Skip to main content

Setara bibi under the lamp post - Literature - observerbd.com

Setara bibi under the lamp post - Literature - observerbd.com : The glittering city aroundLife is rich with red, blue light of neonWide sky over the headPieces of moonlight, scatteredAnd in that splashed pieces of meteorThose are taken by the scientists of NASASo height the civilization reachesThis city is the flow of happiness nowSome men like us pass the wayWith frustration

বাংলাদেশ কোন পথে

১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের জন্মের মধ্যে দিয়ে পূর্ব বাংলার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। একটি সংকর জাতি হিসেবে বরাবরই অস্থির প্রকৃতির এই জাতিটি তার ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতির মতই বৈচিত্র্যময়। ১৯৪৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই ৭০ বছরে জাতিটি যে পথ পরিক্রমা অতিক্রম করেছে তা সত্যিই তার জাতিগত ঐতিহ্যে কোন কিছু যোগ করেছে নাকি দিনে দিনে অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিয়ে গেছে সেটা অবশ্যই ভাববার বিষয়।
সময় তার নিজস্ব গতিতে অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। পৃথিবীর বুকে অনেক অধঃপতিত জাতি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড কিংবা ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো বিশেষ একটা ঈর্ষনীয় অবস্থানে চলে এসেছে। অনেক জাতি তার খাতায় অনেক কিছু যোগ করেছে। কোন কোন জাতি শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশেষ নেতৃস্থানীয় অবস্থানে চলে এসেছে। এসব সাফল্যের খবর। আনন্দ আর আবেগের খবর। কিন্তু আমরা এই ৭০ বছরে কোথা থেকে কোথায় এলাম এটা ভেবে দেখেছি কি? এই দীর্ঘ সময়ে আমরা শুধুমাত্র অজস্র অমীমাংসিত প্রশ্নের জন্ম দিয়েছি যা নিয়ে আমাদেরকে আগামী আরও ২০০ বছর ঝাগড়া ঝাটি করতে হবে। এটা কোন অর্জন নয়। বরং এর চেয়ে আমরা যদি একটা জায়গায় স্থির হয়ে থাকতাম তাও ভালো ছিলো। মন চাইলে সেখান থেকে শুরু করতে পারতাম। এখন ঘটনা আরও জটিল হয়েছে। এই ভুলগুলোর জন্ম দিতে যে সময় লেগেছে সেগুলো মুছতে হলে এর চেয়ে আরও বেশি সময় লাগবে। কিন্তু আমরা কি সেই সময় পাবো। এতদিনে পৃথিবী তার নিজস্ব ভূখন্ড ছেড়ে অন্য কোন গ্রহ নক্ষত্রে আশ্রয় না নেয়। বাঙ্গালি আজ ধনুক থেকে বেরিয়ে যাওয়া তীরে পরিণত হয়েছে। তাকে ফেরানো কঠিন।
বাজেটের আকৃতি বেড়েছে। ইট, কাঠ, পাথরের দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। বেশকিছু নগরায়ন হয়েছে। মোটামুটি ভালো একটা জিনিত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবই দারুন। কিন্তু কথা হলো আমরা আমাদের মন-মানসিকতায় কতোটা এর সাথে একমত হতে পেরেছি। মোটেও না। আর তাইতো সত্যিকারের দেশপ্রেমিক এখন যাদুঘরে ঠাঁই নিয়েছে। দেশ জুড়ে ভন্ড আর প্রতারকের রাজত্ব চলছে। একটা জাতির অভাবী হওয়া কিংবা অশিক্ষিত হওয়া তেমন কোন দুঃসংবাদ নয়। গরীবের সুপুত্র ধনীর কুপুত্রের চেয়ে অনেক বড় আশীর্বাদ। জাতি হিসেবে আমরা আজ একটা দুঃখ জনক অবস্থান এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের মুক্তির দাওয়াই এখনও অনাবিস্কৃত।
১৯৪৭ সালে আমরা যখন আলাদা হলাম যাদের সাথে জুড়ে দেওয়া হলো তাদের সাথে আমাদের কোন মতেই যায় না। এ যেন ঘোড়ার সাথে ভেড়াকে বেধে দেওয়া। একদল আশরাফ এর সাথে একদল আতরাফ কে জুড়ে দেওয়া হলো। হাজার বছরে বহু জাতির সংকরায়নের ফলে সৃষ্ট একটা বিচিত্র জাতিসত্তার অধিকারী ধর্মান্তরিত মানুষগুলো না তাদের অতীত ঐতিহ্যের সাথে মিশতে পারছিল, না পরিপূর্ণ মুসলমান হয়ে পাকিস্তানীদের সাথে মিশে যেতে পারছিলো। বাঙ্গালী আজও জানে না যে সে বাঙ্গালী না মুসলমান। এই যখন অবস্থা তখন প্রচন্ড একটা মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম। যতই দিন যাচ্ছিল আমরা আমাদের তথাকথিত স্বধর্মী এবং স্বজাতির কাছেই নিজেদের আইডেন্টিটি খুঁজতে ব্যস্ত। শুরু থেকেই একটা সমস্যা। আমরা বাঙ্গালী না পকিস্তানী নাকি মুসলমান নাকি বাঙ্গালী মুসলমান নাকি ভারতীয় নাকি এমন কিছু যা আমাদের আদৌ জানা নাই। এ প্রসঙ্গে আমার রাবনের কথাও মনে পড়ে গেল। হতে পারে সেরকম কিছু একটা। হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এতো রূপে বহুরূপী আর কোথাও দেখা যায় না। একটা অসাধারণ সমন্বয়হীনতা।
আমরা আসলে কি? বাঙ্গালী? মুসলমান? পাকিস্তানী? এসব এখনও অসীমাংসিত। অমীমাংসিত এই জন্যে যে আপনি যদি একটা জরিপ চালান অদ্ভূত সব উত্তর বেরিয়ে আসবে। একটা জাতি একবিংশ শতাব্দীতে এসেও জানে না সে আসলে কি? ব্রিটিশরা জানে তারা ব্রিটিশ। জার্মানরা জানে তারা জার্মান। ফরাসীরা জানে তারা ফরাসী। সবাই জানে। শুধু আমরা জানি না আমরা কারা। দশ জনকে জিজ্ঞাসা করলে দশ রকম জবাব। রায়ের জন্যে আদালতের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। কোন কিছু অমীমাংসিত থাকার চাইতে তার মীমাংসা হওয়া অনেক ভালো। হোক না তা বিপক্ষে। আমি নিজেকে কি বলব এই নিয়ে সঠিক কোন জবাব আমার কাছে অন্ততঃ নেই। আমাদের কাছেও নেই। আমাদের জাতীয়তাবাদ কি? বাঙ্গালী না বাংলাদেশী। কে বলতে পারবে সঠিক করে। পশ্চিম বঙ্গেও বাঙ্গালী আছে। তারা এখনও বেশির ভাগই জাতে ওঠার জন্যে হিন্দিতে কথা বলে। আমাদেরকে মানতেও রাজি না। একটা দেশ যেন একটা বিচ্ছিন্ন জনপদ। এর চেয়ে একটা কোন সুস্পষ্ট পরিচয় নির্ধারিত হওয়াই ভালো ছিলো। অবশ্য মুসলমানের জন্য অন্য কোন পরিচয়ের প্রয়োজন পরে না। কিন্তুু আমরা সেই জায়গাটায় পৌঁছাতে পারিনি। আমরা পড়ে আছি সেই নো ম্যানস ল্যান্ডে। বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৯০ জন মুসলমান। ইসলাম এদেশে যে খুব একটা নতুন তাও কিন্তুু নয়। দাওয়াত নাকি হুজুর (সাঃ) এর সময়েই এসেছিল। আরবীয়রা বীরের জাতি। তারা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু বাঙ্গালীর বহুত্ববাদ ছাড়তে বেশ সময় লেগেছিল। খাজা মাঈনুদ্দীন চিশতি, শাহজালাল, শাহপরান, শাহ মখদুম, হযরত খান জাহান আলী, নিজামউদ্দিন আউলিয়া ইত্যাদি মহান বুযুর্গের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ইসলামের বিকাশ হতে শুরু করে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে ইসলাম নি¤œস্তরের মানুষের কাছেই বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু সবচেয়ে মহান সত্য মুসলমান হওয়ার পর তার আর কোন ভেদ থাকে না। কিন্তু আমাদের রয়ে গেছে। কারণ একটাই। আমরা না পরিপূর্ণ মুসলমান না পরিপূর্ণ বাঙ্গালী। একটা অদ্ভূত চৈতন্যের ভেতর দিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী পার করে এখনও রাতারাতি একটা জগা খিচুরীতে পরিনত হয়েছি। আমরা সবাই এসব জানি। কিন্তু অত্যন্ত সুকৌশলে দিনের পর দিন তর্ক বিতর্ক করে যাচ্ছি। সত্য কথা বলতে আমাদের যত বাঁধা। আমরা মূলতঃ একটা অদ্ভূত বৈপরীত্যের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি।
একজন বিশ্ববিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিশ্বের যে সব মুসলিম দেশগুলো বিধর্মীদের জন্য হুমকি স্বরূপ উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে বাংলাদেশের নাম নেই। বুঝতে পরছেন আমাদের মুসলমান হতে আরও কিছু পথ পাড়ি দিতে হবে। তাহলে প্রশ্ন আছে আমরা কি পাশ্চাত্যের ঘরানার আধুনিক বাংলাদেশে পরিনত হতে পেরেছি। তাও পারিনি। আমরা ঘোমটা পড়ে নাচতে নেমেছি। সর্বনাশটা হয়েছে এখানে। ভোগ কিংবা উপভোগ দুটোই আমাদের কাছে অধরা মাধুরী। মন চায় ছুঁয়ে দেখি। পাছে কোথায় যেন বাঁধে। এরকম একটা দোটানার মধ্য দিয়ে পথ চলা যে কতটা কঠিণ তা বলে বোঝানো মুষ্কিল।
সবচেয়ে বড় কথা এই সমস্যা শুধু ব্যক্তি জীবনেই নয়। সমাজ অথবা রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র এর বিস্তার। সংবিধান দিয়েই শুরু করা যাক। রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতিতে। সংবিধানের শুরুতে বিস্মিল্লাহির রহমানির রহিম যোগ করে কি বুঝাতে চাইছি? রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বলতে আসলে কি বুঝায়? ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এরকম জগাঘিচুড়ী সংবিধান দিয়ে চালানোর কি দরকার। কোরআন ও সুন্নাহ্র ভিত্তিতেই চলুক। না হলে জাগতিক আইন কানুন বা লৌকিকতার দ্বারাই পরিচালিত হউক। পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্র যেভাবে চলছে। আমাদের জন্য এরকম উদ্ভট ব্যবস্থা কেন। আমরা মুসলমান। একথা বড় গলায় বলতে আমাদের আটকাচ্ছে কেন? আমরা আধুনিক একথা বলতেও বা আমাদের আটকাচ্ছে কোথায়? আমরা আসলে কি? মুসলমানের দুটো পরিচয় কি করে সম্ভব? অনেক বিষয় আছে ভাববার। ভাববার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। কিন্তু কেউ এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। মাথা ঘামানোর জন্যে কতিপয় লোক রাতারাতি কিছু লোককে ধরে গলা কেটে দিচ্ছে। কি প্রমান করতে চাচ্ছে তারা। বোঝা যাচ্ছে না কি করনীয়। কেন, কোথায়, কিভাবে জানা নাই বলে।
পেলে বা ম্যারাডোনার মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ। দারুন বিতর্ক। দুজন তো আর এক নম্বর হতে পারে না। কেউ একজন প্রথম হবে। মীমাংসা হয়নি। হবেও না। বাংলাদেশের মানুষের অবস্থাও সেই একই রকম। সবাইকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে কাউকে বিরাগভাজন করতে পারছি না। দারুন একটা জটিলতা। ঈমান আমলের ব্যাপার। সেখানেও আবার দুদিনের দুনিয়ার জন্যে অনন্ত শান্তিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। না ঘরকা না ঘাটকা। আধুনিকও হতে পারলাম না। ধর্মভীরুও হতে পারলাম না। পুরো শরীর দেখাতে শরম লাগছে। আবার একটু আধটু দেখাতেও ভালো লাগছে। এরকম একটা অবস্থায়ই আমাদের জাতীয় সত্তা এবং জাতীয় পরিচয় দুটোই আটকা পড়ে আছে। আমরা না রাজতন্ত্রে আছি। না সমাজতন্ত্রে। না সত্যিকারের গনতন্ত্রে। এখানে নির্বাচন হয়। কিন্তু তার নিয়ন্ত্রন থাকে তস্করের হাতে। এরকম নির্বাচনের দরকারই বা কি? তবুও তো সরকারকে লোক দেখানো নির্বাচন দিতে হয়।
প্রত্যেক জাতির একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য মাত্রা থাকতে হয়। থাকতে হয় সুষ্ঠ ইতিহাস। একটা দীর্ঘ ইতিহাস যা তাদের ঐতিহ্যকে গড়ে তোলে। ইউরোপের প্রত্যেকটা জাতিরই একটা নিজস্ব দীর্ঘ ইতিহাস ঐতিহ্য আছে। আমাদের ইতিহাস মূলতঃ অন্যের কর্তৃক শোষন আর লুন্ঠিত হওয়ার ইতিহাস। শাসকরা বরাবরই আগন্তুক হয়। তারা হয় আর্য না হয় কুলীন। তারা কখনই আমাদের কেউ ছিলেন না। দারুন এক বেড়াজালে ঘুরপাক খেতে খেতে মূঘল আমল, ইংরেজ আমল পাকিস্তানী আমল পেরিয়ে অবশেষে স্বাধীন বাংলাদেশ। তাও তো একেবারে কম সময় হলো না। ৪৪ বছর। কিন্তু সমাধান খোঁজার চেষ্টা কি হচ্ছে?
জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হয় প্রায়ই। জাতীয় ঐক্য আবার কি? অনৈক্য থাকলে জাতি হয় কেমন করে। ঐক্য আছে বলেই তো জাতি। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে ব্যকরণ আলাদা। আমাদের মধ্যে এখনও সেই ঐক্য নেই। আমরা কেউ মনে মনে পাকিস্তানী। কেউ বা ভারতীয়। আবার কেউ বা বাঙ্গালী। কেউ বা বাংলাদেশী। কেউ বা মুসলমান। কেউ আবার জানিও না আমি আসলে কি? একটা নিদারুন হেয়ালি জাতীয় কিছু একটা বলতে হবে। জাতীয় ইতিহাস বিহীন একটা জাতি। নিদারুন বেকায়দায় প্রতিটি দিন কেটে যাচেছ। সবাই বলছে। কেউ শুনছে না। জাতীয় মাথাওয়ালা সন্তানরা বরাবরই কোনঠাসা ছিলো।
এই একই চিত্র আমরা আমাদের সংস্কৃতিতেও দেখতে পাই। আমরা আমাদের সংস্কৃতি নিয়েও দ্বিধান্বিত। এই অঞ্চলের একটা নিজস্ব লোকজ সংস্কৃতি ছিলো। সেটা বলতে গেলে প্রায় উঠেই গেছে। অবশ্য এটার মধ্যে কিছু কিছু শিক্ষণীয় বিষয় বাদ দিলে তেমন ভালো কিছু ছিলো না। হাজার বছরের সনাতন হিন্দুু ঐতিহ্য ছিলো এর ভিত্তিমূল। এটা থেকে সরে আসা দরকার ছিলো। কিন্তু কোথায়। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট দেখে ইসলামী রেওয়াজ চালু হওয়ার কথা ছিলো। তাতো হলোই না বরং ভারত এবং পশ্চিমের মিশ্র সংস্কৃতির একটা মিশেল এর সাথে আমরা তাল মিলাতে চেষ্টা করলাম। এটার বৈশিষ্ট্য এবং গ্রহনযোগ্যতা কোনোটাই আমাদের সাথে যায় না। তবুও তাল মেলানোর চেষ্টা। একবারও কি ভেবে দেখেছি আমরা যার দিকে মুখ করে আছি আমাদের পক্ষে কোন দিনও কি সেটা হওয়া সম্ভব। যদি সম্ভব না হয় তাহলে কি লাভ আকাশের চাঁদকে ক্ষুধার রুটি ভেবে। তার চেয়ে বরং আমরা আমাদের বিধানে সমাধান খুঁজতে পারতাম। সেটা আমাদের জন্য একটা পরিচয় হতে পারত। এর নাম পাগলামী।
আমাদের সাহিত্যেরও সেই একই অবস্থা। নব্য আধুনিকতা দ্বারা আচ্ছন্ন অসংলগ্নতায় ভরা একটা সাহিত্য ভান্ডার তৈরি হচ্ছে দিনে দিনে। এটা একটা জাতীয় বোঝা ছাড়া আর কিছু নয়। এর মধ্যে না ধর্মীয় বিষয় আশয় আছে। না দুনিয়াবী কোনো প্রয়োজনের জরুরী কোন তথ্য ও তত্ত্ব আছে। আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানের কোন শাখাকেই সমৃদ্ধ করতে পারিনি। অথচ জাতীয় লক্ষ স্থির হওয়া উচিত ছিলো কারা কোথায় অবদান রাখবে। পৃথিবী এখন আমাদের ফেলে অনেক দূর চলে গেছে। সৃষ্টিকর্তাও একপাশে ঠেলে রেখেছেন আমাদের। কারনও আছে। আমরা না তাকে শুনেছি। না তার সৃষ্টির আপাতঃ দৃশ্যমান ব্যকরণ অনুসরন করেছি। কোনো জাতির মধ্যে যদি ন্যায়বিচার, সত্য এবং আমানতদারী থাকে পৃথিবীর বুকে সে জাতি মান মর্যাদার অধিকারী হবে তা সে যে ধর্মীয় বিশ্বাসেরই অধিকারী হোক না কেন। এটা সৃষ্টির নিয়ম। সৃষ্টি জগত একটা নিয়ম মেনে চলে। আমরা সেটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি।
স্বাধীনতার পর জাতি হিসেবে আমাদের প্রথম প্রয়োজন ছিলো একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা যে আমাদের জাতীয় লক্ষ্য কি হবে। মূলতঃ আমাদের লক্ষ্য কি হবে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ কোন গ্রহণ যোগ্য মূলনীতিতে সামনে আগাবে। এসবের কিছুই হলো না। এক একজন এক এক ধরনের দর্শন চালু করতে চেষ্টা করলেন। কেউ বুঝে। কেউ না বুঝে। ভিত্তিহীন এই ভুয়া দার্শনিক মতবাদ দ্বারা কোন রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে না। হয় তাকে পার্থিব কোন মতবাদ আঁকড়ে ধরতে হবে। সেটাও একটা পদ্ধতি। আর না হয় তাকে তাকওয়ার ভিত্তিতে সমাধান খুঁজতে হবে। দুটোর সংমিশ্রনে সবার মনোরঞ্জনকারী দর্শন কি কোন ভাল ফলাফল দিতে পারবে। বসনিয়ার জাতির জনক আলিয়া ইজেতবেগোভিচ ইসলামী ডিক্লারেশন রচনা করেছিলেন। অতঃপর স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। জাতির জন্য দিক নির্দেশনা ছিলো। তারা জানতো এটা মুসলিম দেশ। এর লক্ষ্য সেই মর্মে নির্দেশিত। কিন্তু আমরা আগালাম ছয় দফার ভিত্তিতে। যার মূল লক্ষ্য স্বায়ত্বশাসন। স্বাধীনতার কথাটা আসলো অনেক পরে। কোনো মেনিফেস্টো ছাড়াই। সমাজ আজও তার ক্ষতি পূরণ দিচ্ছে। মুলমানদের জন্য আলাদা কোন বিধান নেই। তাকে একটা পথ ধরেই হাঁটতে হবে। কোরআন ও সুন্নাহ্র পথ। আমরা বেপথে হাঁটতে শুরু করলাম। শয়তান আমাদের শিক্ষক হয়ে গেলো। অর্থহীন সব মতবাদ চাপিয়ে দিতে লাগলো। না তাতে দুনিয়ার কল্যাণ হলো। পরকাল তো দূরের কথা। একটার পর একটা গজব এসে আমাদের উপর আপতিত হলো। যে জাতি ধর্ম থেকে দূরে সরে যায় তার উপর গজব হিসেবে জালিম শাসক চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের অবস্থাও সেরকমই হলো। একটা অসুস্থ সমাজব্যবস্থা থেকে যারা নির্বাচিত হবে তারাও অসুস্থ হবে। এটাই স্বাভাবিক।
একদল স্বাধীনতা চাইল। তাও অন্যের দেওয়া গাইড লাইনে। একদল বিরোধীতা করল। তাও অন্যের দেওয়া গাইড লাইনে। নিজস্ব বিবেক, দুনিয়াবী দর্শন, কিংবা ধর্মীয় বিধান কোনোটাই কার্যকর করার ভাবনা মাথায় ছিলো না। ভুলে ভুলে আমার স্বদেশ আজ যাবতীয় দুবৃত্তের হাতে। দূর্ঘটনা আজ তাই প্রতিদিনের সাক্ষী। সভ্যতাকে পেছনে ফেলে সবাই বিকৃতির দিকে হাঁটছে। একদল নব্য আধুনিকতাবাদী পথ দেখানোর চেষ্টা করছে। ধর্ম কিংবা পার্থিব এই উভয় সম্প্রদায়ই তাদের খেয়াল দ্বারা পরিচালিত। তারা মনে করে তারা সব জানে। মূলতঃ তারা কিছুই জানে না।
ষাটের দশকের পর আমাদের সমাজ থেকে শিক্ষা নির্ভর সংস্কৃতি নির্বাসিত হয়েছে। এর পর যা কিছু হয়েছে তা শুধুই অর্থহীন। এসব আজে বাজে কথা যারা লিখছে তারা কোনো মত কিংবা পথের নয়। ধর্মের প্রাথমিক দিকগুলোতে যারা শিক্ষা পেতে ব্যর্থ হয়েছে তারাই সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। তা সে ভুল ধর্ম ফলোয়ারই হোক অথবা তার প্রতিবাদকারীই হোক।
মাওলানা ভাসানী জানিয়ে দিয়েছিলেন আমি কোন কালেই সমাজতšী¿ ছিলাম না। অথচ সমাজতন্ত্রীরা তাকে তাদের ভাগে নিয়ে নিলো। ইসলাম আর সমাজতন্ত্রের কি একসাথে পথচলা সম্ভব। দুটো ভিন্ন বিধান। একটা আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন। পনেরশ বছর ধরে বিরাজমান। পরিমিত আর পরিশুদ্ধ। একটা মাত্র নব্বই বছরেই উধাও। আমরা এদের উভয়ের একটা মিশেল তৈরি করতে চেষ্টা করলাম। এটা কখনওই সম্ভব নয়। হয় আমাদের দুনিয়াবী হতে হবে। নয়তো পারলৌকিক। দুটোর বিধান আলাদা। সিদ্ধান্ত যার যার।
সময় নামক বস্তু পৃথিবীতে অপরিমেয় নয়। তাকে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। কোন প্রকার বিকৃতিই গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্মের নামে মানুষকে আক্রমন কিংবা আধুনিকতার নামে বিকৃত সংস্কৃতির দিকে ছোটা দুটোই উগ্রপন্থা। সংসারে, সমাজে, রাষ্ট্রে সর্বত্র ভাববার অবকাশ আছে কি হওয়া উচিত লক্ষ্যমাত্রা। কি হওয়া উচিত গ্রহণযোগ্য বিধান। আমার মনে হয় সেই সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি।
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে আমাদের তরুন প্রজন্ম। এরা আজ একেবারেই দিক নির্দেশনাহীন। পারিবারিক জীবনের অশান্তির শিকার এই সমাজ কোমল আর অসহায় হরিন শাবকের মতো হিং¯্র বাঘ বা সিংহের খপ্পরে পড়ে যাচ্ছে সত্যচ্যুত হওয়ার কারনে। ধাপ্পাবাজ ধর্ম ব্যবসায়ী কিংবা নব্য আধুনিকতাবাদীরা অনায়াসে তাদের খপ্পরে নিয়ে নিচ্ছে। সব মিলিয়ে তারা আজ দিশেহারা। তাদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা উচিত ছিলো। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির চার দেওয়ালের ভেতরে আটকা পড়ে তারা যে কোথায় যাচ্ছে তা তারা নিজেরাও জানে না। তাদেরকে রক্ষা করার এখনই সময়।
সবচেয়ে বড় যেটা সমস্যা তা হলো আন্তর্জাতিক গুরুদের দেওয়া প্রেসক্রিপশন। সেই প্রেসক্রিপশনকে তাবিজ বানিয়ে খেতে খেতে আমরা আজ দিশেহারা, বিভ্রান্ত। আমাদের দ্বীন, দুনিয়া সবই যাওয়ার জোগাড়। তাদের চোখ রাঙ্গানি আর ভয় রন্ধ্রে রন্ধ্রে কুড়ে কুড়ে খায়। মুখে স্বীকার না করলেও আমরা আমাদের গুরুদের ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস আমাদের নেই। আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর মতো নৈতিক সাহস আমরা হারিয়ে ফেলেছি। জাতি হিসাবে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সংকট। আমরা কখনও আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারি না।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

UCPDC - 600 Bangla

ইউসিপিডিসি-৬০০ ধারা-১ঃ ইউসিপিডিসি-এর প্রয়োগঃ ইউসিপিডিসি এর ২০০৭ সালের সংশোধনী আইসিসি পাবলিকেশন ৬০০ এর বিধি বা ধারাসমূহ (স্ট্যাণ্ড বাই লেটার অব ক্রেডিট সহ) সকল এলসিতে প্রয়োগ হবে। এলসিতে নির্দিষ্ট কোন স্থানে উল্লেখ না করলে তা সকল পক্ষের উপরই কার্যকর হবে। ধারা-২ঃ সংজ্ঞা ঃ অন্য কোন অর্থে ব্যবহার না করলে এই বিধিতে এ্যাডাভাইজিং ব্যাংক বলতে সেই ব্যাংককে বোঝাবে যে ইস্যুইং ব্যাংক এর অনুরোধে ঋণপত্র সুবিধা প্রদান করে। গ্রাহক বলতে সেই পক্ষকে বোঝাবে যার অনুরোধে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়। ব্যাংকিং কর্ম দিবস বলতে সেই দিনকেই বুঝাবে যেদিন ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট স্থানে উক্ত বিধি অনুযায়ী নিয়মিতভাবে তার প্রত্যাহিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। বেনিফিসিয়ারী বলতে সেই পক্ষকে বুঝাবে যার পক্ষে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। কমপ্লাইং প্রেজেণ্টেশন বলতে সেই প্রেজেণ্টেশনকে বুঝাবে যা ঋণের সকল শর্তানুযায়ী করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আদর্শ ব্যাংকিং চর্চার আওতাধীন। কনফার্মেশন বলতে কনফার্মিং ব্যাংক এর পাশাপাশি ইস্যুইং ব্যাংক কর্তৃক সুনির্দিষ্টভাবে একটি কমপ্লাইং প্রেজেণ্টেশনকে অনুমোদন ঝুঝায়। কনফার্মিং ব্যাংক বলতে সেই ব্যাংককে ঝুঝা

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে