ছে। তার কাছে কেন জানি মনে মনে হচ্ছে লোকজন সন্দেহজনক কথাবার্তা বলছে। তারা যেন দ্রুত কোথাও পালিয়ে যাবার কিংবা লুকিয়ে পড়ার মতো একটা আচরণ করছে। ফরিদের নিজের উপরই সন্দেহ হলো। সে স্বাভাবিক আছে তো।
ফরিদ স্বাভাবিকই আছে। একটু আগেই তানিয়া ফোন করেছিল। তার সাথেও সে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছে। তানিয়া ফরিদের ছোট ফুপুর মেয়ে। কলেজে পড়ছে। তার ফুপুর ইচ্ছে ফরিদের সাথেই তার বিয়ে দেবে। ব্যাপারটা এমনই যখনই দেখা হবে তখনই এই নিয়ে সে বেশ কিছু কান্ড করে বসবে। ব্যাপারটাকে ফরিদের কাছে কেন জানি মাঝে মাঝে ন্যাকামী মনে হয়। এই যেমন সেদিন ফরিদের বাবা মার সামনেই ফুপু এমন একটা কান্ড করল যা রাতারাতি বিরক্তিকর। তানিয়া এখন বড় হয়েছে। তার জন্যেও ব্যাপরটা অস্বাভাবিক। কিন্তুু সে কিছু বলতে পারে না। শত হলেও মা তো। তাছাড়া তানিয়াও তো মনে মনে ফরিদকে পছন্দ করে। তাই তার মা যখন তাকে ফরিদের কাছে ঠেলে দিয়ে বল তোর হবু জামাই। দেখে শুনে রাখবি লাজুক ফরিদ আর তানিয়া দুজনই লাল হয়ে যায়।
আজ সকাল থেকে আবহওয়াটা কেমন যেন একটু ঘুমোট। ফরিদ বার বার ঘামছে। তার কাছে মনে হচ্ছে তার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ছে। আসলে এসব কিছুই নয়। ফরিদ সুস্থই আছে। ফার্মেসীতে তাপমাত্রা মাপিয়েছে। ৯৮.৪। স্বাভাবিক। ফরিদ একটু  নড়েচড়ে বসল। নাহ্ কোথাও কিছু হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা সে আসলে বুঝে উঠতে পারছে না তার অস্বাভাবিক কোন কারনে কোন সমস্যা তো সে দেখছে না। বেলা বাড়ছে। রৌদ্রের তেজ বাড়ার সাথে সাথে গরমও বাড়ছে।
এখন নভেম্বর মাস। এই সময় শীত পড়ার কথা। কিন্তুু ব্যাপারটা পুরো ব্যতিক্রম। শীতের বদলে উল্টো গরম পড়ছে। চারদিকে কেমন যেন একটা অস্থিরতা। এর মূল কেথায় তা ফরিদ যেমন জানে না তেমনি অন্য কেউ জানে বলেও মনে হয় না। তবে অস্থিরকর কিছু একটা ফরিদের চারপাশে যে ঘুরঘুর করছে এতে সন্দেহের কোন কারণ নেই। ফরিদ জানে সে আর যাই হোক পাগল নয়।
সময় গড়াতে থাকে। গরম যেন ক্রমশ বেড়েই চলছে ফরিদ একটা দায় সারা গোছের মুদি কাম ¯œ্যাকস দোকানে ঢুকে একটা ২৫০ মিলি এর ঠান্ডা মাউন্টেন ডিউ চেয়ে নিলো চুমুক দিতে যাবে এমন সময় ফরিদের পকেটে রাখা সবচেয়ে সস্তা দরের বহুল ব্যবহৃত নকিয়া ফোনটা বেজে উঠল। ফরিদের মায়ের কন্ঠ। তাকে খানিকটা উত্তোজিত মনে হচ্ছে। সে ফরিদকে এই মুহুর্তেই বাসায় আসতে বললো। ফরিদ বুঝে উঠতে পারলো না হঠাৎ এভাবে তলব করার কারণ কি। ফরিদ বাসার দিকে হাঁটতে গুরু করলো। বাসায় পৌঁছে ফরিদ অবাক হয়ে যায়। এক ভদ্রলোক তার মেয়েকে নিয়ে হাজরি হয়েছেন। দেখে শুনে যে কেউ বুঝতে পারবে অভিজাত পরিবারের সদস্য। ফরিদ অবশ্য সবই জানে। কিন্তুু তার অবাক হওয়ার কারণ এটাই যে তারা এখানে কেন?
ফরিদ কোন প্রকার ভদ্রতা ছাড়াই বলে বসল আপনারা এখানে কেন? কি চান?
আমরা কিছু চাইতে আসিনি বাবা। তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।
ঠিকানা খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়নি।
হয়নি কারণ আমি তোমার ঠিকানাটা যতœ করে লিখে রেখেছিলাম। তোমার হয়তো মনেও রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আমি ঢাকার অলিগলি চিনি।
এখন বলেন কি করতে হবে আমাকে?
তুমি কি বিরক্ত হচ্ছ?
না না তা হবো কেন? তবে আপনি যেভাবে আপনার মেয়েকে সাথে নিয়ে এসেছেন তাতে যে কেউ মনে করবে আমার সাথে আপনার মেয়ের কিছু একটা আছে।
না না তা হবে কেন? আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তার খুব ইচ্ছে তার বিয়েতে তুমি যাবে। তার কোন ভাই নেই। তুমি তার ভাইয়ের জায়গাটা পূরণ করবে।
আমি এমন কেউ না। আপনার ছেলের জায়গায় আমি বড়ই বেমানান। তবে আমি আসব। অতো গুরুত্বপূর্ণ কেউ হয়ে নয়। একজন সাধারন মেহমান হিসেবে।
তাতেই চলবে। আমি ওকে কথা দিয়েছি তোমাকে হাজির করবো। যাক এখন অন্ততঃ আশা করতে পারছি তোমার সম্মতির সুবাধে আমি আমার কথা রাখতে পারবো।
এতোক্ষণ পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি সুমনা। চুপচাপ বসে ফরিদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সে জানে ফরিদকে সে কোনদিনও পাবে না। দূর্ঘটনা দুজন অসম অবস্থানের মানুষকে কাছে টানতে পারে কিন্তু সারা জীবন একসাথে ধরে রাখতে পারে না। তার জন্য অনেক শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন।
ফরিদের সেই সামথ্য কিংবা সম্ভাবনা কোনটাই নেই। গরীব ঘরের ইন্টারমিডিয়েট  পাস ফরিদ দুটো পয়সা রোজগারের জন্য সারাদিন পথ হাঁটে। কোন আবেগই দুটো ভিন্ন জীবনের এতোটা দূরত্ব ঘোঁচাতে পারে না। সুমনা এই বাস্তবতা বোঝে। আর বোঝে বলেই তার কষ্ট হয় না।
চলে যাবার সময় শুধু একটা কথাই বলে। আমার ইচ্ছা পূরণ না হলেও তানিয়ার ইচ্ছেটা পূরণ করবেন। খালাম্মা তানিয়াকে খুব পছন্দ করে। তার সাথে আমার এ বিষয়ে কথা হয়েছে।
ফরিদ কিছুই বলে না। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা  হয়। ফরিদ একটা নিভৃত জায়গায় একাকী বসে থাকে। আস্তে আস্তে চাঁদ ওঠে। সেই চাঁদ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে হতে এক সময় পুরোটা আকাশ ছেয়ে ফেলে। ফরিদ তবুও বসে থাকে। রাত বাড়তে থাকে। ফরিদ লক্ষ্য করে সেই পরিপূর্ণ চাঁদটাই একসময় আস্তে আস্তে মেঘে ঢেকে যেতে থাকে।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak