Skip to main content

Posts

Showing posts from June, 2018

Fabricare receipt 01 08 2024

প্রিয়তমাসু / তারাপদ রায়

অনেকদিন পর কাগজ-কলম নিয়ে বসে প্রথম একটা চাঁদের ছবি আঁকি, সঙ্গে কিছু মেঘ। তারপর যথেষ্ট হয়নি ভেবে গোটা তিনেক পাখি, ক্রমশ একটা দেবদারু ও কয়েকটা কলাগাছ, অবশেষে অনেকগুলি ছানাসহ একটা বেড়াল, এইসব এঁকে এঁকে তবুও কাগজের নীচে চার আঙুল জায়গা বাকি থাকে : সেখানে প্রথমে লিখি, শ্রীচরণেষু তার নীচে সবিনয় নিবেদন। এবং কিছুক্ষণ পরে সবিনয় নিবেদন কেটে লিখি প্রিয়তমাসু। এবং একটু পরেই বুঝতে পারি জীবনে এই প্রথম, প্রথমবার প্রিয়তমাসু লিখলাম। প্রিয়তমাসু, তুমি তো জানো না জীবনে তোমাকে কোনোদিন ঠিকমতো সম্বোধন করা হলো না। প্রিয়তমাসু, তুমি তো জানো না জীবনে তোমাকে কোনোদিন ঠিকমতো সম্বোধন করা হলো না শুধু হিজিবিজি ছবি, চাঁদ, মেঘ, বেড়ালছানা সবিনয় নিবেদন কাটাকুটি করে চিরদিন তোমার কাছে পৌঁছোনো।

ঈশ্বরের কাছে থেকে ফুল হয়ে উৎসবে এসেছো / কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্য

ঈশ্বরের কাছে থেকে ফুল হয়ে উৎসবে এসেছো, উল্কার ওড়ানো রাত্রি সমস্ত ধারণা শেষ করে আমার সর্বস্ব নিয়ে যন্ত্রণাকে জাগিয়ে ফিরেছে, তোমার পালকে শুধু গার্হস্থ্যের দীর্ঘায়ু অর্চনা কেবল ঘূর্ণির টানে ডালপালা উড়িয়ে আবার স্বস্থানে আলোকরাত্রি যাপন করেছি স্মৃতিময় এত কথা জেগেছিলো, এত লোকবৃত্ত ছিলো শেষে পুরোনো কথার নীচে অগ্নিমালা উদাসীন হোলো। ভেবেছি তোমার কাছে রিক্ত পাত্রে শব্দ হয়ে যাবো ধাতব ঝংকার তুলে চলে যাবো দক্ষিণে উত্তরে বেশিদিন থাকবো না অতিথির কোমলতা নিয়ে ফুরাবে যখন আয়ু ঘুণাক্ষর বসতি বানাবো ঈশ্বরের কাছ থেকে ঘুম নিয়ে আমাতে এসেছো শুধুই রাত্রির নীচে খেলনাগুলি কুড়িয়ে বেড়াবো।

জলদোষ / মল্লিকা সেনগুপ্ত

‘তোমার শরীরে ছিল জলদোষ’- নারী বললেন ‘তাই আমি অন্ধকারে ছেড়ে গেছি তোমার বিছানা’ বিট-গাজরের দেশে তোলপাড় উঠল তখন লাল দুটি বিট আরও লাল হয়ে ওঠে অভিমানে ‘ঠিক একদিন আমি নেমে যাব মাটির গভীরে ‘রাত-বিছানার দিব্যি’- মনে মনে ভাবল গাজর উত্তর দিল না মুখে কোনও। স্ত্রী তখন হাঁটু-গেঁড়ে অন্ধবিশ্বাসের কাছে স্বামীটির আরোগ্য চাইছে।

দুঃখ পরেছে দীর্ঘ পাঞ্জাবি / রবিশঙ্কর মৈত্রী

দুঃখ পরেছে দীর্ঘ পাঞ্জাবি গভীর পকেটে তার এক সিকি সুখ। দুঃখ পরেছে হলুদ গাঁদা, দুপায়ে তার নুপুর দড়ি বাঁকা উঠোনে শৃঙ্গারনাচ বেহুলা অচেনা শিখন্ডিসাজে। দুঃখ দাঁড়ায় জনতার মঞ্চে সুখের প্রতিনিধি সে প্রতিশ্রুতিসুখে জনতা বিভোর সুখরাজ আটক ঘোড়ার আড়াইঘেরে। দুঃখ পরেছে কচ্ছপবর্ম ওষ্ঠেমাখা পিঁপড়ের সুখ সুখ সলজ্জ হেসে ফিরে যায় দুঃখ দীর্ঘায়ু পায় পাঞ্জাবিঘুমে।

কেউ কথা রাখেনি / সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কেউ কথা রাখেনি / সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটালো, কেউ কথা রাখেনি ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল         শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে তারপর কত চন্দ্রভুক অমাবস্যা এসে চলে গেল কিন্তু সেই বোষ্টুমী                     আর এলো না         পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি। মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলি বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর         তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো         সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর                 খেলা করে! নাদের আলি, আমি আর কত বড় হবো ? আমার মাথা এই ঘরের ছাদ     ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়         তিনপ্রঞরের বিল দেখাবে ? একটা রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্কর’ বাড়ির ছেলেরা ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি         ভিতরে রাস-উৎসব আবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ-পরা ফর্সা রমনীর।         কত রকম আমোদে হেসেছে         আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি! বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন আমরাও... বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই সেই রয়্যাল গুলি, সেই লা

রাষ্ট্র ভাষা সত্যি-সত্যি বাংলাই চাই / আসাদ চৌধুরী

বৃষ্টিও বিরহী বর্ণমালা হ’য়ে যায় ভাটিয়ালি সায় দিয়েছিল। মফস্বল শহরে ক্রমে ক্রমে পেট্রলের চাহিদা বেড়ে যায়। বৃটানিয়া হলে রোগা, দীর্ঘদেহী আবদুল লতিফ কবিতাকে সুর করে গেয়ে শহর কাঁদায়। তারও আগে, বেশ আগে ভ্রাতৃরক্তে রঞ্জিত হাতে তেরঙা ব্রিটিশ পতাকা ধীরে ধীরে নেমে যায়। গ্রামগুলো ঢুকে পড়ে শহরের পেটের ভিতর, কলমী, ঢেঁকি শাকের পাশে দেখা যায় নাবিস্কো ব্রেড। কানন দেবী আর জগন্ময় মিত্ররা চোখ কান মুগ্ধ করেছিল- তবু বর্ণমালার কি তেজ রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই... বাঁচার, ভাষার দাবি এক হয়ে মিশে যেতে থাকে। বুড়িগঙ্গা দিয়ে মেলা পানি চ’লে গেছে দুর্গন্ধে দূষিত জল ঢাকার বাতাস এখনো প্রণের সেই পুরাতন দাবি রাষ্ট্রভাষা বাংলাই চাই... বৃষ্টি, ভাটিয়ালি শহরে ও গ্রামে সবখানে-এই শ্যামল বাংলায়।