শহরময় কেমন যেন একটা বুনো গন্ধ। মনে হচ্ছে শহরের অবস্থাটাই হঠাৎ করে বদলে গেছে। মানুষ সর্বত্রই কি যেন কানাকানি করছে। ফরিদের মনটাও কেমন যেন আনচান করছে। আজ কি তাহলে কিছু একটা হতে যাচ্ছে। আসলে পরিস্থিতি স্বাভাবিকই আছে। কোথাও কিছু ঘটেনি। ঘটার মতো কোন অবস্থাই নেই। তবুও ফরিদ তার নাকে বুনো গন্ধটা পাচ্ছে। তার কাছে কেন জানি মনে মনে হচ্ছে লোকজন সন্দেহজনক কথাবার্তা বলছে। তারা যেন দ্রুত কোথাও পালিয়ে যাবার কিংবা লুকিয়ে পড়ার মতো একটা আচরণ করছে। ফরিদের নিজের উপরই সন্দেহ হলো। সে স্বাভাবিক আছে তো।
ফরিদ স্বাভাবিকই আছে। একটু আগেই তানিয়া ফোন করেছিল। তার সাথেও সে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছে। তানিয়া ফরিদের ছোট ফুপুর মেয়ে। কলেজে পড়ছে। তার ফুপুর ইচ্ছে ফরিদের সাথেই তার বিয়ে দেবে। ব্যাপারটা এমনই যখনই দেখা হবে তখনই এই নিয়ে সে বেশ কিছু কান্ড করে বসবে। ব্যাপারটাকে ফরিদের কাছে কেন জানি মাঝে মাঝে ন্যাকামী মনে হয়। এই যেমন সেদিন ফরিদের বাবা মার সামনেই ফুপু এমন একটা কান্ড করল যা রাতারাতি বিরক্তিকর। তানিয়া এখন বড় হয়েছে। তার জন্যেও ব্যাপরটা অস্বাভাবিক। কিন্তুু সে কিছু বলতে পারে না। শত হলেও মা তো। তাছাড়া তানিয়াও তো মনে মনে ফরিদকে পছন্দ করে। তাই তার মা যখন তাকে ফরিদের কাছে ঠেলে দিয়ে বল তোর হবু জামাই। দেখে শুনে রাখবি লাজুক ফরিদ আর তানিয়া দুজনই লাল হয়ে যায়।
আজ সকাল থেকে আবহওয়াটা কেমন যেন একটু ঘুমোট। ফরিদ বার বার ঘামছে। তার কাছে মনে হচ্ছে তার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ছে। আসলে এসব কিছুই নয়। ফরিদ সুস্থই আছে। ফার্মেসীতে তাপমাত্রা মাপিয়েছে। ৯৮.৪। স্বাভাবিক। ফরিদ একটু নড়েচড়ে বসল। নাহ্ কোথাও কিছু হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা সে আসলে বুঝে উঠতে পারছে না তার অস্বাভাবিক কোন কারনে কোন সমস্যা তো সে দেখছে না। বেলা বাড়ছে। রৌদ্রের তেজ বাড়ার সাথে সাথে গরমও বাড়ছে।
এখন নভেম্বর মাস। এই সময় শীত পড়ার কথা। কিন্তুু ব্যাপারটা পুরো ব্যতিক্রম। শীতের বদলে উল্টো গরম পড়ছে। চারদিকে কেমন যেন একটা অস্থিরতা। এর মূল কেথায় তা ফরিদ যেমন জানে না তেমনি অন্য কেউ জানে বলেও মনে হয় না। তবে অস্থিরকর কিছু একটা ফরিদের চারপাশে যে ঘুরঘুর করছে এতে সন্দেহের কোন কারণ নেই। ফরিদ জানে সে আর যাই হোক পাগল নয়।
সময় গড়াতে থাকে। গরম যেন ক্রমশ বেড়েই চলছে ফরিদ একটা দায় সারা গোছের মুদি কাম ¯œ্যাকস দোকানে ঢুকে একটা ২৫০ মিলি এর ঠান্ডা মাউন্টেন ডিউ চেয়ে নিলো চুমুক দিতে যাবে এমন সময় ফরিদের পকেটে রাখা সবচেয়ে সস্তা দরের বহুল ব্যবহৃত নকিয়া ফোনটা বেজে উঠল। ফরিদের মায়ের কন্ঠ। তাকে খানিকটা উত্তোজিত মনে হচ্ছে। সে ফরিদকে এই মুহুর্তেই বাসায় আসতে বললো। ফরিদ বুঝে উঠতে পারলো না হঠাৎ এভাবে তলব করার কারণ কি। ফরিদ বাসার দিকে হাঁটতে গুরু করলো। বাসায় পৌঁছে ফরিদ অবাক হয়ে যায়। এক ভদ্রলোক তার মেয়েকে নিয়ে হাজরি হয়েছেন। দেখে শুনে যে কেউ বুঝতে পারবে অভিজাত পরিবারের সদস্য। ফরিদ অবশ্য সবই জানে। কিন্তুু তার অবাক হওয়ার কারণ এটাই যে তারা এখানে কেন?
ফরিদ কোন প্রকার ভদ্রতা ছাড়াই বলে বসল আপনারা এখানে কেন? কি চান?
আমরা কিছু চাইতে আসিনি বাবা। তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।
ঠিকানা খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়নি।
হয়নি কারণ আমি তোমার ঠিকানাটা যতœ করে লিখে রেখেছিলাম। তোমার হয়তো মনেও রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আমি ঢাকার অলিগলি চিনি।
এখন বলেন কি করতে হবে আমাকে?
তুমি কি বিরক্ত হচ্ছ?
না না তা হবো কেন? তবে আপনি যেভাবে আপনার মেয়েকে সাথে নিয়ে এসেছেন তাতে যে কেউ মনে করবে আমার সাথে আপনার মেয়ের কিছু একটা আছে।
না না তা হবে কেন? আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তার খুব ইচ্ছে তার বিয়েতে তুমি যাবে। তার কোন ভাই নেই। তুমি তার ভাইয়ের জায়গাটা পূরণ করবে।
আমি এমন কেউ না। আপনার ছেলের জায়গায় আমি বড়ই বেমানান। তবে আমি আসব। অতো গুরুত্বপূর্ণ কেউ হয়ে নয়। একজন সাধারন মেহমান হিসেবে।
তাতেই চলবে। আমি ওকে কথা দিয়েছি তোমাকে হাজির করবো। যাক এখন অন্ততঃ আশা করতে পারছি তোমার সম্মতির সুবাধে আমি আমার কথা রাখতে পারবো।
এতোক্ষণ পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি সুমনা। চুপচাপ বসে ফরিদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সে জানে ফরিদকে সে কোনদিনও পাবে না। দূর্ঘটনা দুজন অসম অবস্থানের মানুষকে কাছে টানতে পারে কিন্তু সারা জীবন একসাথে ধরে রাখতে পারে না। তার জন্য অনেক শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন।
ফরিদের সেই সামথ্য কিংবা সম্ভাবনা কোনটাই নেই। গরীব ঘরের ইন্টারমিডিয়েট পাস ফরিদ দুটো পয়সা রোজগারের জন্য সারাদিন পথ হাঁটে। কোন আবেগই দুটো ভিন্ন জীবনের এতোটা দূরত্ব ঘোঁচাতে পারে না। সুমনা এই বাস্তবতা বোঝে। আর বোঝে বলেই তার কষ্ট হয় না।
চলে যাবার সময় শুধু একটা কথাই বলে। আমার ইচ্ছা পূরণ না হলেও তানিয়ার ইচ্ছেটা পূরণ করবেন। খালাম্মা তানিয়াকে খুব পছন্দ করে। তার সাথে আমার এ বিষয়ে কথা হয়েছে।
ফরিদ কিছুই বলে না। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। ফরিদ একটা নিভৃত জায়গায় একাকী বসে থাকে। আস্তে আস্তে চাঁদ ওঠে। সেই চাঁদ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে হতে এক সময় পুরোটা আকাশ ছেয়ে ফেলে। ফরিদ তবুও বসে থাকে। রাত বাড়তে থাকে। ফরিদ লক্ষ্য করে সেই পরিপূর্ণ চাঁদটাই একসময় আস্তে আস্তে মেঘে ঢেকে যেতে থাকে।
ফরিদ স্বাভাবিকই আছে। একটু আগেই তানিয়া ফোন করেছিল। তার সাথেও সে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছে। তানিয়া ফরিদের ছোট ফুপুর মেয়ে। কলেজে পড়ছে। তার ফুপুর ইচ্ছে ফরিদের সাথেই তার বিয়ে দেবে। ব্যাপারটা এমনই যখনই দেখা হবে তখনই এই নিয়ে সে বেশ কিছু কান্ড করে বসবে। ব্যাপারটাকে ফরিদের কাছে কেন জানি মাঝে মাঝে ন্যাকামী মনে হয়। এই যেমন সেদিন ফরিদের বাবা মার সামনেই ফুপু এমন একটা কান্ড করল যা রাতারাতি বিরক্তিকর। তানিয়া এখন বড় হয়েছে। তার জন্যেও ব্যাপরটা অস্বাভাবিক। কিন্তুু সে কিছু বলতে পারে না। শত হলেও মা তো। তাছাড়া তানিয়াও তো মনে মনে ফরিদকে পছন্দ করে। তাই তার মা যখন তাকে ফরিদের কাছে ঠেলে দিয়ে বল তোর হবু জামাই। দেখে শুনে রাখবি লাজুক ফরিদ আর তানিয়া দুজনই লাল হয়ে যায়।
আজ সকাল থেকে আবহওয়াটা কেমন যেন একটু ঘুমোট। ফরিদ বার বার ঘামছে। তার কাছে মনে হচ্ছে তার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ছে। আসলে এসব কিছুই নয়। ফরিদ সুস্থই আছে। ফার্মেসীতে তাপমাত্রা মাপিয়েছে। ৯৮.৪। স্বাভাবিক। ফরিদ একটু নড়েচড়ে বসল। নাহ্ কোথাও কিছু হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা সে আসলে বুঝে উঠতে পারছে না তার অস্বাভাবিক কোন কারনে কোন সমস্যা তো সে দেখছে না। বেলা বাড়ছে। রৌদ্রের তেজ বাড়ার সাথে সাথে গরমও বাড়ছে।
এখন নভেম্বর মাস। এই সময় শীত পড়ার কথা। কিন্তুু ব্যাপারটা পুরো ব্যতিক্রম। শীতের বদলে উল্টো গরম পড়ছে। চারদিকে কেমন যেন একটা অস্থিরতা। এর মূল কেথায় তা ফরিদ যেমন জানে না তেমনি অন্য কেউ জানে বলেও মনে হয় না। তবে অস্থিরকর কিছু একটা ফরিদের চারপাশে যে ঘুরঘুর করছে এতে সন্দেহের কোন কারণ নেই। ফরিদ জানে সে আর যাই হোক পাগল নয়।
সময় গড়াতে থাকে। গরম যেন ক্রমশ বেড়েই চলছে ফরিদ একটা দায় সারা গোছের মুদি কাম ¯œ্যাকস দোকানে ঢুকে একটা ২৫০ মিলি এর ঠান্ডা মাউন্টেন ডিউ চেয়ে নিলো চুমুক দিতে যাবে এমন সময় ফরিদের পকেটে রাখা সবচেয়ে সস্তা দরের বহুল ব্যবহৃত নকিয়া ফোনটা বেজে উঠল। ফরিদের মায়ের কন্ঠ। তাকে খানিকটা উত্তোজিত মনে হচ্ছে। সে ফরিদকে এই মুহুর্তেই বাসায় আসতে বললো। ফরিদ বুঝে উঠতে পারলো না হঠাৎ এভাবে তলব করার কারণ কি। ফরিদ বাসার দিকে হাঁটতে গুরু করলো। বাসায় পৌঁছে ফরিদ অবাক হয়ে যায়। এক ভদ্রলোক তার মেয়েকে নিয়ে হাজরি হয়েছেন। দেখে শুনে যে কেউ বুঝতে পারবে অভিজাত পরিবারের সদস্য। ফরিদ অবশ্য সবই জানে। কিন্তুু তার অবাক হওয়ার কারণ এটাই যে তারা এখানে কেন?
ফরিদ কোন প্রকার ভদ্রতা ছাড়াই বলে বসল আপনারা এখানে কেন? কি চান?
আমরা কিছু চাইতে আসিনি বাবা। তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।
ঠিকানা খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়নি।
হয়নি কারণ আমি তোমার ঠিকানাটা যতœ করে লিখে রেখেছিলাম। তোমার হয়তো মনেও রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আমি ঢাকার অলিগলি চিনি।
এখন বলেন কি করতে হবে আমাকে?
তুমি কি বিরক্ত হচ্ছ?
না না তা হবো কেন? তবে আপনি যেভাবে আপনার মেয়েকে সাথে নিয়ে এসেছেন তাতে যে কেউ মনে করবে আমার সাথে আপনার মেয়ের কিছু একটা আছে।
না না তা হবে কেন? আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তার খুব ইচ্ছে তার বিয়েতে তুমি যাবে। তার কোন ভাই নেই। তুমি তার ভাইয়ের জায়গাটা পূরণ করবে।
আমি এমন কেউ না। আপনার ছেলের জায়গায় আমি বড়ই বেমানান। তবে আমি আসব। অতো গুরুত্বপূর্ণ কেউ হয়ে নয়। একজন সাধারন মেহমান হিসেবে।
তাতেই চলবে। আমি ওকে কথা দিয়েছি তোমাকে হাজির করবো। যাক এখন অন্ততঃ আশা করতে পারছি তোমার সম্মতির সুবাধে আমি আমার কথা রাখতে পারবো।
এতোক্ষণ পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি সুমনা। চুপচাপ বসে ফরিদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সে জানে ফরিদকে সে কোনদিনও পাবে না। দূর্ঘটনা দুজন অসম অবস্থানের মানুষকে কাছে টানতে পারে কিন্তু সারা জীবন একসাথে ধরে রাখতে পারে না। তার জন্য অনেক শর্ত পূরণ হওয়া প্রয়োজন।
ফরিদের সেই সামথ্য কিংবা সম্ভাবনা কোনটাই নেই। গরীব ঘরের ইন্টারমিডিয়েট পাস ফরিদ দুটো পয়সা রোজগারের জন্য সারাদিন পথ হাঁটে। কোন আবেগই দুটো ভিন্ন জীবনের এতোটা দূরত্ব ঘোঁচাতে পারে না। সুমনা এই বাস্তবতা বোঝে। আর বোঝে বলেই তার কষ্ট হয় না।
চলে যাবার সময় শুধু একটা কথাই বলে। আমার ইচ্ছা পূরণ না হলেও তানিয়ার ইচ্ছেটা পূরণ করবেন। খালাম্মা তানিয়াকে খুব পছন্দ করে। তার সাথে আমার এ বিষয়ে কথা হয়েছে।
ফরিদ কিছুই বলে না। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। ফরিদ একটা নিভৃত জায়গায় একাকী বসে থাকে। আস্তে আস্তে চাঁদ ওঠে। সেই চাঁদ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে হতে এক সময় পুরোটা আকাশ ছেয়ে ফেলে। ফরিদ তবুও বসে থাকে। রাত বাড়তে থাকে। ফরিদ লক্ষ্য করে সেই পরিপূর্ণ চাঁদটাই একসময় আস্তে আস্তে মেঘে ঢেকে যেতে থাকে।
Comments
Post a Comment