Skip to main content

Fabricare receipt 01 08 2024

অস্থির সময়ের গল্প

একটা অজানা শংকা সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। না জানি কখন কি হয়। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আগেও দোয়া পড়ে বের হতাম। আয়াতুল কুরসি এবং অন্যান্য দোয়া পড়ে বুকের উপর তিন ফুক। তারপর সুবহানাল্লাহ্ বলতে বলতে সিড়ি থেকে নিচে নামা। এর সাথে বর্তমানে যা যুক্ত হয়েছে তা হলো দরোজার কাছে দাঁড়িয়ে এই একই দোয়া দরূদ স্ত্রী এবং দুই কন্যা সহ চার জনে পড়ে অতঃপর সবাই সবার বুকে ফুক দিয়ে বাইরে বের হওয়া। ব্যাপারটা আগে স্বাভাবিক ভাবেই করতাম। ইদানিং এটা করার সময় গলা বুক শুকিয়ে আসে। কারণ আর কিছু নয়। একবার বাইরে বের হলে ঘরে ফিরব তো?
হঠাৎ করে এই ভাবনা কেন পেয়ে বসল। তার কারণ কারোরই অজানা নয়। এটা অদৃশ্য ভীতি আর শংকার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। মুখ ফুটে কিছু বলি আর না বলি এটাই সত্য। যদিও এ পর্যন্ত কোনো কিছুই মহামারীর আকার ধারন করেনি। তবুও শান্তির সময়ে সামান্য অশান্তিও অনেক বেশী আতংক সৃষ্টি করে। একটা যুদ্ধ কালীন পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই ঘটবে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে সেরকম কোন সময় এখনও আসেনি। তবুও খেলা জমে উঠেছে। ভীতির খেলা। যারা মাঠে নেমে পড়েছে তারা অদৃশ্য। সবাই যার যার মতো বলে। আসলে আমার মনে হয় লোকগুলো এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
ব্যাপরটাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কিছু একটা অদৃশ্য ছায়ার মতো অনুসরণ করছে আমাদের। সেটা যে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিগত দিনের ঘটনা প্রবাহ তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে। সামান্য পটকার বিস্ফোরণ দিয়ে শুরু হয়েছিল। এখন রাতারাতি বোমায় পৌঁছে গেছে। ঘটনার গতি যে পাশ্চাদমুখী নয় তা স্পষ্ট। আর কেউ না বললেও আমি বলছি। আমরা সুস্পস্ট আতংকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
আসলে কোথায় যাচ্ছি আমরা। একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। ঘটনার সুরতহালও হচ্ছে। সিদ্ধান্তও আসছে। সেই সিদ্ধান্ত কতোটা সঠিক তাও বোঝা যাচ্ছে না। ব্রিটিশ উপপ্রধান মন্ত্রী এতোদিন পর বলছেন, ইরাক আক্রমন সঠিক ছিলো না। এমনকি আক্রমন পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলোও ভুল ছিলো। ইরাকের আভ্যন্তরীণ সমস্যা এখন পৃথিবীব্যাপী মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষগুলো দিনে দিনে দানব হয়ে উঠেছে। এই কিছুদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে এর সামান্য আঁচ মাত্র লেগেছিল। এখন মনে হচ্ছে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। লক্ষণ মোটেও ভালো ঠেকছে না। ইতোমধ্যে আর যাই হোক লোক জনের সুস্থ্য স্বাভাবিক চিন্তার গতিধারা ব্যাহত করার কাজটি সাথর্কভাবেই হয়ে গেছে।একটা জাতিকে পরাজিত করতে হলে এটা হলো প্রথম ধাপ। তার ভাবনাকে এলোমেলো করে দেওয়া। আমরা সম্ভবতঃ প্রথম ধাপটিতে পা রেখেছি। এভাবেই হয়ত উপরে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর শূন্য থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে। এমনটাই মনে হচ্ছে।
আধুনিক পৃথিবীর প্রথম বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল ফ্রান্সে। ফরাসী বিল্পব নামেই যার পরিচিত। সেই বিপ্লবের রাস্তা ধরে সম্পুর্ণ ভিন্ন কায়দায় রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্যে একই ছিলো। পরিবর্তন। পরিবর্তন ঠিকই হয়েছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই পরিবর্তন সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনেনি। আফ্রিকার বিরাট সংখ্যক মুক্তিপ্রাপ্ত রাষ্ট্র আজও অভিভাবকহীন হয়ে দুর্ভিক্ষের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। স্বাধীনতা তাদের জন্যে পরাধীনতার চেয়েও জঘন্য আর্থ সামাজিক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তারা এক অন্তহীন অনিশ্চিত গন্তব্যে হাতড়ে বেড়াচ্ছে। সত্যিই দুঃখজনক। পরিবর্তন সব সময় মঙ্গলজনক নয়। অভিভাবকহীন সময় কল্যাণকর নয়। তাই বলে স্বাধীনতাকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। মূলতঃ অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই মূল্যবান।
বাংলাদেশের জন্ম বিশ্ব রাজনীতিতে কিছুটা হলেও নাড়া দিয়েছিল। প্রভাবশালী না হলেও জাতি রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান বিশ্বের দরবারে গরুত্বপূর্ণ ছিলো। তার হাত থেকে বেরিয়ে আসা বিশ্ব রাজনীতিকে কিছুটা হলেও নাড়া দিয়েছিলো। পরবর্তীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহ আরও জটিল আকার ধারন করে। ইতোমধ্যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়ে গেছে। সবার নজর সেদিকেই ছিলো।
কিন্তু সব কিছু একসময় থিতু হয়ে আসে। মানুষ আবার নষ্টালজিয়ায় ফিরে আসে। স্বাধীনতার পয়তাল্লিশ বছর পর বাংলাদেশ প্রসঙ্গ কারো কারো কাছে নষ্টালজিয়া হয়ে ফিরে আসছে। সেই সাথে সাথে যুক্ত হয়েছে সর্বশেষ বৈশ্বিক পরিস্থিতি। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন বর্তমানের গেম। আফগানিস্থান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ার পর বাংলাদেশ। একটা কোন প্রসঙ্গ সব সময় হাতে থাকা চাই। বৈশ্বিক রাজনীতির চাকা বুঝি এভাবেই ঘোরে।
সর্বশেষ হামলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার বা লক্ষ্যবস্থু এর টার্গেট নয়। তাহলে সরাসরি সরকারকেই আক্রমন করা হতো। আক্রমনের ধরনে বৈশ্বিক রাজনীতির ছাপ। তবে বোঝা যাচ্ছে না। হয়ত দৃষ্টি আকর্ষনের পাশাপাশি দৃষ্টিকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টাও থাকতে পারে। মূল লক্ষ্যমাত্রায় হয়তো ধীরে ধীরে আগানো হবে। শোলাকিয়া হামলায় কিন্তু তারই ইঙ্গিত।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশ অনেক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। কিন্তুু এসবই ছিলো সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশটিতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাওয়া না পাওয়ার তাড়না থেকে। সেই খেলাও বাঁকে বাঁকে মোড় নিয়েছে। তাতে শুধু পক্ষ বিপক্ষ রূপে অংশগ্রহন করেছে। কিন্তু বর্তমানে যা হচ্ছে তাতে পক্ষ বিপক্ষ বোঝা গেলেও তাদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। কারা আক্রমনকারী তা যেমন অস্পষ্ট কারা যে আক্রান্ত হবে তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। নিরীহ পথচারী গৃহবধু এমনকি গরু, ছাগলও এই হামলা থেকে নিরাপদ নয়। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আপনি নিজেকে হঠাৎ একটা যুদ্ধক্ষেত্রের ভেতরে আবিস্কার করতে পারেন।
অতীতের সাথে আমাদের বর্তমান অবস্থার পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগে আমাদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো দুর্বল হলেও সবমিলিয়ে পুরো শরীরটা শক্তিশালী ছিলো। বর্তমানে অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো শক্তিশালী হলেও পুরো শরীরটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আমরা দৃশ্যমান উন্নতি লাভ করলেও নীতি-নৈতিকতার দিক দিয়ে মোটামুটি তলানীতে এসে পৌঁছেছি। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নতুন কিছু নয়।

Comments

Popular posts from this blog

মিথ-পুরাণ ও বিষ্ণু দে-র কবিতা / সৈয়দ কওসর জামাল

মিথ কী ও কেন মিথ বিষয়টিকে জানা ও বোঝার জন্য বিগত শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, এমনকি সাহিত্য সাহিত্য সমালোচকের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। অজ¯্র গ্রন্ত এ বিষয়ে রচিত হয়েছে। বিচিত্র এসবের বিষয়, বিচিত্র এইসব গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষিতে মিথের কোনো  সৃনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ দুরুহ। কোনো পক্ষ থেকে নৃতত্বের পাঠকদের জানানো হয়েছে যে প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যে তারা যে মিথের ব্যবহার দেখে থাকেন, তা আসলে মিথ-ই নয়। কেননা তাদের কোনো ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক সংযোগ নেই। কেউ আবার আধুনিক লেখদের ‘মিথোম্যানিয়া’ সম্পর্কেও পাঠকদের সতর্ক করেছেন, কারণ এ হল ইতিহাস থেকে প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদপসারণ। এ সব সত্ত্বেও সাহিত্য মিথের ব্যবহার সক্রিয় আর বুদ্ধিবৃত্তি বা নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা মিথের আছে। বরং নৃতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান মিথ সম্পর্কে আমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ সম্পর্কে ব্যাখ্যাও জটিল হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখার গবেষকরাই তাদের নিজস্ব তত্ত্বের আলোকে মিথকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। এখানে আমাদের বলার কথা এই যে মানবসমাজের গোড়ায় আদিম ধর্মীয় স্তর থেকে অবচেতন  মনের আধুনিক অ

ইতিহাসের কবি, কবির ইতিহাস : জীবনানন্দ দাশ / সৈয়দ কওসর জামাল

What thou lov`st is thy true heritage! উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা যা কিছু পাই, তার মধ্যেকার ভালোটুকু এবং ইতিহাসের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে এজরা পাউন্ডের এই পংক্তিটি প্রবাদ হয়ে আছে। এই হেরিটেজ-এর প্রতি মমত্ব যেমন সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত, কবিও তেমনি এখানে খুঁজে পান তাঁর ইতিহাসচেতনার আধারটিকে। হেরিটেজ যেমন ইতিহাস হয়ে ওঠে, এই ইতিহাসও তেমনি কবিতার হেরিটেজ হয়ে যায়। ইতিহাস বিচ্ছুরিত আলো কবির মুখে পড়ে, আর কবিতাও সেই আলোর স্পর্শ পায়।     ইতিহাসে আছে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনের এক ব্যাপক বিস্তার। এই বিস্তারের দিকে কবিকেও চোখ রাখতে হয়। তবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের জন্য নয়, ইতিহাসের ভিতরের সারসত্যটুকু ও ইতিহাসের মর্মকথাটিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির অলোকে খুঁজে নেওয়ার জন্য। কবির চেতনার আলোকে ইতিহাসের দুএকটি মর্মকথা বা সত্যসূত্র শুধু উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একেই আমরা কবির ইতিহাসচেতনার বলি, যা বহুস্তরীয়, আর তাকে প্রকাশিত হতে দেখি কবিতায় কতো বিচিত্র ভঙ্গিতে। কাব্যপ্রক্রিয়ার এই চেতনা অতি সূক্ষ্মভাবে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে দেয়। অন্য সে কবিতা ইতিহাস নয় ইতিহাসের সারমর্মটুকু বুকে ধরে রাখে। ইতিহাসপাঠে

NAZRUL ISLAM MAZUMDER : THE CHOICE OF THE TIME (a biography)

NAZRUL ISLAM MAZUMDER The choice of the time “The purpose of a business is to create a customer who creates customers.” -          Shiv Shing # NASSA GROUP # 30,000 employees #EXIM Bank # 3,000 employees And so on……….. A Biography By OMAR KHALED RUMI M. Sc., MBA, LL.B     ...................................................... “Patience, persistence and perspiration make an unbeatable combination for success.”    - Napoleon Hill   ...................................................... Prlogue Like another man Nazrul Islam Mazunder is also a man. But, how he has made some stories of success. Why people consider him as a special. Why he is applaused as Philanthropic in mind, dynamic in thinking, far-sighted in vision. There must some reasons. The reason is what he wanted himself he has been now. Mazumder, a conglomerate icon, in no way, a trifle name. His success, over years, mak